স্পেনের একটি গুহায় ৬০ হাজার বছরের পুরোনো রঙের ছোঁয়া বিলুপ্ত নিয়ানডারথালদের বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
তাদের করা গবেষণার বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাগৈতিহাসিক আর্দালেস গুহার ভেতরের পাথুরে কাঠামো ‘স্ট্যালাগমাইটস’-এর স্তম্ভজাতীয় বস্তুগুলো রঙিন করে তোলা হয়েছে রং ‘ছিটিয়ে আর ফুঁ দিয়ে’।
স্ট্যালাগমাইটস হলো বদ্ধ জায়গায় ছাদ চুইয়ে মেঝেতে পড়ে জমাট বাঁধা ক্যালসিয়াম কার্বনেটের স্তূপ যা দেখতে নানা আকৃতির স্তম্ভের মতো। অনেক সময় বহু বছর ধরে জমে থাকা লাভা, কাদা, বালু, লোহা ও অন্যান্য ধাতবের তরলও স্ট্যালাগমাইটসে পরিণত হয়।
আর্দালেস গুহাজুড়ে এমন অনেক স্ট্যালাগমাইটসের দেখা মেলে, যেগুলোর গায়ে আলাদা করে রঙের উপস্থিতিও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এ থেকেই তাদের ধারণা, অনেক বছরের গবেষণায় নিয়ানডারথালদের সভ্যতার ছোঁয়া না পাওয়া ও বর্বর বলে বিবেচনা করা হলেও তাদের মধ্যে হয়তো শিল্পবোধ ছিল। স্পেনের প্রাচীন গুহাটিতে রঙের ছোঁয়া তাদের শিল্পবোধেরই প্রতিফলন বলে সোমবার প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর্দালেস গুহার ‘স্ট্যালাগমাইটস ডোম’ বা স্তম্ভগুলোতে মেটে লাল রঙের উপস্থিতির পেছনে মানুষের পূর্বপুরুষ নিয়ানডারথালদের হাত থাকতে পারে বলে ২০১৮ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তখন থেকেই প্যালেওআর্কিওলজির জগতে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এটি।
বিজ্ঞানের পরিভাষায় মানুষ তথা হোমো স্যাপিয়েন্সের আদি রূপ হলো নিয়ানডারথাল। প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে নিয়ানডারথালরা বিলুপ্ত হয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।
নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আর্দালেস গুহায় রঙের উপস্থিতি কমপক্ষে ৬৪ হাজার ৮০০ বছরের পুরোনো বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সে সময় পৃথিবীর বুকে আধুনিক মানুষের অস্তিত্ব ছিল না।
শুরুতে ওই রং আয়রন অক্সাইডের প্রবাহ থেকে সৃষ্টি বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু নতুন বিশ্লেষণে মিলেছে ভিন্ন তথ্য। বিজ্ঞানীরা জানান, ফুঁ দিয়ে আর ছিটিয়ে স্ট্যালাগমাইটসগুলো রং করা হয়েছিল।
গুহার প্রাকৃতিক নমুনার সঙ্গে ওই রঙিন পদার্থের গঠনবিন্যাসে পার্থক্য থেকেই এ রং বাইরে থেকে আনা হয়েছে বলে ধারণা জন্মায় বিজ্ঞানীদের। এরপরই বিষয়টি নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু হয় গবেষণা।
ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অফ বোহদুর গবেষক ডি’এরিকো বলেন, ‘আমাদের ধারণা, কয়েক হাজার বছর ধরে বিভিন্ন উপলক্ষে গুহাটি রং করতেই এখানে আসত নিয়ানডারথালরা।’
এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, গুহাটিতে একেকটি রঙের প্রলেপ একেক সময় দেয়া হয়েছিল। একেকটি প্রলেপের মধ্যে ১০ হাজার বছরের বেশি সময়ের পার্থক্যও ধরা পড়েছে।