বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেভাবে বিশ্বকে বদলে দিচ্ছেন ইলন মাস্ক

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৩৬

ভাই কিম্বেলের সঙ্গে মিলে ১৯৯৫ সালে জিপ-টু প্রতিষ্ঠা করেন ইলন মাস্ক। এটিই ছিল মাস্কের নেয়া প্রথম উদ্যোগ। সে সময় তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। বাসা ভাড়া নেয়া সম্ভব না হওয়ায় অফিসেই তাকে ঘুমাতে হতো। কিন্তু যখন ব্যবসাটি দাঁড়িয়ে যায়, তখন কমপ্যাক নামের একটি প্রতিষ্ঠান তা ৩০০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।

একজন ব্যক্তি বদলে দিচ্ছেন বিশ্বকে। তার যেমন নিন্দুক রয়েছে, ভক্তও রয়েছে অগুনতি। যিনি একাই বদলে দিচ্ছেন ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি, শক্তি ও মহাকাশ অভিযানের গতি-প্রকৃতি। তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। যিনি এরই মধ্যে ২৬২ বিলিয়ন ডলারের মালিক। মরগান স্টানলির মতে, তিনিই হতে পারেন মানব ইতিহাসের প্রথম ট্রিলিয়নেয়ার।

মহাকাশ, স্বচালিত গাড়ি প্রযুক্তি, ক্রিপ্টোর পাশাপাশি বেশ কয়েক দিন যাবৎ টুইটার কেনার বিষয়ে আলোচনায় আছেন ইলন মাস্ক। সর্বশেষ ৪৪ বিলিয়ন ডলারেই টুইটারের মালিকানা পাচ্ছেন তিনি।

কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে টুইটার কেনার বিষয়ে ইলন মাস্ক বলেন, টুইটার দিয়ে অর্থ আয়ের কোনো লক্ষ্য তার নেই। কার্যকরী বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি টুইটার কিনতে আগ্রহী। বর্তমান কাঠামোতে টুইটার তা দিতে পারছে না।

অর্থ আয়ের উদ্দেশ্য নেই, এমন বিলিওনিয়ার কী পৃথিবীতে আছে? হ্যাঁ আছে। তিনি ইলন মাস্ক। নিজেকে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেই পরিচয় দিতে চান তিনি। পরিবেশ, মহাকাশ, আসন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সংঘাত নিয়েই যার আগ্রহ।

এরই মধ্যে ইলন মাস্ক স্বচালিত বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা, বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স, শহরের নিচে টানেল নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য বোরিং কোম্পানি, ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রতিষ্ঠান নিউরালিংকের মালিক।

যেভাবে শুরু ইলন মাস্কের

ইলন মাস্কের জন্ম ২৮ জুন, ১৯৭১ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। যখন তার বয়স মাত্র ১২ বছর, সে সময় মহাকাশ যুদ্ধ নিয়ে বানানো কম্পিউটার গেম ‘ব্লাস্টার’ তৈরি করেন। যা আবার তিনি ৫০০ ডলারে বিক্রি করেন। সাটারডে নাইট লাইভ প্রোগ্রামে ইলন মাস্কের মা মে মাস্ক জানান, সে সময় বয়সের কারণে ইলন মাস্কের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব ছিল না। তাই তিনিই সহযোগিতা করেছিলেন, তাকে এই অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে দেশটির বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ এড়াতে তিনি কানাডাতে চলে যান। সেখানে কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে দুই বছর পড়াশোনা করেন। পরে অর্থনীতি ও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে। স্টানফোর্ডে তার পিএইচডি শুরু করার দুই দিনের মাথায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন।

প্রথম প্রতিষ্ঠান গড়া

ভাই কিম্বেলের সঙ্গে মিলে ১৯৯৫ সালে জিপ-টু প্রতিষ্ঠা করেন ইলন মাস্ক। এটিই ছিল মাস্কের নেয়া প্রথম উদ্যোগ। সে সময় মাস্কের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। বাসা ভাড়া নেয়া সম্ভব নয়। তাই অফিসেই তাকে ঘুমাতে হতো। কিন্তু যখন ব্যবসাটি দাঁড়িয়ে যায়, তখন কমপ্যাক নামের একটি প্রতিষ্ঠান তা ৩০০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।

অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেম পেপ্যাল গড়ে তোলা

১৯৯৯ সালে ইলন মাস্ক এক্স.কম নামের একটি অনলাইন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তী সময়ে সিলিকন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট পিটার থয়েলের কনফিনিটির সঙ্গে একীভূত হয়ে পেপ্যাল নাম ধারণ করে যাত্রা শুরু করে। মাস্ক হন পেপ্যালের সিইও। কিন্তু সে দায়িত্বে বেশি দিন তিনি থাকতে পারেননি। মতবিরোধের কারণে ২০০০ সালে মাস্ককে পেপ্যাল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

পেপ্যালের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও মাস্কের শেয়ার ছিল সেখানে। যখন ইবে ২০০২ সালে পেপ্যাল কিনে নেয়, তখন তিনি ১৬৫ মিলিয়ন ডলার পান।

স্পেসএক্সের সবচেয়ে বড় মহাকাশযান স্টারশিপ

স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা

পেপ্যাল থেকে পাওয়া টাকা থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ২০০২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। তার লক্ষ্য ছিল মহাকাশ অভিযানের খরচ দশ ভাগের এক ভাগে নিয়ে আসা।

সে সময় তার শুভাকাঙক্ষীরাও ইলন মাস্ককে এ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। তিনি কারও কথা শোনেননি। কাজ চালিয়ে যান। এখন মহাকাশে সবচেয়ে বেশি রকেট উৎক্ষেপণ করে স্পেসএক্স।

স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের ভবিষ্যৎ হিসেবে তিনি মানব প্রজাতিকে মহাজাগতিক হিসেবে দেখতে চান। তাই তিনি মানুষকে মঙ্গল গ্রহে পাঠাতে চান। নেটফ্লিক্সের এক প্রোগ্রামে তিনি বলেন, স্পেসএক্সের লক্ষ্য মহাকাশের স্বপ্নকে সবার জন্য সহজলভ্য করা। যাতে বিজ্ঞান কল্পকাহিনি আর কল্পকাহিনি না থাকে।

টেসলার মডেল থ্রির গাড়ি

বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান টেসলা ও সোলার সিটি

স্পেসএক্স যখন সফলতার মুখ দেখেনি, এর মধ্যেই ২০০৪ সালে তিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেন বিংশ শতাব্দীর সেরা উদ্ভাবক নিকোলা ট্যেসলার নামানুসারে ‘টেসলা’।

২০০৬ সালে তারা প্রথম ‘রোডস্টার’ নামে একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে নিয়ে আসেন। তিনি ‘সোলার সিটি’ নামের আরেকটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তার এক কাজিনকে দায়িত্ব দেন। পরে এই প্রতিষ্ঠানটিই টেসলা ২.৬ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।

২০০৮ সালে অর্থনৈতিক সংকট চলাকালীন টেসলার কাছে মাত্র ৪০ মিলিয়ন ডলার ছিল। সে সময় স্পেসএক্স ও সোলার সিটিও খুব একটা ভালো করছিল না। সে বছরের ডিসেম্বরেই নাসার থেকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের কন্ট্রাক্ট পায়, বদলে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এ বদলের ছোঁয়া লাগে টেসলাতেও।

৪২ হাজার স্যাটেলাইট দিয়ে বিশ্বকে সংযুক্ত করবে স্টারলিংক

পৃথিবীকে সংযুক্ত করবে স্টারলিংক

স্টারলিংকের সহপ্রতিষ্ঠান স্টারলিংক পৃথিবীর দ্রুত বিকাশমান বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি, যাদের লক্ষ্য পৃথিবীর লো-অরবিটে থাকা স্যাটেলাইট থেকে বিশ্বব্যাপী লো লেটেন্সির ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা। স্টারলিংক তার বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, খুব শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরিতে সক্ষম হবে।

ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযানে দেশটির ইন্টারনেট ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়লে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী মাইখাইলো ফ্রেডরক ইলন মাস্কের কাছে সাহায্য চান। তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউক্রেনের ইন্টারনেট সেবাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে তিনি স্টারলিংক স্যাটেলাইট সক্রিয় করেন।

টানেল তৈরি করে যানজট নিরসন করতে চায় বোরিং কোম্পানি

হাইপারলুপ ও বোরিং কোম্পানি

২০১৩ সালে ইলন মাস্ক দ্রুতগামী ট্রেন হাইপার লুপের আইডিয়া নিয়ে আসেন। যেখানে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সান ফ্রান্সিসকোর দূরত্ব অতিক্রম করা যাবে মাত্র ৩০ মিনিটে। ২০১৬ সালে মাস্কের বোরিং কোম্পানি যাত্রা শুরু করে। মাটির নিচে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল নেটওয়ার্ক তৈরি করাই এর লক্ষ্য।

ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস কোম্পানি নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা

মানব মস্তিষ্কে চিপ বসানোর জন্য ২০১৭ সালে নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা করেন ইলন মাস্ক। এরই মধ্যে মানব দেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাছাকাছি চলে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বের অনেক সংবাদমাধ্যম বলছে, এ বছরই মানবদেহে নিউরালিংক স্থাপন হতে পারে।

ইতোমধ্যে শূকর ও বানরের মস্তিষ্কে নিউরালিংক ডিভাইস সফলতার সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, ডিভাইসটি স্থাপন ও অপসারণ সম্পূর্ণ নিরাপদ।

গত বছরের এপ্রিলে নিউরালিংক পেইজা নামের এক বানরের ভিডিও প্রকাশ করে। যেখানে দেখা যায়, কোনো ধরনের স্পর্শ ছাড়াই মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে পেইজা কম্পিউটারে পিংপং গেম খেলছে।

নিউরালিংক ডিভাইসের সাহায্যে পিংপং খেলছে বানর

ভিডিওটিতে দেয়া ভয়েসওভারে বলা হয়, ‘নিউরালিংক তার ব্রেইন চিপের মাধ্যমে বানরের মোটর কর্টেক্স অঞ্চলে প্রতিস্থাপন করা দুই হাজারের বেশি সূক্ষ্ম তারের ইলেকট্রোড ব্যবহার করে মস্তিষ্ক থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত রেকর্ড ও ডিকোডের কাজ করে, যা সরাসরি কম্পিউটার ডিভাইসে প্রেরণ করে।’

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ডিভাইসটি ভবিষ্যতে মানুষের মস্তিষ্কসংক্রান্ত বহু সমস্যার সমাধান করবে। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা, ব্রেইন ড্যামেজ, হতাশা, উদ্বেগ ও আসক্তির মতো সমস্যার সমাধান ছাড়াও বিভিন্ন নিউরোসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবে।

এ ছাড়া প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিও স্পর্শ ছাড়াই মোবাইল, কম্পিউটারের মতো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে।

তবে ইলন মাস্কের দাবি আরও বিস্তৃত। ভবিষ্যতে নতুন কোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কিংবা কোনো দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে নিউরালিংক ডিভাইস মুহূর্তে তা মস্তিষ্কে আপলোড করে দেবে। এমনকি ব্রেইনকে কপি করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদী মাস্ক।

নিউরালিংক ডিভাইস মূলত ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি মানব মস্তিষ্ককে সরাসরি কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দিতে পারে। ফলে কোনো শারীরিক কর্মকাণ্ড ছাড়াই শুধু চিন্তা করে কম্পিউটারের মতো ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

নিজেকে ডজফাদার হিসেবে দাবি করেন ইলন মাস্ক

ক্রিপ্টোজগতে ইলন মাস্কের প্রভাব

শুধু কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেই নয়, ক্রিপ্টো কমিউনিটিতে মাস্কের প্রভাব রয়েছে। টেসলার ১.৫ বিলিয়ন ডলারের বিটকয়েন কেনায় ব্যাপক উত্থান হয় বিটকয়েনের। যদিও পরিবেশের কথা বলে টেসলা গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিটকয়েন ব্যবহার থেকে সরে আসার টুইটে বিটকয়েনের দামে সাময়িক ধস নামে। কারণ বিটকয়েন মাইনিংয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ অনেক দিন ধরে করে আসছেন পরিবেশবাদীরা।

ইলন মাস্ক নিজেকে ডজফাদার হিসেবে দাবি করেন। মিম হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ডজকয়েন এখন ক্রিপ্টো লিস্টে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে। ক্রিপ্টো অ্যানালিস্টদের মতে, এমনটা হয়েছে শুধুমাত্র ইলন মাস্কের জন্য। ভবিষ্যতে ইন্টারনেটে প্রধান মুদ্রা হিসেবে ডজকয়েনকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর