বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উহানে করোনা বহু আগেই, চাপা দেয়া গবেষণা প্রকাশ

  •    
  • ১৮ আগস্ট, ২০২১ ১৬:২০

আড়াই বছরে স্তন্যপায়ী, পাখি ও সরীসৃপসহ ৩৮ প্রজাতির ৪৭ হাজারের বেশি বন্যপ্রাণী বিক্রি হয়েছে উহানের চারটি বাজারে। খাদ্য ও পোষ্য হিসেবে বিক্রিত প্রাণীগুলো বাজারে ভীষণ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকত। সেখানেই প্রাণী থেকে মানুষ কিংবা মানুষ থেকে প্রাণীতে সংক্রমণযোগ্য বিভিন্ন ধরনের ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হতো তারা। ইনফ্লুয়েঞ্জা, জলাতঙ্ক ও পাখির দেহে রোগ সৃষ্টিকারী করোনাসহ বেশ কয়েক ধরনের করোনাভাইরাসও ছিল এসব রোগের মধ্যে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবিষ্কার হলেও চীনের উহান শহরে ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল আরও কয়েক বছর আগে। এক বছর আগের এক গবেষণায় এ তথ্য উদঘাটন হলেও প্রতিবেদনটি অপ্রকাশিত অবস্থাতেই রেখে দেয়া হয়েছে এতদিন।

গবেষণায় বলা হয়, উহানের যে বাজার থেকে করোনাভাইরাস প্রথম ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়, সেখানে সামুদ্রিক মাছ ও নানারকম প্রাণীর মাংস কেনাবেচা চলছিল ২০১০-এর দশক থেকে। খাদ্য ও পোষ্য হিসেবে বিক্রিত প্রাণীর তালিকায় ছিল ৩৮টির বেশি প্রজাতির বন্যপ্রাণী।

প্রমাণ মিলেছে যে, বিক্রি হওয়া হাজারো পশু করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন, যুক্তরাজ্য ও কানাডার একদল বিজ্ঞানীর এ গবেষণা প্রতিবেদনটি অপ্রকাশিত ছিল এক বছরের বেশি সময় ধরে।

গবেষকরা প্রতিবেদনটি প্রকাশের জন্য প্রথমবার ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকীর কাছে পাঠায়। সে সময় এবং পরে আরও দুই বার প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে সাময়িকীটি।

এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে পাঠানো হলে সেখানেও অপেক্ষমান থেকে যায় গবেষণা প্রতিবেদনটি। সম্প্রতি অনলাইনে এটি প্রকাশ করে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারের সায়েন্টিফিক রিপোর্টস।

করোনাভাইরাসের উৎস এবং এটি প্রাণী থেকে মানুষে ছড়িয়েছে, নাকি গবেষণাগারে তৈরি- সে বিষয়ে এ গবেষণা আলোকপাত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

চীনের কি ল্যাবরেটরি অফ সাউথওয়েস্ট চায়না ওয়াইল্ডলাইফ রিসোর্সেস কনজারভেশন, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা হুয়ানান সিফুড মার্কেটসহ উহানের বেশ কয়েকটি বাজারে ঘুরে তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করেছেন।

তারা জেনেছেন, বাজারগুলোকে বছরের পর বছর ধরে বিক্রি হয়ে আসা গন্ধগোকুল, কুকুর, মিংক, র‍্যাকুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিপুলসংখ্যক প্রাণী রূপ পরিবর্তিত বেশ কয়েক ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।

করোনাভাইরাস বন্য প্রাণী থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে, নাকি গবেষণাগারে তৈরির পর দুর্ঘটনাবশত ভাইরাসটি পরিবেশে ছড়িয়েছে- সে প্রশ্নে গত কয়েক মাস ধরেই উত্তপ্ত বিশ্ব রাজনীতি। ৪৩ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে দিনরাত এক করে খাটছেন বিজ্ঞানীরাও।

সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটির তথ্য সঠিক হলে করোনার উৎস সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণাই সত্য হবে। মহামারির শুরু থেকেই বেশিরভাগ বিজ্ঞানী বলে আসছেন, মানবদেহে সংক্রমিত হওয়ার আগে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নিয়েছে ভাইরাসটি।

ব্লুমবার্গ জানায়, কয়েক বছর আগে চীনের হুবেই প্রদেশে জীবাণু থেকে সৃষ্ট একটি রোগ অসুস্থ করে তুলেছিল হাজারো মানুষকে। মূলত সেই রোগের উৎসের অনুসন্ধানে গবেষণা করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে উহানের বাজারগুলোতে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি।

চার বছর আগে গবেষণাটির কাজ শুরু করেছিলেন কি ল্যাবরেটরি অফ সাউথওয়েস্ট চায়না ওয়াইল্ডলাইফ রিসোর্সেস কনজারভেশনের ভাইরাসবিশেষজ্ঞ ড. শিয়াও জিয়াও। ২০১৭ সালের মে থেকে ২০১৯-এর নভেম্বর পর্যন্ত উহানের চারটি বাজার ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি।

গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক শিয়াও জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে উহানে নিউমোনিয়াধর্মী রহস্যময় রোগ ছড়িয়ে পড়ে উহানে। পরবর্তীতে এটি করোনাভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার আগেই অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিজের গবেষণার জন্য সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন তিনি।

জানা যায়, আড়াই বছরে স্তন্যপায়ী, পাখি ও সরীসৃপসহ ৩৮ প্রজাতির ৪৭ হাজারের বেশি বন্যপ্রাণী বিক্রি হয়েছে বাজারগুলোতে। খাদ্য ও পোষ্য হিসেবে বিক্রিত প্রাণীগুলো বাজারে ভীষণ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকত।

সেখানেই প্রাণী থেকে মানুষ কিংবা মানুষ থেকে প্রাণীতে সংক্রমণযোগ্য বিভিন্ন ধরনের ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হতো তারা। ইনফ্লুয়েঞ্জা, জলাতঙ্ক ও পাখির দেহে রোগ সৃষ্টিকারী করোনাসহ বেশ কয়েক ধরনের করোনাভাইরাসও ছিল এসব রোগের মধ্যে।

অসুস্থ প্রাণীগুলোর মধ্যে একটি ছিল গন্ধগোকুল। ২০০৩ সালে ছোঁয়াচে সার্স ভাইরাস মহামারির উৎস ছিল এই প্রজাতিটি। সার্স ভাইরাস ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারির রূপ নেয়া করোনাভাইরাসেরই সমগোত্রীয়।

গত বছর করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পরপরই এসব তথ্য সমন্বিতভাবে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাদের প্রত্যাখ্যান করা হয়।

প্রতিবেদনের সহ-লেখক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ড. ক্রিস নিউম্যান বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম এই তথ্যগুলো তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গবেষণার ফল চমকে দেবে সবাইকে। এসব তথ্য জেনে ডব্লিউএইচও’ও বিস্মিত হবে।

‘কিন্তু এর কিছুই হয়নি। প্রথমে যে সাময়িকীতে প্রকাশের জন্য প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়, তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী এর গুরুত্ব বুঝতেই পারেনি।’

নিউম্যান জানান, প্রতিবেদনে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে মহামারির কেন্দ্রস্থলে খাদ্য হিসেবে জীবিত প্রাণী বিক্রি হচ্ছিল। মহামারির শুরুর দিনগুলোতেই এটি প্রকাশ করা উচিত ছিল।

পরে আরও দুই বার পুনর্মূল্যায়ন ও সংশোধন করে পাঠানো হলেও তখনও প্রকাশ করা হয়নি প্রতিবেদনটি।

পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের উৎসবিষয়ক বেশ কয়েকটি গবেষণায় মহামারির সম্ভাব্য উৎসস্থল হিসেবে উহানের বাজার বলে জানা গিয়েছিল। বেইজিংয়ের গবেষকদের একটি দল এবং চীনে করোনার উৎস অনুসন্ধান করতে যাওয়া ডব্লিউএইচও’র বিশেষজ্ঞরাও একই মত দিয়েছেন।

যদিও এসব গবেষণার আগে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে উহানের বাজার থেকে করোনা ছড়ানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল চীনের সরকার। বরং ভাইরাস ইউরোপের কোনো দেশ কিংবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে এসেছে বলে সে সময় দাবি করে বেইজিং।

ড. শিয়াও জানান, যেসব বাজারে তিনি ঘুরেছেন, সেগুলোতে বিক্রির জন্য রাখা প্রাণীর ৩০ শতাংশের দেহেই গুলির আঘাত বা ফাঁদে আটকা পড়ে আহত হওয়ার ক্ষত ছিল। অর্থাৎ সেগুলো বন্যপ্রাণী ছিল।

চারটি বাজারের ১৭টি দোকানের একটিও বৈধভাবে বন্যপ্রাণীর ব্যবসা করছিল না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কারণ কোনো দোকানমালিকই এসব প্রাণী কোথা থেকে আনা হয়েছে, কিংবা কোয়ারেন্টিনে ছিল কি না- সে সংক্রান্ত কোনো সনদ দেখাতে পারেননি।

জ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী স্প্রিঙ্গার নেচার ডব্লিউএইচও এবং সংস্থাটির করোনাবিষয়ক কারিগরি প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভের কাছে গবেষণা প্রতিবেদনটি ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছিল। কিন্তু দুটি ই-মেইলই প্রাপকদের নজর এড়িয়ে যায়।

করোনাভাইরাস উহানের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের অনেক রাজনীতিক।

যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রকাশিত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কিছুদিন আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারির খবর প্রকাশের আগেই ২০১৯ সালের নভেম্বরে উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির তিন গবেষক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

সে সময় প্রতিষ্ঠানটির কতজন গবেষক অসুস্থ হয়েছিলেন, কখন অসুস্থ হয়েছিলেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কি না এসব তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলে চীনের গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগটি আরও জোরালো হতে পারে।

চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৯০ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উৎসবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। চলতি মাসেই প্রকাশ করা হতে পারে প্রতিবেদনটি।

এ বিভাগের আরো খবর