বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সঙ্গীরা একদম বোরিং, কেন?

  •    
  • ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৫৫

সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ভাইনান্ড ফন টিলবার্গ দেখিয়েছেন, যেসব মানুষকে একঘেয়ে বলে মনে করা হয় তারা হয় খুব বেশি বা খুব কম কথা বলেন। টিলবার্গ বলেন, ‘উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যার সঙ্গে কথা বলছেন তার জায়গায় নিজেকে রাখুন ও নিশ্চিত করুন তারাও এ আলাপচারিতা উপভোগ করছেন।’

দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই অনেকের অভিযোগ, একদম ‘বোরড’ হয়ে গেলাম। জীবনসঙ্গী বা বন্ধুদের সাহচর্যও বোরিং বলে মনে হয়। কেন এমনটা হয়? কোনো ব্যক্তি বা পরিস্থিতি কীভাবে একঘেয়ে পরিস্থিতি তৈরি করে সেটা নিয়ে গবেষণা করেছেন একদল বিজ্ঞানী। তাদের দাবির ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস। সেটি অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

কোভিড মহামারি ঠেকাতে লকডাউনের সময় ‘বাড়িতে বসে বসে বোর হচ্ছি’ এ কথাটা বহুবার বহুজন উচ্চারণ করেছেন। একঘেয়েমির হাত থেকে রক্ষার উপায়ও খুঁজেছেন অনেকে।

একঘেয়েমি বা বোরড হচ্ছে আগ্রহের অভাব বা কিছু করার নেই ভেবে অসুখী বা অসন্তুষ্টি বোধ করার মতো মানসিক অবস্থা। আমাদের মধ্যে অনেকেই জরুরি কাগজপত্র পূরণ করা, জ্যামে বসে থাকা, সব সময় দেরি করেন এমন কারও জন্য অপেক্ষার মতো প্রাত্যহিক কাজ নিয়ে অবিরাম বিরক্তি প্রকাশ বা ঘ্যানঘ্যান করেন।

এই একঘেয়েমির বিজ্ঞান নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্সের পরীক্ষামূলক সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ভাইনান্ড ফন টিলবার্গ। প্রায় দেড় দশকের গবেষণায় তিনি যা খুঁজে পেয়েছেন তা বেশ মজার।

টিলবার্গ বলেন, ‘স্নাতক পড়ার সময় আমি একঘেয়েমি নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হয়ে উঠি। আমি ও আমার সহকারী এরিক ইগোউ লক্ষ করেছি, মানুষ একঘেয়েমিকে তেমন একটা পাত্তা দেয় না এবং ভাবে এর কোনো পরিণতি নেই। আমরা যখন বইপত্র ঘাঁটার চেষ্টা করলাম, তখন দেখলাম একঘেয়েমির পরিণতি কী তা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।’

ইগোউ ও টিলবার্গ পরীক্ষাভিত্তিক গবেষণার একটি সিরিজ নিয়ে কাজ করেছেন। তারা দেখতে চেয়েছেন, একঘেয়েমি মানুষকে কীভাবে প্রভাবিত করে। তাদের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এমন কিছু কাজ ছিল যা সত্যিই বিরক্তিকর। যেমন, অংশগ্রহণকারীদের বিবলিওগ্রাফি রেফারেন্স (গবেষণাপত্রে উদ্ধৃত রেফারেন্সের বিশদ তালিকা) অন্য একটি নথিতে হুবহু লিখতে বলা হয়েছে, বেশ কিছু অযৌক্তিক পাজল দেয়া হয়েছে যা কখনই সমাধান করা যাবে না অথবা চলমান বৃত্ত আঁকতে বলা হয়েছে।

টিলবার্গ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, একঘেয়েমির একটি নেতিবাচক পরিণতি আছে। একঘেয়েমিতে ভোগা লোক বাইরের মানুষের প্রতি নেতিবাচক হয়ে পড়েন। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সম্বন্ধে ভালো বোধ করেন। এর সঙ্গে আগ্রাসী মনোভাবেরও সংযোগ আছে।

‘আমরা এও দেখেছি একঘেয়েমি শেষ পর্যন্ত কোনো একটি মনস্তাত্ত্বিক উদ্দেশ্যকে আলোড়িত করে এবং মানুষকে নতুন কিছুর অনুসন্ধানে ঠেলে দেয়; যাকে তারা অর্থপূর্ণ বা মূল্যবান হিসেবে মনে করতে পারেন। এটি একটি ইতিবাচক পরিণতিও।’

টিলবার্গ যোগ করেন, গবেষণায় দেখা গেছে একঘেয়েমির অনুভূতি সাধারণত নস্টালজিয়ার অনুভূতির দিকে পরিচালিত করে। মানুষ অতীতের স্মৃতিচারণা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বা আগ্রহ পায়।

একঘেয়ে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাওয়া ব্যক্তির প্রদর্শিত মানসিক প্রতিক্রিয়ার তালিকা সংক্ষিপ্ত করে আনার পর টিলবার্গ বুঝতে পারেন, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্কের ওপর একঘেয়েমির পরিণতি পরীক্ষার মতো যথেষ্ট গবেষণা নেই। সুতরাং তিনি কাউকে বোরিং বলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিত্ব, শখ ও বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করতে শুরু করেন।

‘বোরিং পিপল: স্টিরিওটাইপ ক্যারেক্টারিস্টিকস, ইন্টারপারসনাল অ্যাট্রিবিউশনস অ্যান্ড সোশ্যাল রিয়্যাকশনস’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে টিলবার্গ ও তার দল গভীরভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছেন। কোনো গতানুগতিক কারণে কাউকে বোরিং, একঘেয়ে বা বিরক্তিকর হিসেবে দেখা হয়, সেটি বের করার চেষ্টা করেছেন তারা।

গবেষণাটি বিরক্তিকর মানুষ বা বিরক্তিকর বা একঘেয়ে সম্পর্কে আছেন এমন মানুষের ওপর জোর দিয়েছে।

টিলবার ও তার দল ৫০০ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে পাঁচটি আলাদা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষাগুলোতে জানতে চাওয়া হয় কোন ক্যারিয়ার ও শখগুলোকে তারা বোরিং, একঘেয়ে ও বিরক্তিকর ভাবেন। এরপর জানতে চাওয়া হয় এইসব পেশার সঙ্গে জড়িত লোকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে তারা কীভাবে দেখেন।

অংশগ্রহণকারীরা ডেটা অ্যানালাইসিস, অ্যাকাউন্টিং, ট্যাক্স/ইন্স্যুরেন্স, পরিচ্ছন্নতা ও ব্যাংকিংকে সবচেয়ে বোরিং পাঁচটি পেশা হিসেবে নির্দিষ্ট করেছেন। তারা যে পাঁচটি হবি বা শখকে বোরিং হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো কিছুটা অবাক হওয়ার মতো। এগুলো হলো ঘুমানো, প্রার্থনা করা, টিভি দেখা, পশুপাখি দেখা ও অঙ্ক করা।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, তাদের চোখে যাদের কোনো কিছুতে আগ্রহ নেই, সেন্স অফ হিউমার নেই, কোনো মতামত নেই বা কোনো কিছু নিয়ে বেশি অভিযোগ নেই সেসব ব্যক্তি গতানুগতিকভাবে বোরিং।তবে টিলবার্গ ও তার দলকে গবেষণার যে দিকটি সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা হলো, যাদেরকে গতানুগতিকভাবে বোরিং, একঘেয়ে বা বিরক্তিকর মনে করা হয়েছে তাদেরকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অক্ষম ও শীতল চরিত্রের মানুষ হিসেবেও গণ্য করা হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, গতানুগতিক ধারণায় বোরিং ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া বা ঘোরাফেরার জন্য অর্থ চেয়েছেন অনেকে। এ থেকে বোঝা যায়, বিরক্তিকর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ব্যক্তি সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিণতি নিয়ে আসতে পারেন।

টিলবার্গ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গতানুগতিকভাবে বিরক্তিকর বা একঘেয়ে বলে বিবেচিত ব্যক্তিদের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি তাদের সক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। তবে আবার গতানুগতিকভাবে একঘেয়ে পেশায় জড়িতদের, যেমন অ্যাকাউন্ট্যান্টকে তার পেশার জন্য অত্যন্ত দক্ষ হিসেবে দেখা হয়।’

আরেকটি বিষয় লক্ষ করে টিলবার্গ হতবাক হয়ে গেছেন। সেটি হলো, ধূমপানকে একঘেয়ে বা বিরক্তিকর হিসেবে দেখা হয়েছে। তিনি বলেন, “যখন আমি বড় হয়েছি, তখন এটাকে ‘কুল’ বিষয় হিসেবে প্রচার করা হতো। তবে এখন ততটা নয়।”

টিলবার্গ বলছেন, গবেষণার জন্য মাত্র ৫০০ জনের নমুনা নেয়ার অর্থ হলো এর ফল চূড়ান্ত ও সম্পূর্ণ নয়। অবশ্য কী করলে মানুষকে বোরিং হিসেবে বিবেচিত হবে না সেটি বের করার জন্য এটি বেশ ভালো একটা পদ্ধতি।

তিন বলেন, ‘লোকজন ডেটা বিশ্লেষণ ও গণিতের মতো বিষয়গুলোকে একঘেয়ে বা বিরক্তিকর বলেছেন। তবে তারাই আবার বিজ্ঞানীদের বেশ ইন্টারেস্টিং বলে মনে করেন। অথচ একজন বিজ্ঞানী যা করেন তার একটি বড় অংশ ডেটা বিশ্লেষণ। সুতরাং, একজন ব্যক্তি যেভাবে নিজেকে বর্ণনা করেন এবং তারা যা করেন তা তাদেরকে গতানুগতিকভাবে কম বিরক্তিকর হিসেবে দেখতে সাহায্য করতে পারে।’

টিলবার্গ এও দেখিয়েছেন, যেসব মানুষকে একঘেয়ে বলে মনে করা হয় তারা হয় খুব বেশি বা খুব কম কথা বলেন। তিনি যোগ করেন, ‘উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যার সঙ্গে কথা বলছেন তার জায়গায় নিজেকে রাখুন ও নিশ্চিত করুন তারাও এ আলাপচারিতা উপভোগ করছেন।’

গবেষণায় টিলবার্গ দেখেছেন, পারফর্মিং আর্টস বা সাংবাদিকতার মতো সৃজনশীল পেশায় জড়িত লোকেরা কম একঘেয়ে। তবে এই ধারণাটি পরিবর্তন করার দায়িত্ব শুধু গতানুগতিক ব্যক্তির দায়িত্ব নয় বলেও সতর্ক করছেন তিনি।

টিলবার্গ বলেন, ‘আমি মনে করি যারা আদতে একঘেয়ে ব্যক্তি তাদের ইমেজ সংশোধনের পরামর্শ দেয়া সহজ। তবে মানুষকে সচেতন করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের খোলা মনের হতে হবে এবং অন্যদের বেনিফিট অফ ডাউট দিতে হবে। লোকজন প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে- একঘেয়ে বোধ করা ভালো না খারাপ, তবে শেষ পর্যন্ত আপনাকে একঘেয়েমি মোকাবিলা করতে জানতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর