বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মৌলভীবাজারে আনারসের পাতা থেকে ‘উন্নত’ সুতার সম্ভাবনা

  •    
  • ৭ মে, ২০২২ ১৩:৩৭

স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা জানান, গত মার্চ মাসে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উপপরিচালক (উপসচিব) কৃষিবিদ ড. রাজু আহমদ শ্রীমঙ্গল থেকে আনারস পাতা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে তা সুতা তৈরির জন্য উপযোগী হিসেবে পান। ইতোমধ্যে তারা একটি প্রজেক্ট নিয়ে মধুপুরে কাজ করছেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আনারস বাগানের পরিত্যক্ত পাতা থেকে উন্নতমানের সুতা তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কয়েকটি আনারস বাগান পরিদর্শন ও ঢাকায় নিয়ে পাতা পরীক্ষা করে এমন প্রমাণ পেয়েছে ‘অ্যাগ্রো ভিশন লিমিটেড’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা।

এরই মধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারাসের পাতা সুতা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘এরই মধ্যে সম্ভাবনা মিলেছে। উৎপাদিত সুতার মান অন্য সুতার চেয়ে তুলনামূলক অনেক ভালো। যদি পুরোপুরি প্রসেস বাংলাদেশে করা যায়, তাহলে এ থেকে সরকার প্রচুর রাজস্ব পাবে। পাশাপাশি এই জেলায় কারখানা হলে বেকারত্ব দূর হবে, চাষিরাও বাড়তি আয় করতে পারবেন।’

অ্যাগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান রাজীব দেব বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলায় প্রচুর আনারস চাষ হয়। আনারসের নিয়ম হলো গাছ থেকে আনারস কাটার পর ওই গাছে নতুন করে ফল আসে না। ওই অংশের অধিকাংশ পাতা কেটে ফেলতে হয়।

‘একবার আনারস ধরার পর কেটে ফেলা ডগা বা পাতা থেকেই এখন তৈরি হবে সুতা। পরীক্ষায় এমনই প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

অ্যাগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান জানান, তিনি জাপানি কনসালট্যান্ট নিয়ে শ্রীমঙ্গলে আসেন। এখানকার বিভিন্ন আনারস বাগান পরিদর্শন করেন। একাধিক আনারস বাগান মালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তিনি আশাবাদী, এই এলাকার আনারস বাগানকে কেন্দ্র করে সুতা তৈরির কারখানা করতে পারবেন।

অ্যাগ্রো ভিশনের জাপানি কনসালট্যান্ট টিমের প্রধান ওয়াদা সুহি নিশ্চিত করেছেন, আনারসের পাতা দিয়ে নরমাল নয়, উন্নতমানের সুতা হবে।

তারা শ্রীমঙ্গলের আনারস উৎপাদনকারী কাজী সামছুল হক ও জলিল খানের মাধ্যমে প্রায় ৫০ কেজি আনারসের পাতা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে যান।

আনারস পর্যবেক্ষণ করছেন জাপানি কনসালট্যান্ট ওয়াদা সুহি। ছবি: নিউজবাংলা

জাপানি কনসালট্যান্ট ওয়াদা সুহি বলেন, ‘ঢাকায় পাতা এনে প্রাথমিক পরীক্ষায় ভালো ফাইভার পাওয়া গেছে। আনারসের সুতা খুবই নরম। এর থেকে তৈরি কাপড় আরামদায়ক।’

আনারস চাষি কাজী সামছুল হক বলেন, ‘একটি গাছে একবারই ফল ধরে। একটি পরিপূর্ণ আনারস গাছে ৩৬টার মতো পাতা হয়। নতুন করে ওই গাছের গোড়ায় ডেম হয় (নতুন গাছ জন্মায়)।

‘আনারস কাটার পর ওই গাছের অন্তত ১৫ থেকে ২০টি পাতা কেটে ফেলা হয়। আর ডেম থেকে নতুন গাছ হওয়ার পর পুরোটাই কাটা যায়। এই পাতাগুলো নিচে পড়ে নষ্ট হয়। মাটিতেই পচে মিশে যায়। কেউ কেউ গবাদি পশুর জন্যও নিয়ে যান।’

স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা জানান, গত মার্চ মাসে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উপপরিচালক (উপসচিব) কৃষিবিদ ড. রাজু আহমদ শ্রীমঙ্গল থেকে আনারস পাতা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে তা সুতা তৈরির জন্য উপযোগী হিসেবে পান। ইতোমধ্যে তারা একটি প্রজেক্ট নিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরে কাজ করছেন।

শ্রীমঙ্গলে ৪০৯ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়। যদি অ্যাগ্রো ভিশন শ্রীমঙ্গলে সুতার তৈরির কারখানা করে, তাহলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন তারা করবেন। কারণ এখানে আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরি হলে এলাকার কৃষকেরই উপকার হবে।

আনারস পাতা। ছবি: নিউজবাংলা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ১ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৮০০ টন।

এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৫০০ কৃষক। যদি এখানে অ্যাগ্রো ভিশন বা অন্য কেউ আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নেন তাহলে এই কৃষকরা অতিরিক্ত কিছু আয়ের সুযোগ পাবেন। এতে উৎসাহিত হয়ে এ এলাকায় আনারসের চাষাবাদও বাড়বে।

এ বিভাগের আরো খবর