বাংলাদেশের কক্সবাজারের সমুদ্রসীমা থেকে বিশ্বে প্রথমবারের মতো গিটারফিশের একটি নতুন প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের একোয়াটিক বায়োরিসোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকেরা এই প্রজাতিটি শনাক্ত করেন।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় পাওয়া গেছে বলে প্রজাতিটির নাম দেয়া হয়েছে বাংলাদেশি গিটারফিশ (Bangladeshi guitarfish)। দেহের গঠন, বাহ্যিক আকৃতি এবং ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এটি শনাক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে ইউরোপভিত্তিক নেটওয়ার্কিং সাইট রিসার্চগেটে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা নিবন্ধ। এর শিরোনাম ‘ডেসক্রিপশান অফ আ নিউ স্পেসিস অফ জায়ান্ট গিটারফিশ, গ্লুকোসটেগাস ইওনহোলি, ফ্রম দ্য নর্দার্ন বে অফ বেঙ্গল, বাংলাদেশ’।
নিবন্ধটি লিখেছেন মাছটির প্রধান আবিষ্কারক শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবিব এবং সহকারী গবেষক ওই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জায়েদুল ইসলাম।
ড. কাজী আহসান হাবীব জানান, তার পিএইচডি সুপারভাইজার কোরিয়ার সমুদ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. ইওনহোলির নামে মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে গ্লুকোসটেগাস ইওনহোলি (Glaucostegus younholeei)।
মাছটি রাইনোবেটিফরমিস (Rhinopristiformes) বর্গের, গ্লুকোসটেগিডি (Glaucostegidae) পরিবারের এবং গ্লুকোসটেগাস (Glaucostegus) গণের একটি প্রজাতি।
এটি ৭৩০ থেকে ৯৩৩ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। রং হয় বাদামি বা ধূসর। চ্যাপ্টা ধরনের মাছটির মাথা প্রশস্ত। মাথা থেকে ৩১ থেকে ৪০ ডিগ্রি কৌণিকভাবে লেজ পর্যন্ত এটির দেহ ক্রমশ সরু হয়। লেজ বেশ লম্বা।
গ্লুকোসটেগিডি পরিবারের প্রজাতিগুলোকে জায়ান্ট গিটারফিশ (Giant Guitarfish) বলা হয়। নতুন প্রজাতিটিসহ পৃথিবীতে এ পর্যন্ত জায়ান্ট গিটারফিশের আটটি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রজাতি ছাড়া বাকিগুলো সামুদ্রিক লোনা পানিতে বিচরণ করে। তবে লোনা পানির দুটি প্রজাতি মাঝে মাঝে ইষৎ লোনা পানিতে আসে।
ড. কাজী আহসান হাবীব নিউজবাংলাকে জানান, দেখতে গিটারের মতো হওয়ায় এদেরকে গিটারফিশ বলা হয়। আইইউসিএন-এর তথ্য অনুযায়ী, গিটারফিশ এখন মহাবিপন্ন প্রজাতির মাছ।
বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় ডিএনএ বারকোডিংয়ের মাধ্যমে হাঙ্গর ও শাপলাপাতা জাতীয় মাছের প্রজাতি শনাক্ত ও সংরক্ষণ নিয়ে করা একটি গবেষণার সময় বাংলাদেশি গিটারফিশ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে গবেষণাটি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে গত বছরের জুনে শেষ হয়।