অনেক প্রাণী শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। তাদের মতো কিছু মাছও শব্দ করে যোগাযোগ করে বলে দীর্ঘদিন ধরে গবেষকরা জানেন। কিন্তু এসব মাছের শব্দকে সব সময় বিরল ঘটনা হিসেবেই ভাবা হয়েছে।
এবার নতুন এক গবেষণা আগের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। গবেষকরা দাবি করেছেন, মাছ এক ধরনের শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। কিছু মাছ প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে এভাবে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছে।
‘ইচথিওলজি এবং হারপেটোলজি’ বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় গবেষকরা এমনটা দাবি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির লিসা ইয়াং সেন্টার ফর কনজারভেশন বায়োঅ্যাকোস্টিক্সের গবেষক অ্যারন রাইস এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক।
সাইফাই ওয়্যারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাছেরা কালেভদ্রে শব্দ করে নাকি মাছের মধ্যে শাব্দিক যোগাযোগের একটি বিস্তৃত প্যাটার্ন রয়েছে তা জানতে গবেষণা করা হয়।
গবেষকরা মাছের শাব্দিক আচরণ সম্পর্কে জানতে বিদ্যমান গবেষণাপত্র, রেকর্ডিং ও মাছের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কাজ করেছেন।
প্রাথমিকভাবে রশ্মিযুক্ত মাছের (রে-ফিনড ফিশ) ওপর প্রাথমিক গবেষণা করেছে গবেষক দলটি। মাছেরই একটি প্রজাতি রে-ফিনড ফিশ। এই প্রজাতির ৩৪ হাজার উপ-প্রজাতি নিয়ে তারা কাজ করেছেন।
গবেষক অ্যারন রাইস বলেন, ‘৩৪ হাজার প্রজাতির মাছের রেকর্ড পরীক্ষা করার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আমরা পারিবারিক গোষ্ঠী নিয়ে কাজ করেছি। আমরা মোট ১৭৫টি পরিবার খুঁজে পেয়েছি, যারা শব্দের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।’
মাছের পারিবারিক গোষ্ঠী পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখতে পান, মাছের যোগাযোগে শব্দ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে গত কয়েক লাখ বছরে যোগাযোগের এই ধরন অন্তত ৩৩ বার বিবর্তিত হয়েছে।
মাছেরা কীভাবে শব্দ করে তা নিয়ে গবেষণা করে তারা দেখেছেন, ভোকাল কর্ড ছাড়াই মাছ শব্দ তৈরি করতে পারে।
রাইস বলেন, ‘মাছেরা দাঁত পিষে ও পানিতে চলাচলের মাধ্যমে শব্দ তৈরি করে। সম্ভবত মাছেরা তাদের পাখনা দিয়ে সাঁতারের সময় শব্দ তৈরি করে।’
রাইস ও তার সহকর্মীরা গবেষণায় দেখেছেন, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মাছেরা এসব শব্দ তৈরি করে, যা অন্যান্য প্রাণী ও মানুষের মধ্যে দেখা যায়।
রাইস বলেন, ‘মাছেরা সাধারণত কোনো সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে। প্রজনন যোগাযোগের পাশাপাশি মাছ সাধারণত খাদ্যের উৎস বা এলাকা রক্ষা করতেও শব্দ ব্যবহার করে।’
এছাড়া মাছ নিজের অবস্থান জানাতে বা সঙ্গীরা তার আশপাশে আছে কিনা তা জানতেও শব্দের ব্যবহার করে বলে জানান তিনি।
রাইস বলেন, ‘মাছের ভাষার এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে যতদূর আমরা বলতে পারি ‘আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও’, ‘আমার কাছে আসো’, ‘আমার খাবার স্পর্শ করো না’ ও ‘সেখানে কেউ কি আছে’ এগুলো বলে থাকে। তবে বিভিন্ন প্রজাতি বা পরিবারে এই আচরণগুলো ভিন্ন। কিছু মাছ অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি শব্দ করে।
‘প্রতিটি টোড ফিশকে আমরা দেখেছি অনেক শব্দ করতে। ক্যাটফিশ টন টন শব্দ করে। পিরানহা, টেট্রাস, গ্রুপার মাছের অনে প্রজাতি রয়েছে যা প্রচুর শব্দ করে। আবার অনেক মাছ আছে কম শব্দ করে।’ রাইস দাবি করে বলেন, ‘আমরা এখন যা জানি তার চেয়েও মাছেরা বেশি কথা বলে।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আমার ল্যাবে এক টন মাছের ট্যাঙ্ক আছে। এদের শব্দ আগে কখনও রেকর্ড করা হয়নি। এদের থেকে শব্দ পেতে পারি কিনা তা দেখার জন্য আমি এই পদক্ষেপ নিয়েছি।’