বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ ‘ড্রাগন ম্যান’

  •    
  • ২৬ জুন, ২০২১ ১৫:২৬

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের সহ-লেখব ক্রিস স্ট্রিঞ্জার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণ বলছে, নিয়ানডারথালদের তুলনায় হোমো স্যাপিয়েন্সের খুলির মিল বেশি হারবিনে প্রাপ্ত খুলিটির সঙ্গে। তাই নিয়ানডারথালকে মানুষের পূর্বপুরুষ বলে এতোদিন ধারণা করা হলেও এখন আমাদের বিশ্বাস, হারবিনে প্রাপ্ত নমুনাটি মানুষের আরও ঘনিষ্ঠ পূর্বপুরুষ। এটিকে নতুন প্রজাতি ধরা হলে বলতে পারেন এটি মানুষের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রজাতি।’

চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবিষ্কৃত একটি খুলি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সন্ধান মিলেছে মানুষের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পূর্বসূরীর। অর্থাৎ নিয়ানডারথালকেও পেছনে ফেলতে যাচ্ছে নতুন এই প্রজাতি।

চীনা বিজ্ঞানীরা স্থানীয় ভাষায় প্রাচীন মানবের নতুন প্রজাতির নাম দিয়েছেন ‘হোমো লুঙ্গি’, যার ইংরেজি পরিভাষা করলে দাঁড়ায় ‘ড্রাগন ম্যান’।

বিজ্ঞানের পরিভাষায় মানুষ তথা হোমো স্যাপিয়েন্সের আদি রূপ হলো নিয়ানডারথাল। প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে নিয়ানডারথালরা বিলুপ্ত হয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই আবিষ্কারের অর্থ হলো- নিয়ানডারথালের পরে পৃথিবীতে ড্রাগন ম্যানের উদ্ভব। আর তারপর এসেছে মানুষ। অর্থাৎ মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে নিয়ানডারথালের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে ড্রাগন ম্যান।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হেইলংজিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরে ১৯৩০-এর দশকে প্রথম খোঁজ মেলে এই খুলিটির। জাপানের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে বিষয়টি গোপন রাখতে একটু কুয়ায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল সেটি।

প্রায় ৮৫ বছর পর ২০১৮ সালে এটি মাটি খুঁড়ে বের করেন হেবেই জিও ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জি কিয়াং।

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের সহ-লেখব ক্রিস স্ট্রিঞ্জার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণ বলছে, নিয়ানডারথালদের তুলনায় হোমো স্যাপিয়েন্সের খুলির মিল বেশি হারবিনে প্রাপ্ত খুলিটির সঙ্গে। তাই নিয়ানডারথালকে মানুষের পূর্বপুরুষ বলে এতোদিন ধারণা করা হলেও এখন আমাদের বিশ্বাস, হারবিনে প্রাপ্ত নমুনাটি মানুষের আরও ঘনিষ্ঠ পূর্বপুরুষ।

‘এটিকে নতুন প্রজাতি ধরা হলে বলতে পারেন এটি মানুষের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রজাতি।’

গবেষণা সাময়িকী দ্য ইনোভেশনে প্রথম প্রকাশিত হয় এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি।

এতে বলা হয়, খুলিটি কমপক্ষে ১ লাখ ৪৬ হাজার বছরের পুরোনো।

মানুষের মস্তিষ্কের সমানই মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা আছে এতে। তবে এটির চক্ষুগহ্বর মানুষের চেয়ে বেশ বড়, ভ্রূর নিচের হাড় অনেক প্রশস্ত, বড় আকারের মুখ আর তার চেয়েও বড় দাঁত আছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটির সহ-লেখক জি কিয়াং বলেন, ‘মানবদেহের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো হারবিনে প্রাপ্ত খুলিতে আছে। কিন্তু বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি হোমো স্যাপিয়েন্সের সব পূর্বপুরুষের তুলনায় অনেক আলাদা।’

গবেষকদের ধারণা, খুলিটি কোনো পুরুষের। মৃত্যুর সময় সেটির বয়স ছিল ৫০ বছরের আশপাশে। তার বাস ছিল বনাঞ্চলীয় প্লাবণভূমিতে।

ক্রিস স্ট্রিঞ্জার বলেন, ‘এই প্রজাতিটি সম্ভবত শিকারী গোত্রীয় ছিল। স্থলভূমিতে তাদের বাস ছিল। হারবিন শহরের এখনকার যে আবহাওয়া, তাতে মনে হয় নিয়ানডারথালদের চেয়েও ভীষণ শীতল তাপমাত্রার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হতো মানুষের এই পূর্বপুরুষদের।’

কথিত এই ড্রাগন ম্যানরা জটিল আবহাওয়ার কারণে পরবর্তীতে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে বলেও ধারণা গবেষকদের।

গবেষকরা প্রথমে ৬০০’র বেশি বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী খুলিটির বহিরাবণ বিশ্লেষণ করেছেন। এরপর বিভিন্ন সময় সংগৃহীত জীবাশ্মের সঙ্গে ড্রাগন ম্যানের সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে এটির একটি মুখচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে।

স্ট্রিঞ্জার বলেন, ‘হারবিনসহ চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যেসব জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে, সেগুলোর মধ্যে হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে মিল থাকা নিয়ানডারথালের মতো ড্রাগন ম্যানও মানুষের আরেক প্রজাতির পূর্বপুরুষ বলে ধারণা করছি।’

গবেষকদের মতে, ড্রাগন ম্যানের অস্তিত্ব থাকাকালীন যদিও পূর্ব এশিয়ায় হোমো স্যাপিয়েন্সও পৌঁছে থাকে, তাহলে হয়তো হোমো স্যাপিয়েন্স আর ড্রাগন ম্যানের সংকরায়ন ঘটেছিল। অর্থাৎ এই দুই প্রজাতি মিলিত হয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছিল। যদিও এ বিষয়ে নিশ্চিত নন গবেষকরা।

ড্রাগন ম্যানদের সংস্কৃতি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও পর্যাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনার অভাবে নেই সেসব প্রশ্নের উত্তর।

কিন্তু তাও এ গবেষণা মানুষের বিবর্তনের ধারণাকে আরও স্পষ্ট করতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর