সবেমাত্র মহাকাশে পর্যটক হিসেবে ঘুরে এসেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। এর মধ্যেই চাঁদে অভিযানবিষয়ক একটি কাজের চুক্তি পেতে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাকে ২০০ কোটি ডলার দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে নতুন করে আলোচনায় তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যে মহাকাশযানে চড়ে নাসার পরবর্তী চন্দ্র জয় অভিযান শুরু করবেন নভোচারীরা, বেজোস চান সেটি তৈরি করুক তারই আরেক প্রতিষ্ঠান ব্লু ওরিজিন।
সব ঠিক থাকলে নাসার পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সালেই ফের চাঁদে পা রাখতে পারেন নভোচারীরা।
তাদের চাঁদে নিয়ে যাবে যে মহাকাশযানটি, সেটি তৈরিতে আরেক ধনকুবের ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সঙ্গে চলতি বছরের এপ্রিলে ২৯০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে নাসা।
জেফ বেজোসের ব্লু ওরিজিন আর প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডাইনেটিকস কাজটি পাওয়ার তুমুল চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় তাদের পেছনে ফেলে চুক্তিটি বগলদাবা করে মাস্কের স্পেসএক্স।
চুক্তিটি পেতে লকহিড মার্টিন করপোরেশন, নর্থরপ গ্রুম্যান করপোরেশন ও ড্র্যাপারসহ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল ব্লু ওরিজিন।
সবগুলোই মহাকাশযান ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি, তথ্য নিরাপত্তা, প্রযুক্তির মতো বিষয়ে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান।
নাসা জানায়, নিজস্ব তহবিলে ঘাটতি থাকা এবং কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্পেসএক্সের দক্ষতা প্রমাণিত বলে প্রতিষ্ঠানটিকে চন্দ্র জয়ের যান তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
নাসার কর্মকর্তা ক্যাথি লুয়েডার্স জানান, প্রকল্পটিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বরাদ্দ ও পর্যাপ্ত গুণগত মান সাপেক্ষে স্পেসএক্সের সঙ্গে সেরা চুক্তিটি বের করেছে নাসা।
এ বিষয়ে নাসার পরিচালক বিল নেলসনকে একটি চিঠি দিয়েছেন বেজোস। এতে তিনি লিখেছেন, সরকারের চলতি ও পরবর্তী অর্থবছরে পরিশোধযোগ্য অর্থে ২০০ কোটি ডলার ভর্তুকি দিতে চায় ব্লু ওরিজিন। একই সঙ্গে নিজস্ব প্রযুক্তিগত দক্ষতা যাচাইয়ে কক্ষপথবিষয়ক কোনো অভিযানের খরচও বহন করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি আরও জানান, এর বিনিময়ে ব্লু ওরিজিনের সঙ্গে নাসাকে সুনির্দিষ্ট মূল্যে একটি স্পষ্ট চুক্তি করতে হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পের খরচ পূর্বপরিকল্পনার চেয়ে বেশি হলে সে অর্থ দিতে হবে নাসাকে।
বেজোস লিখেন, ‘অর্থবরাদ্দ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দ্বিতীয় উৎস থেকে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক নিজেদের কৌশল থেকে সরে গিয়েছে নাসা। আমার এই প্রস্তাবে তাদের সে বাধা দূর হবে।
‘প্রতিযোগিতা না থাকলে নাসার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি চন্দ্র জয় অভিযানে বিলম্ব হবে। কিন্তু এতে খরচ আরও বাড়বে। আখেরে জাতীয় স্বার্থও রক্ষা হবে না।’
বেজোসের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নাসার মুখপাত্র।
স্পেসএক্সের সঙ্গে নাসার চুক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে জবাবদিহিতাবিষয়ক সরকারি দপ্তর জিএওতে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছে ব্লু ওরিজিন। তারা দাবি করেছে, স্পেসএক্সকে প্রকল্পটি দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে সম্ভাব্য ব্যয় সংশোধনের অবৈধ সুবিধা দিয়েছে নাসা।
এ বিষয়ে আগামী (আগস্ট) মাসে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে জিএও।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে স্পেসএক্সের সঙ্গে নাসার চুক্তি বাতিলের খুব একটা সম্ভাবনা নেই।
এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি স্পেসএক্স।
স্পেসএক্সকে বাছাইয়ের আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রস্তাব চেয়েছিল নাসা। আর্টেমিজ কর্মসূচির অধীনে নভোচারীদের চাঁদে নিয়ে যাওয়া এবং পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম একটি মহাকাশযান নির্মাণে ওই প্রস্তাব চাওয়া হয়।
১৯৭২ সালের পর প্রায় পাঁচ দশকে নাসার এ ধরনের প্রথম কর্মসূচি এটি।
চন্দ্র অভিযান সম্পন্নে ব্লু ওরিজিনের প্রস্তাবিত মহাকাশযানটির নাম ‘ব্লু মুন’।
ফোর্বসের তালিকায় বেজোস ও মাস্ক যথাক্রমে বিশ্বের শীর্ষ ও তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি।
তিনজন ক্রুর সঙ্গে ব্লু ওরিজিনের রকেট-ক্যাপসুল নিউ শেপার্ডে চড়ে মাত্র ছয়দিন আগে মহাকাশে ঘুরে এসেছেন বেজোস। এরপরই নাসাকে ২০০ কোটি ডলারের প্রস্তাবটি দিলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাকাশকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসায় অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে মহাকাশ ভ্রমণের এ মাইলফলক স্থাপন করেছেন বেজোস।