গর্ভাবস্থার বিরল ও মারাত্মক জটিলতা সহজ এক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের জীবন হুমকিতে পড়ার অনেক আগেই এই পরীক্ষা তাকে রক্ষা করতে পারে বলে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্স এলার্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্ল্যাসেন্টা অ্যাক্রিটা স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (পিএএস) গর্ভাবস্থার অন্যতম বিরল ঘটনা।
এ ক্ষেত্রে গর্ভকালে জরায়ুতে প্ল্যাসেন্টা বা গর্ভফুল বিকশিত হয়। শিশু জন্মের পর প্ল্যাসেন্টা পুরোপুরি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে না পারাকেই পিএএস বলা হয়।
জরায়ুর দেয়ালের অনেক গভীরে যখন প্ল্যাসেন্টার বিকাশ হয় এবং সন্তান প্রসবের পর নিজে থেকে এটি বিচ্ছিন্ন না হয়, তখন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্ল্যাসেন্টা পুরোপুরি শরীর থেকে না সরলে অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণ হয়। এতে গর্ভধারণ করা নারীর গুরুতর অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত জানা গেলে মা ও শিশু উভয়ের জন্য তা স্বস্তির হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যাবিষয়ক গবেষণায় দেখা গেছে, অর্ধেকের মতো ঘটনায় পিএএস শনাক্তই করা যায় না।
গর্ভাবস্থায় পিএএস খুব সহজে শনাক্ত করার তেমন কোনো উপায় নেই। সাধারণত আল্ট্রাসাউন্ড ও মায়ের গর্ভাবস্থার ইতিহাসের মাধ্যমে এটি শনাক্ত করা হয়।
সময়ের আগেই সিজারিয়ান ডেলিভারি হলে পিএএস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। ওই সময় জরায়ুমুখ আংশিক বা পুরোপুরি প্ল্যাসেন্টা ঢেকে ফেলে।
আল্ট্রাসাউন্ডস পরীক্ষা ব্যয়বহুল। এ ছাড়া এর মাধ্যমে পিএএস শনাক্ত অনেকটা সোনোগ্রাফারের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
গর্ভাবস্থায় পিএএস শনাক্তে সহজ একটি রক্ত পরীক্ষা অনেক কার্যকর ও মানসম্মত হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।
রক্তপ্রবাহে ট্রোফোব্লাস্টস নামের ভ্রূণের নির্দিষ্ট কোষের মাধ্যমে গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুতে পিএএস সঠিকভাবে শনাক্তে জোর দিয়েছেন তারা।
সাধারণত গর্ভাবস্থা শুরুর কয়েক দিনের মধ্যে অল্পসংখ্যক ট্রোফোব্লাস্টস পাওয়া যায়।
তবে এই কোষগুলো যখন বেশি পরিমাণে গুচ্ছ আকারে রক্তপ্রবাহে অবস্থান করে, তখন এর মাধ্যমে পিএএসের উপস্থিতি বেশি টের পাওয়া যায়।
এই জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা বিশেষ মাইক্রোচিপের নকশা করেন।
এই চিপের নাম দেয়া হয়েছে ন্যানোভেলক্রো চিপ।
ন্যানোভেলক্রো চিপ রক্তে একক ও গুচ্ছাকারে থাকা ট্রোফোব্লাস্টস শনাক্ত করতে পারে।
ন্যানোওয়াইয়ারের গ্রিডের মাধ্যমে স্ট্যাম্প আকৃতির এই চিপ ভেলক্রোর মতো আঠালো হয়।
ন্যানোওয়াইয়ারের প্রতিটি তার একটি অ্যান্টিবডিতে আবৃত থাকে। ওই অ্যান্টিবডি রক্তে ট্রোফোব্লাস্টসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
এরপর একটি মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে চিপে কতগুলো ট্রোফোব্লাস্টস রয়েছে, তা জানা যায়।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাথলজিস্ট ইয়াঝেন ঝু বলেন, ‘প্রথম বার ট্রোফোব্লাস্টসের গুচ্ছ দেখলে মনে হয় জ্বলজ্বল করা মুক্তা দেখছি।
‘যখন আমরা মাইক্রোস্কোপে ওই কোষগুলো দেখি, মনে হয়েছিল আমরা প্ল্যাসেন্টা সরাসরি দেখছি।’