বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাড়ির রোগ থেকে প্রাণঘাতী আলঝেইমার-কোলন ক্যানসার?

  •    
  • ১৬ আগস্ট, ২০২১ ২১:৫৭

মাড়ির রোগের সঙ্গে হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস ও শিশুর জন্মের আগে বিভিন্ন জটিলতার সম্পর্ক প্রমাণ হয়েছে আগেই। অ্যালঝেইমার্সের সঙ্গে মাড়ির রোগের সম্পৃক্ততা পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দিন দিন ধারণাটি জোরাল হচ্ছে।

অ্যালঝেইমার্স রোগটি আবিষ্কার করেছিলেন জার্মান মনস্তাত্ত্বিক অ্যালয় অ্যালঝেইমার। এরপর এক শ বছর পেরিয়ে গেলেও জানা যায়নি রোগটির কারণ।

অ্যালঝেইমার্স হলো ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রূপ। ডিমেনশিয়া কোনো সুনির্দিষ্ট রোগ নয়। স্মরণশক্তি, চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি লোপ পাওয়াকে সাধারণভাবে ডিমেনশিয়া বলা হয়; যার ফলে রোগী নিজের দৈনন্দিন জীবনও ভুলতে বসেন। এই ডিমেনশিয়ার প্রাণঘাতী রূপ অ্যালঝেইমার্স।

কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন গবেষণায় কখনও জিনগত পরিবর্তন, কখনও বার্ধক্য, কখনও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়া কিংবা পরিবেশগত উপাদান-অনেক কিছুই অ্যালঝেইমার্সের কারণ বলে মনে করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আজও পৌঁছাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে আসা আরেকটি সম্ভাব্য কারণ বিস্মিত করেছে গবেষকদেরও। কারণটি হলো- মাড়ির রোগ।

সায়েন্টিফিক আমেরিকানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গবেষণায় আভাস মিলেছে যে মাড়ির রোগ থাকা ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের অর্ধেকের মধ্যেই অ্যালঝেইমার্সের সংক্রমণ হতে পারে।

মাড়ির রোগের জন্য দায়ী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো মাড়ির ভেতরে লুকিয়ে থাকে। মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে এসব ব্যাকটেরিয়া দেহের রক্তপ্রবাহ ব্যবস্থায় ঢুকে যেতে পারে।

মাড়ির রোগের সঙ্গে হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস ও শিশুর জন্মের আগে বিভিন্ন জটিলতার সম্পর্ক প্রমাণ হয়েছে আগেই। অ্যালঝেইমার্সের সঙ্গে মাড়ির রোগের সম্পৃক্ততা পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দিন দিন ধারণাটি জোরালো হচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অফ ল্যুইভিল স্কুল অফ ডেন্টিস্ট্রির ওরাল ইমিউনোলজি ও সংক্রামক রোগবিষয়ক অধ্যাপক রিচার্ড ল্যামন্ট বলেন, ‘এসব আবিষ্কারের ফলে এই রোগগুলোর বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।’

মাড়ির রোগের সঙ্গে অ্যালঝেইমার্সের সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬৫ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি অ্যালঝেইমার্সে আক্রান্ত হন। বর্তমানে দেশটিতে এ রোগীর সংখ্যা ৬০ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রাণঘাতী রোগটির কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। ফলে রোগটির কারণ উদঘাটনের মাধ্যমে এটি মোকাবিলার পথ খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।

বিপুলসংখ্যক রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে মাড়ির দাঁতের সঙ্গে অ্যালঝেইমার্সের সম্ভাব্য যোগসূত্রের ধারণা প্রথম মেলে কয়েক বছর আগে।

তাইওয়ানের চুং সান মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় ২৮ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য নেয়া হয়েছিল। তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এদের মধ্যে মাড়ির রোগে ভোগা ব্যক্তিদের অ্যালঝেইমার্সের ঝুঁকি ছিল সুস্থ মাড়ির ব্যক্তিদের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।

তারও আগে ২০১৬ সালে আরেকটি গবেষণায় জানা যায়, মাড়ির রোগ নেই এমন ব্যক্তিদের তুলনায় মাড়ির রোগে ভুগেছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যালঝেইমার্সের উপসর্গগুলো স্পষ্ট হয়েছে ছয়গুণ দ্রুততায়।

খুব সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মাড়ির রোগ মস্তিষ্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। মাড়ির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ব্রাশ বা ফ্লসের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করলে বা খাবার চিবানোর সময় অনেক সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। এর মাধ্যমে মুখে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, বিশেষ করে পরফাইরোমানাস জিঞ্জিভ্যালিস, রক্তপ্রবাহের স্থান বা মাড়ির সংক্রমিত স্থান থেকে দেহের রক্তপ্রবাহ ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করে।

ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামার অধ্যাপক মিয়া জেইসিঙ্গার বলেন, ‘এভাবে মাড়ির রোগের মাধ্যমে মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়া সহজেই মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। মস্তিষ্কের রক্তনালীসমৃদ্ধ বহিঃআবরণও পার করে ফেলে। এসব রক্তনালী সাধারণত মস্তিষ্কে অনুপ্রবেশকারী উপাদানগুলোর জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে।

‘তবে অ্যালঝেইমার্সসহ ডিমেনশিয়া জাতীয় স্মৃতি ও চিন্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার মতো রোগগুলোর জীবাণুকে আটকাতে পারে না।’

একবার মস্তিষ্কে প্রবেশ করলে পরফাইরোমানাস জিঞ্জিভ্যালিস মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকে মেরে ফেলতে শুরু করে। একই সঙ্গে বেটা-অ্যামিলয়েড প্লাক নামে এক ধরনের জমাট বাঁধা আমিষের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। অ্যালঝেইমার্স রোগের অন্যতম চিহ্ন এগুলো।

গবেষকরা জানান, পরফাইরোমানাস জিঞ্জিভ্যালিস ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে জিনজিপেইনস নামের এক ধরনের বিষাক্ত উৎসেচক তৈরি হয়। মৃত অ্যালঝেইমার্স রোগীদের মস্তিষ্কে এবং জীবিতদের মেরুদণ্ডের তরলে উৎসেচকটির উপস্থিতি ছিল ৯৬ শতাংশ।

অ্যালঝেইমার্স ছাড়াও কিছু গবেষণায় কোলন ক্যানসারের মতো আরেকটি প্রাণঘাতী রোগের সঙ্গেও মাড়ির রোগের যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

মুখে থাকা আরেকটি জীবাণু ফিউসোব্যাকটেরিয়াম নিউক্লিটাম। দেহে অন্ত্রের ক্যানসার বা কোলন ক্যানসার বাসা বাঁধার পেছনে এটি একটি কারণ বলে দীর্ঘদিন ধরেই ধারণা প্রচলিত আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসারে মৃত্যুর দ্বিতীয় শীর্ষে এ রোগ।

ফিউসোব্যাকটেরিয়াম নিউক্লিটাম দাঁতে প্লাক তৈরির জন্যও দায়ী। এটির পরিমাণ বেড়ে গেলে অন্ত্রের ক্যানসারের টিস্যুতেও এর উপস্থিতি মেলে।

এ ছাড়া কিছু গবেষণায় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত ও বিপাকক্রিয়াজনিত রোগসহ বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার সঙ্গেও মাড়ির রোগের যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

এ বিভাগের আরো খবর