বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুখ তুমি কী…

  •    
  • ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:৪১

বিভিন্ন গবেষণায় সুখের পেছনে জিনগত বৈশিষ্ট্যের একটি বড় প্রভাব বেরিয়ে এসেছে। বিহেভিয়োরাল জেনেটিকসের গবেষকরা যমজদের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন, ৪০-৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে তাদের সুখী বা অসুখী হওয়ার ব্যাখ্যা জিনগত ভাবে দেয়া যায়।

যান্ত্রিক সমাজ যত বিস্তৃত হচ্ছে তত যান্ত্রিক হচ্ছে মানুষ। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল হয়ে নিরানন্দ, একাকী জীবন ঘিরে ধরছে প্রায় সবাইকে। এমন অবস্থায় ‘অসুখী’ মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

‘অসুখী’ মানুষের সুখের ‘ব্যবস্থা’ করার বিভিন্ন দাওয়াই-এর বিজ্ঞাপন এখন চারদিকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাড়ছে সেলফ-হেল্প ভিডিওর জনপ্রিয়তা। তবে এভাবে ‘সুখের’ ছোঁয়া সত্যিই পাওয়া যায় কিনা- তা নিয়ে আছে বিতর্ক।

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও আত্ম-বিধ্বংসী প্রবণতা বেড়ে চলায় প্রশ্ন উঠছে, বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকাই বেশির ভাগ মানুষের নিয়তি?

মন নিয়ে কিছু গবেষণায়, সুখের পেছনে জিনের ভূমিকা পাওয়া গেছে। রিভিউ অফ জেনারেল সাইকোলজিতে ২০০৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে দাবি করা হয়, মানুষ কতটা সুখী জীবন কাটাবে তা অর্ধেক ক্ষেত্রে জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভরশীল।

এই গবেষণা বলছে, ৫০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে তাদের সুখী হওয়ার ক্ষমতা জিনগত, ১০ শতাংশ নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর আর ৪০ শতাংশ নির্ভর করে স্বেচ্ছায় বেছে নেয়া কর্মকাণ্ডের ওপর।

তবে এভাবে চার্টের ভিত্তিতে সুখী হওয়ার কারণকে ভাগ করা নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেক বিশেষজ্ঞের। জিনের ওপর নির্ভর করে এই ফল মেনে নিতে চাননি তারা।

এরপরেও বিভিন্ন গবেষণায় সুখের পেছনে জিনগত বৈশিষ্ট্যের একটি বড় প্রভাব বেরিয়ে এসেছে। বিহেভিয়োরাল জেনেটিকসের গবেষকরা যমজদের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন, ৪০-৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে তাদের সুখী বা অসুখী হওয়ার ব্যাখ্যা জিনগত ভাবে দেয়া যায়।

২০০৫ সালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির সমালোচনার জবাবে একই গবেষক দল ২০১৯ সালে আরেকটি গবেষণা প্রকাশ করেন। তাতে আনন্দিত বা সুখী হওয়ার প্রবণতার ওপর জিনের প্রভাব নির্ণয়ে আরও নিঁখুত পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশ ও মন পরিচর্যা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। আনবিক ভাবে জিনের গঠন ও ক্রিয়া নিয়ে কাজ করে মলেকিউলার জেনেটিকস। এতে দেখা গেছে, নিজের উপযোগী পরিবেশ বেছে নেয়ার যে স্বভাব তাকে প্রভাবিত করে জিন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাবা-মার কাছ থেকে পাওয়া বহির্মুখীনতার স্বভাব সন্তানদেরকেও বন্ধু খুঁজে নিতে সহায়তা করেন।

আবার পরিবেশও জিন-বৈশিষ্ট্যের প্রকাশভঙ্গীকে প্রভাবিত করে। যেমন, সন্তানসম্ভবা মা কোনো দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়লে সন্তানের জিনেও বদল আসে। তাদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় সহায়ক রাসায়নিক কর্মকাণ্ড ব্যহত হয়। ফলে শিশুরা খর্বাকৃতি হতে পারে এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগের প্রবণতা দেখা যেতে পারে।

এছাড়া, মানুষের সুখী হওয়ার সামর্থ্য তাদের বদলে যাওয়ার ক্ষমতা বা পরিবেশগত সংবেদনশীলতার ওপরেও নির্ভরশীল। কিছু মানুষের ওপর আশপাশের পরিবেশেরও প্রভাব ব্যাপক। পরিবেশের কারণে নেতিবাচক বা ইতিবাচক উভয় ঘটনার ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে।

‘সুখী থাকার ওয়ার্কশপ’ করে বা ইতিবাচক মানসিকতার বই পড়া তাই একেবারেই বৃথা- এমনটি বলার সুযোগ নেই। এসবও কিছু মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুখী হতে সবার জন্য একই দাওয়াই সমান কার্যকর নয়। কারণ আমাদের ডিএনএর মতোই আমরা একে অপর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সুস্থ থাকার বা সুখী হওয়ার সামর্থ্য একেকজনের একেক রকম।

অনেকে নিজেকে সুখী রাখতে গিয়ে অন্যের চেয়ে বেশি সংগ্রাম করেন। এই সংগ্রাম অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আবার কেউ কেউ সারা জীবনেও সুখের খোঁজ খুব একটা পান না।

যাদের জিনগত নমনীয়তা বেশি অর্থাৎ যারা পরিবেশের সঙ্গে বেশি খাপ খাইয়ে নিতে পারেন তাদের পক্ষে হয়তো অনেক ভালো থাকা সম্ভব। তারা সুস্থ জীবনযাত্রা বেছে নিয়ে নিজেদের আরও সুখী করে তুলতে পারেন।

আমরা কে- এটা জেনেটিকস ঠিক করে দেয় না। তবে এটি আমাদের সুখী হওয়ার সামর্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। আমরা কোথায় বাস করি, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করি এবং কীভাবে জীবনযাপন করি সেটি আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সুখী হওয়ার মাত্রাকে নির্ধারণ করে।

এ বিভাগের আরো খবর