ইউরোপের দেশ কোস্টারিকায় বাদুরের বাসায় আড়ি পেতেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তারা জেনেছেন, নবজাতক মানবশিশুর মতো বাদুরছানাও অর্থহীন শব্দ করে মাতিয়ে রাখে চারপাশ।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বাদুরের বাসায় আড়ি পাতেন বার্লিনের মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির ড. আহানা ফার্নান্দেজ ও তার সহকর্মীরা।
প্রধান গবেষক ফার্নান্দেজ বলেন, ‘তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়াজ করতেই থাকে। এভাবে ধ্বনি ছুড়ে দিয়ে চর্চা জারি রাখে তারা।’
বেশি শব্দ করা সুনির্দিষ্ট এক প্রজাতির বাদুরের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন ফার্নান্দেজ। প্রজাতিটির নাম ‘স্যাকোপ্টারিক্স বিলিনিয়েটা’।
তুলনামূলক বড় থলি আকৃতির ডানার এই বাদুরগুলো আসলে গানের পাখির মতো সুরেলা গান গায় বলে মত গবেষকদের।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশ করা হয়েছে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি।
এতে বলা হয়, ছন্দে ছন্দে শব্দ তৈরি করে বাদুরগুলো। নির্দিষ্ট সময় পরপর এর পুনরাবৃত্তিও করে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মানবশিশু যেভাবে ভাষা আয়ত্তে আনার আগে যোগাযোগের জন্য অর্থহীন শব্দের চর্চা করে যায়, বাদুরও জন্মের পর সেভাবেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করে।
ফার্নান্দেজ বলেন, ‘মানবশিশুর মতো বাদুরও স্পষ্ট ও অক্ষরভিত্তিক ভান্ডার ব্যবহার করে। মৌখিক যোগাযোগের প্রাথমিক বা পরিশীলিত রূপ বলা যায় একে।’
বাদুরের বাসায় ছানাদের অর্থহীন শব্দ রেকর্ড করে তা বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক বাদুর ছন্দে ছন্দে তাদের গানের অক্ষরগুলোর পুনরাবৃত্তি করে। অনেকটা এ সুরেই মানবশিশু ‘ডা-ডা-ডা’, ‘গা-গা-গা’, ‘বা-বা-বা’ শব্দ করে।
এখন পর্যন্ত শুধু স্যাকোপ্টারিক্স বিলিনিয়েটা বাদুরের ক্ষেত্রেই এমন বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। পৃথিবীতে আবিষ্কৃত এক হাজার চার শর বেশি প্রজাতির বাদুরের মধ্যে আরও এমন বাদুর থাকতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক বাদুরের ‘কথা’ অন্য বাদুর শোনেও। তাও বেশ মনোযোগ দিয়ে।
তারা দেখেছেন, একটি বাদুর ‘কথা বলতে’ শুরু করলে টানা ১৫ মিনিট বলেই যায়। পুরো সময়জুড়ে সঙ্গে থাকা অন্য বাদুরগুলোর কান অব্যাহতভাবে নড়তে থাকে।