করোনাভাইরাস মহামারি ও লকডাউনের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে। চরম একাকিত্বে ভুগছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ, বাড়ছে পরিবার-স্বজন-সমাজ ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে তাদের দূরত্ব।
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।
‘এজ অফ এলিয়েনেশন’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘কয়েক দশক ধরে বাড়তে থাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্নতা আর ১৫ মাসের লকডাউনের পর তরুণদের বন্ধুর সংখ্যা কমছে। তারা মানুষের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন এবং অসংখ্য তরুণ আরও বেশি যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন।
‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এ সংখ্যা কেবলই বাড়ছে।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাটিতে দেখা যায়, ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে যাদের একজন বন্ধুও নেই কিংবা একজনই বন্ধু আছেন, এমন মানুষের সংখ্যা গত ১০ বছরে তিন গুণ বেড়েছে। এক দশক আগে এ হার ছিল সাত শতাংশ, যা বর্তমানে ২২ শতাংশ।
আর চার বা ততোধিক বন্ধু আছে, এমন মানুষের সংখ্যা ১০ বছরে ৬৪ শতাংশ থেকে কমে ৪০ শতাংশে নেমেছে।
গবেষণাটি করেছেন থিংক ট্যাংক অনওয়ার্ডের পরিচালক উইল ট্যানার।
তিনি বলেন, ‘তরুণরা একাকিত্বের মহামারিতে ভুগছেন। একাকিত্বের এই সমস্যার সমাধান না হলে এর মারাত্মক পরিণতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। সমাজকে এক সুতোয় বেঁধে রাখার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলব আমরা।’
গবেষণায় দেখা যায়, ২০ বছর আগে ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা কম বলা ও সাহায্য দেয়া-নেয়ার প্রবণতা কম ছিল। ফলে তখনও তাদের মধ্যে আস্থায় ঘাটতি ছিল।
যারা ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্মেছেন এবং যারা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মেছেন, তাদের বেশির ভাগই ধর্মীয় বা দলবদ্ধ কার্যক্রমে অনীহা প্রকাশ করেন।
দেখা যাচ্ছে, বয়স যত কম, অন্যের প্রতি অনাস্থার প্রবণতা তত বেশি। অন্যদিকে ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে আস্থার প্রবণতা বেশি।
গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক লর্ড জেমস ও’ শঘনেসি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে সামাজিক বন্ধনে ক্ষয় শুধু ভৌগোলিক কারণে নয়, এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে।
‘এটি ভীষণ উদ্বেগজনক। সামাজিক বন্ধনের দৃঢ়তা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ভিত্তি, মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির উৎস।’
একাকিত্বের কারণ হিসেবে বলা হয়, ভবিষ্যৎ, কর্মজীবন ও জীবিকা উপার্জন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগা তরুণদের একাকী জীবন বেছে নেয়ার অন্যতম কারণ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ সময় কাটানো সত্ত্বেও ব্যক্তিজীবনে একাকিত্বে ভোগেন বেশির ভাগ তরুণ।