বর্ষার মৌসুমে অবিরাম বৃষ্টি জনজীবনে ডেকে আনে নানা দুর্ভোগ। হঠাৎ তুমুল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, যান চলাচলে বিঘ্ন, ভূমিধস-বন্যায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের মতো দৃশ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খুব সাধারণ হলেও দুবাইয়ে একেবারেই এর উল্টো।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে গ্রীষ্মের নিয়মিত চিত্র হলো তাপমাত্রার পারদ ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ছাড়িয়ে যাওয়া। দেশটিতে বৃষ্টিপাতের গড় মাত্র চার ইঞ্চি।
এ অবস্থায় কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামিয়ে গরম কমানোর উপায় বের করেছে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ব্রিটিশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল দি ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পারস্য উপসাগরীয় দেশটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়াতে ‘ক্লাউড সিডিং’ বা ‘মেঘ বপন’ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন আবহাওয়াবিদরা।
এ পদ্ধতিতে মানববাহী ড্রোন দিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োগ করে আকাশে বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়ানো মেঘকে এক জায়গায় জড়ো করে বৃষ্টি ঝরানো হয়।
আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, বৈদ্যুতিক স্পন্দন ব্যবহারের মাধ্যমে আকাশে ভেসে বেড়ানো অসংখ্য ক্ষুদ্র পানির কণাকে যুক্ত করে দেয়া হয়। এতে ঝরে পড়ার মতো বড় ও ভারী ফোঁটায় রূপ নেয় পানির কণাগুলো।
আরব আমিরাতের আবহাওয়া অধিদপ্তর গত রোববার ভারী বৃষ্টির একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। স্বাভাবিক বৃষ্টির মতোই এ বৃষ্টি নামানো হয়েছে ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে।
কৃত্রিমভাবে নামানো বৃষ্টিতে ভেসেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। দারুণ গর্জনে হয়েছে বজ্রপাত। আল-আইন শহরে বিঘ্ন ঘটেছে যান চলাচলে। পরের কয়েক দিনে আরও বৃষ্টির আভাসও দিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদরা।
অবশ্য পরীক্ষামূলক এ পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত বাড়াতে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করা হয়নি। মেঘদের জড়ো করা হয়েছিল ড্রোন থেকে সিলভার আয়োডাইডের মতো রাসায়নিক ছুড়ে।
কিন্তু পরিবেশবান্ধব উপায়ে কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে গবেষকরা রাসায়নিক নয়, বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োগকেই উত্তম বলে মনে করছেন।
প্রকল্পটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ রিডিংয়ের গবেষকরা। অন্যতম গবেষক অধ্যাপক মার্টিন আম্বাউম আগে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বৃষ্টি কম হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার মতো যথেষ্ট মেঘ আরব আমিরাতের আকাশে আছে।
২০১৭ সাল থেকে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির নয়টি প্রকল্পে দেড় কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে আরব আমিরাত সরকার। এসব প্রকল্পেরই একটি ‘ক্লাউড সিডিং’।