গত বছরের শুরুর দিকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছিল ভাইরাসটির অন্যতম হটস্পট ইতালির ছোট্ট শহর ভো'।
ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম সার্স-কোভ-২ শনাক্তের ঘোষণা দেয় ইতালি। এশিয়ার বাইরে সংক্রমণ দেখা দেয়ায় করোনা মোকাবিলায় তৎপর হয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।
শনাক্তের পরপরই ৩ হাজার ২৭০ জনসংখ্যার ভো' শহরের মেয়র কঠোর লকডাউনের নির্দেশ দেন। সবাইকে করোনা পরীক্ষা করাতে অনুরোধ জানান গভর্নর।
করোনা নিয়ে প্রাথমিক ধারণা ও পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু লিফটের বোতাম স্পর্শ বা করমর্দন করলেই করোনা ছড়ায় না, বাতাস কম চলাচল করা স্থানেও করোনা সহজে ছড়িয়ে পড়ে।
করোনা প্রতিরোধে এখন বেশ কার্যকর টিকা রয়েছে। পাশাপাশি করোনার নিত্যনতুন ধরন দেশে দেশে শনাক্ত হচ্ছে, যেগুলো শুরুর দিকের ধরনের চেয়ে আরও বেশি সংক্রামক।
সায়েন্স অ্যালার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিস্থিতি যতই ভিন্ন হোক না কেন, ভাইরাসটি বুঝতে এবং মানুষের শরীর ভাইরাসের প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় তা অনুধাবনে আজও বিজ্ঞানীদের সহায়তা করছে ইতালির ভো' শহর।
গত বছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে করোনার গণপরীক্ষা হয় ভো'য়ে। পাশাপাশি মে মাসে শহরটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সার্স-কোভ-২-এর অ্যান্টিবডিও পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা।
পরীক্ষায় দেখা যায়, আগে কোনো না কোনো সময় শহরটির প্রায় ৩.৫ শতাংশ মানুষ (প্রায় ১০০ জনের মতো) করোনায় আক্রান্ত হন।
যাদের অ্যান্টিবডি বা সোয়াব পরীক্ষার যেকোনো একটির ফল পজিটিভ এসেছিল, তাদের ফের ওই বছরের নভেম্বরে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে বলা হয়।
এর উদ্দেশ্য ছিল, শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি গড়ে উঠেছে কি না, তা দেখা।
বিজ্ঞানীদের দল গবেষণায় দেখতে পায়, মে মাসে করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসা ৯৮.৮ শতাংশ মানুষ নভেম্বরে অন্তত এক ধরনের অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
এর অর্থ, কমপক্ষে ছয় মাস পর্যন্ত অ্যান্টিবডি তাদের শরীরে ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ৯ মাস পরও তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি থাকার সম্ভাবনা বেশি।
গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ইলারিয়া ডরিগাট্টি বলেন, ‘উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গহীন সংক্রমণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আমাদের চোখে পড়েনি।
‘সেক্ষেত্রে এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, উপসর্গ ও সংক্রমণের তীব্রতার ওপর প্রতিরোধ ক্ষমতার শক্তি নির্ভর করে না।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্য আমাদের গবেষণায় দেখা যায়, অ্যান্টিবডির মাত্রার পার্থক্য কখনো কখনো পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে।
‘পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে ভিন্ন পরীক্ষা ও ভিন্ন সময়ে জনগোষ্ঠীর সংক্রমণের মাত্রা তুলনার সময় সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।’