বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডেল্টা বেশি ছড়ায় কেন

  •    
  • ২৫ জুলাই, ২০২১ ১২:১৮

ডেল্টার সংস্পর্শে আসার চার দিন পর রোগীর দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বিপরীতে করোনার আদি রূপে আক্রান্তদের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয় সংক্রমণের ছয় দিন পর। একই সঙ্গে করোনার আদি রূপে আক্রান্তদের তুলনায় ডেল্টায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভাইরাল লোড ১ হাজার ২৬০ গুণ বেশি।

২০২০ সালের শেষ দিকে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তিত অধিক সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। বর্তমানে বৈশ্বিক সংক্রমণের সিংহভাগের জন্যই দায়ী ডেল্টা।

গবেষকরা মনে করছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বংশবৃদ্ধির হার করোনাভাইরাসের আদি রূপ সার্স-কোভ-টুর তুলনায় অনেক গুণ বেশি। আর এ কারণেই এটি অন্যান্য ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনার চেয়ে অনেক বেশি ছোঁয়াচে।

বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সবশেষ হালনাগাদকৃত একাধিক হিসাব বলছে যে বিভিন্ন করোনার আদি রূপ সার্স-কোভ-টুর তুলনায় ডেল্টার সংক্রমণ সক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি।

এর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন চীনের গুয়াংঝুতে অবস্থিত গুয়াংদং প্রাদেশিক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের গবেষকরা।

সংস্থাটির মহামারি বিশেষজ্ঞ জিং লু ও তার সহকর্মীরা করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাওয়ায় কোয়ারেন্টিনে থাকা ৬২ ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই ৬২ জনের মধ্যে কয়েকজনের দেহে পরবর্তী সময়ে ডেল্টা শনাক্ত হয়। চীনা ভূখণ্ডে তারাই ডেল্টায় আক্রান্ত প্রথম রোগী।

গবেষকরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রতিদিন এই ৬২ জনের দেহের ‘ভাইরাল লোড’ পরীক্ষা করেছেন।

দেহে বা রক্তে ভাইরাসের মোট পরিমাণ বা ঘনত্ব পরিমাপের একক হলো ‘ভাইরাল লোড’।

এরপর ২০২০ সালে করোনার মূল রূপ সার্স-কোভ-টুতে আক্রান্ত হওয়া ৬৩ জনের সংক্রমণের ধরনের সঙ্গে নতুন ৬২ জনের সংক্রমণের ধরনের পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে।

চলতি মাসের ১২ তারিখ গবেষণা প্রতিবেদনের প্রিন্ট পূর্ববর্তী সংস্করণে বলা হয়, ডেল্টার সংস্পর্শে আসার চার দিন পর রোগীর দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বিপরীতে করোনার আদি রূপে আক্রান্তদের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয় সংক্রমণের ছয় দিন পর।

এ বিষয়টি থেকেই আভাস মেলে যে ডেল্টা অনেক দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে সক্ষম।

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার আদি রূপে আক্রান্তদের তুলনায় ডেল্টায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভাইরাল লোড ১ হাজার ২৬০ গুণ বেশি।

এ অবস্থায় মানবদেহে বিপুলসংখ্যক ভাইরাসের উপস্থিতির পাশাপাশি অল্প সময়ে নতুন ভাইরাস জন্মদান সক্ষমতাকে ডেল্টার অধিক সংক্রামক হওয়ার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ বেঞ্জামিন কাওলিং জানান, শুধু শ্বাসতন্ত্রে বাসা বাঁধা ডেল্টাই একজন থেকে কয়েকজন মানুষের দেহে ছড়াতে সক্ষম। এমনকি ডেল্টায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়ার আগেই সংক্রমিত ব্যক্তির দেহ থেকে ভাইরাসটি অন্যদের দেহে ছড়াতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ডেল্টার অল্প সময়ে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতার কারণে চীনের মতো জনবহুল দেশগুলোতে ‘কনটাক্ট ট্রেসিং’ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ছোঁয়াচে ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা প্রতিটি মানুষকে দুই সপ্তাহের মধ্যে শনাক্তের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘কনটাক্ট ট্রেসিং’। ভাইরাসের বিস্তার রোধে কনটাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে শনাক্তদের কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়।

সব মিলিয়ে ডেল্টার সংক্রমণ ঠেকানো সত্যিই খুব কঠিন বলে জানান কাওলিং।

সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব বার্নের জেনেটিকস গবেষক এমা হডক্রফট মনে করেন, ডেল্টার বিস্তারের এই প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষকদের ধারণাটি যৌক্তিক।

কাওলিং ও হডক্রফট মনে করেন, করোনার আদি রূপের সঙ্গে ডেল্টার ভাইরাল লোডের সঠিক পার্থক্য দেশ হিসেবে কিছুটা আলাদা হবে। করোনার রূপ পরিবর্তিত ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এ ভাইরাসটি নিয়ে গবেষণা চলছে আরও অনেক দেশে।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে অন্য অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।

করোনার আদি রূপের তুলনায় ডেল্টার সংক্রমণ অধিক গুরুতর অসুস্থতা তৈরি করে কি না, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ডেল্টার ফাঁকি দেয়ার ক্ষমতা কতটুকু, জানা যায়নি তাও।

হডক্রফট বলেন, ‘ভাইরাসটি আমাদের সমানে আশ্চর্য করে যাচ্ছে।’

এ অবস্থায় দেশে দেশে ডেল্টাসহ করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে এসব রূপ পরিবর্তিত ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা বাড়ছে। ফলে নতুন নতুন তথ্য শিগগিরই সামনে আসবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।

এ বিভাগের আরো খবর