বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানুষ সভ্য হবে ২৩৭১ সালে

  •    
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:২০

কারডাশেভ স্কেলে মানুষের সক্ষমতা অর্থাৎ মানব সভ্যতার অগ্রগতি কোনো জায়গাই এখনও করতে পারেনি। প্রাথমিক পর্যায়েরও ধারেকাছে নেই আমাদের সভ্যতা।

মানবসভ্যতার পরিমাপ নিয়ে রাশিয়ার বিজ্ঞানী নিকোলাই কারডাশেভ বিশেষ মানদণ্ডের প্রস্তাব করেছিলেন, যার নাম কারডাশেভ স্কেল। এই বিজ্ঞানীর ধারণা অনুযায়ী মানুষ এখনও প্রাথমিক সভ্যতার পর্যায়েই পৌঁছায়নি। বর্তমান ধারা বজায় থাকলে ওই পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে আরও সাড়ে ৩০০ বছর। বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ইউনিভার্সটুডে কারডাশেভ স্কেল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেটি অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

মানব সভ্যতার সক্ষমতা নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। সর্বাধুনিক নানান প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে করে দিয়েছে সহজ, রোগবালাইয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা ওষুধ, পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে মহাশূন্যে পাড়ি জমাচ্ছে মানুষের তৈরি নভোযান।

তবে এতসব গর্ব নিমিষে ভেঙেচুরে দিতে পারে কারডাশেভ স্কেল। এই স্কেলে মানুষের সক্ষমতা অর্থাৎ মানব সভ্যতার অগ্রগতি কোনো জায়গাই এখনও করতে পারেনি। প্রাথমিক পর্যায়েরও ধারেকাছে নেই আমাদের সভ্যতা।

একটু খুলে বলা যাক। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন ও পতন, মহাবিশ্বের নানা প্রান্তে আমাদের পৌঁছে দেয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে সাধারণভাবে আমরা মানব সভ্যতার অগ্রগতি নির্ধারণ করি। তবে সব চেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে যে কোনো একক সময়ে মানুষ কতটুকু শক্তি ব্যবহার করছে সেটা পরিমাপ করা।

মানব সভ্যতা ছড়িয়ে পড়া ও অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিকে ব্যবহারের সামর্থ্যের বিষয়টি আমাদের দক্ষতার অন্যতম নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তির ব্যবহার প্রযুক্তির উৎকর্ষের একটি ভালো পরিমাপ হতে পারে। আর এটিই কারডাশেভ স্কেলের মূল ধারণা।

রাশিয়ান জ্যোতির্বিদ নিকোলাই কারডশেভ ১৯৬৪ সালে স্কেলটির প্রস্তাব করেন। সভ্যতা কতটা সম্মৃদ্ধ তা বিচার করতে তিনটি ভাগ সামনে এনেছেন তিনি, এগুলো হলো: গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাকটিক।

কারডশেভ স্কেল অনুযায়ী, একটি টাইপ ওয়ান প্রাণী প্রজাতি তার নিজ গ্রহে পৌঁছানো নাক্ষত্রিক জ্বালানির সমান শক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম। অর্থাৎ পৃথিবীতে সূর্যের শক্তির যতটুকু এসে পৌঁছায় তার পুরোটা।

টাইপ টু প্রজাতি তার নক্ষত্রের পুরো শক্তি এবং টাইপ থ্রি তার গ্যালাক্সির পুরো শক্তি ব্যবহার করতে পারে।

কারডশেভের ধারণাকে পরে জনপ্রিয়তা দেন আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সাগান। তার প্রস্তাব ছিল, তিন ধরনের স্কেল ব্যবহার না করে ধারাবাহিক পরিমাপের একটি স্কেল ব্যবহার করা।

এই স্কেল অনুযায়ী মানব জাতির অবস্থান চরম হতাশাজনক। মানুষ প্রচুর পরিমাণে শক্তি ব্যবহার করলেও তা এখনও টাইপ ওয়ানেই পৌঁছাতে পারেনি।

গড়পড়তা ১০১৬ ওয়াট সৌরশক্তি আসে পৃথিবীতে। তবে মানুষের ব্যবহার মাত্র ১০১৩ ওয়াট। এর অর্থ, পৃথিবীর বিপুল সৌরশক্তির অপচয় হয় পৃথিবীতে।

সাগানের স্কেলে মানুষের বর্তমান স্কোর মাত্র ০.৭৩। বিবর্বিত একদল প্রাইমেটের (বানর প্রজাতি) হিসাব করলে অবশ্য স্কোরটি খুব একটা খারাপ নয়। তবে এর সঙ্গে মন খারাপ করা প্রশ্নটি হলো, আমরা কি কোনোদিন টাইপ ওয়ানের সক্ষমতায় পৌঁছাতে পারব?

এই প্রশ্নের ভিত্তিতে করা একটি গবেষণাপত্র অনলাইন আর্কাইভ ও পিয়ার রিভিউ সাইট ‘আর্কাইভ’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় মূলত তিন ধরনের শক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এগুলো হলো জীবাশ্ম জ্বালানি, নিউক্লিয়ার জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি। সময়ের সঙ্গে এ তিন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার গণনা করা হয়েছে।

কেউ কেউ মনে করতেই পারেন, টাইপ ওয়ানে পৌঁছাতে জ্বালানি উৎপাদনকে প্রাধান্য দিলেই তো হয়। তবে বিষয়টি আদৌ এতটা সহজ নয়। প্রত্যেক জ্বালানি উৎসেরই রয়েছে নিজস্ব সীমাবদ্ধতা। আমরা চাইলে সবটুকু জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে ফেলতে পারি, তবে তার ফলে জলবায়ুতে এমন পরিবর্তন আসবে যাতে আমরাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারি।

বিশেষজ্ঞরা একে বলেন গ্রেট ফিল্টার। সমস্যা হলো মানুষই যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে মানবসভ্যতার টাইপ ওয়ান কী করে হবে!

এসব বিবেচনায় গবেষক দলটি আরও নিঁখুত একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, যেখানে প্রত্যেক জ্বালানি উৎসের ভৌত সীমাবদ্ধতাগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার বেঁধে দেয়া সীমার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে। এরপর তারা দেখেছেন, বাস্তবিক অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও মানুষের পক্ষে টাইপ ওয়ান পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব। তবে আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে আমরা অন্তত ২৩৭১ সালের আগে সেখানে পৌঁছাতে পারব না।

একটি আশার কথা হলো মানব প্রযুক্তি মাপার ক্ষেত্রে কারডাশেভ স্কেল খুব কার্যকর নয়। উন্নত সভ্যতার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শক্তি দরকার হলেও, আমরা দেখেছি কীভাবে কম শক্তি খরচ করা আধুনিক কম্পিউটার আমাদের প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি শক্তির চাহিদাও কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা কীভাবে একটি টাইপ ওয়ান সভ্যতা হতে পারি। তবে যখন আমাদের লক্ষ্য সেটা থাকবে না তখন হয়তো আমরা সত্যিকার অর্থেই অগ্রসর হবো।

এ বিভাগের আরো খবর