করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় হাইব্রিড অ্যান্টিবডি তৈরির পথে আছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, করোনা থেকে এই সুরক্ষা দিতে পারে সম্ভাব্য একটি ন্যাজাল স্প্রে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত একটি ইঁদুরের নাকে স্প্রে করার পর তার ফুসফুসে ভাইরাস উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে।
মহামারির শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টিবডি তৈরির ওপর জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এমন বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবডি শেষ ধাপের পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। কয়েকটি জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদনও পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশে।
তবে অ্যান্টিবডি চিকিৎসার ওপর এখনও তেমন ভরসা করতে পারছেন না অনেক চিকিৎসক।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে টেক্সাস হেলথ সায়েন্স সেন্টার ইউনিভার্সিটির অ্যান্টিবডি প্রকৌশলী ঝিকিয়াং অ্যান জানান, সরাসরি শ্বাসনালিতে অ্যান্টিবডি না দিয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। তাই এটি কার্যকরে উচ্চ ডোজ প্রয়োগ করতে হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবডি প্রয়োগে নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
এ কারণে সরাসরি নাকে প্রয়োগযোগ্য অ্যান্টিবডি তৈরির চেষ্টা করছেন অ্যান ও তার সহকর্মীরা।
তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষের দেহ থেকে নানা ধরনের অ্যান্টিবডি বিশ্লেষণ করেছেন। সেখান থেকে করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে পারা অ্যান্টিবডিগুলো সংগ্রহ করেছেন। এই অ্যান্টিবডিগুলোর মধ্য থেকে ইমিউনোগ্লোবিন জি অ্যান্টিবডি আলাদা করা হয়েছে।
মানবদেহে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হলে খুব ধীরে কাজ শুরু করে এই অ্যান্টিবডি। কিন্তু দেহের বাইরে থেকে প্রবেশ করা ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নিধনে খুব কার্যকর এটি।
ন্যাজাল স্প্রে তৈরিতে ইমিউনোগ্লোবিন জি অ্যান্টিবডি ইমিউনোগ্লোবিন এম অ্যান্টিবডির সঙ্গে যুক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দ্রুত রোধে সহযোগিতা করে ইমিউনোগ্লোবিন এম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুটি ভিন্ন ইমিউনোগ্লোবিনের এই মিশ্রণ করোনাভাইরাসের ২০টির বেশি ধরন ধ্বংসে সক্ষম, যা ইমিউনোগ্লোবিন জি বা ইমিউনোগ্লোবিন এমের পক্ষে একা সম্ভব নয়।
এই মিশ্রণ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ছয় ঘণ্টা আগে এবং ছয় ঘণ্টা পরে ইঁদুরের নাকে সরাসরি ছিটানো হয়েছে।
দুই ক্ষেত্রেই সংক্রমণের দুই দিন পর ইঁদুরের ফুসফুস থেকে ক্ষতিকর ভাইরাসটি বহুলাংশে কমিয়ে ফেলেছে অ্যান্টিবডির মিশ্রণ।
অর্থাৎ ইঁদুরের দেহে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সফল হয়েছে এ পরীক্ষা।
একে বেশ বড় উদ্ভাবন বলে মন্তব্য করেছেন প্যারিসের সোরবন ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলজিস্ট গাই গোরোশোভ। তবে মানবদেহে এই অ্যান্টিবডি কতক্ষণ নিরাপত্তা দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।