সুখ-দুঃখ, আনন্দ, রাগ-ক্ষোভসহ নানা বিচিত্র অনুভূতির মধ্য দিয়ে যান একেকজন মানুষ। অনেক সময় মনের আবেগ-অনুভূতি অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়ার দরকার পড়ে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই আবার পিছিয়ে যান নিরাপত্তাহীনতা বা বিশ্বাসের অভাব কিংবা নিজের অন্তর্মুখী স্বভাবসহ নানা কারণে। তাদের সমস্যার সমাধান হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটের কথা বলছেন একদল প্রযুক্তিবিদ।
প্রযুক্তিবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল টেকক্রাঞ্চের একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে পরিচালিত মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাপ ওয়াইসা দেবে এ সুবিধা।
ওয়াইসার প্রধান নির্বাহী জো আগারওয়াল বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে ব্যক্তির সঙ্গে অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেয়া কঠিন একটি কাজ। রোবটের সঙ্গে কাজটি বেশ সহজ হবে বলেই মনে হয়। যে কোনো রোবট নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অনুভূতিপ্রবণ রোবট এ কাজে মানুষকে সহযোগিতা করবে।’
আগারওয়ালের প্রতিষ্ঠান টাচকিন ইসার্ভিসেজের নকশায় তৈরি হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপ ওয়াইসা। ভারতে ব্যাঙ্গালুরু, যুক্তরাষ্ট্রে বোস্টন আর যুক্তরাজ্যে লন্ডন থেকে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওয়াইসাকে ‘চ্যাটবট’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে টাচকিন ইসার্ভিসেস। বলছে, শব্দের ব্যবহার করে অথবা অ্যাপ ব্যবহারকারীকে ১৫০টি ভিন্ন থেরাপি থেকে একটি বেছে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে ওয়াইসা।
আগারওয়ালের দ্বিতীয় অ্যাপ ওয়াইসা। এর আগে প্রবীণদের জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করেছিলেন তিনি, যা বাজার ধরতে পারেনি। এতে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। তখনই তার মাথায় আসে ওয়াইসা তৈরির বুদ্ধি। ২০১৬ সাল থেকে চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার কাজ শুরু করেন এই প্রযুক্তিবিদ।
চলতি বছরের মার্চে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের ১৭টি অ্যাপের একটিতে উঠে আসে ওয়াইসা। চলতি মাসে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম, বোস্টনের ডব্লিউ হেলথ ভেনচার্স, পি ভেনচার্স ও কাই ক্যাপিটালের মাধ্যমে ৫৫ লাখ ডলারের পৃষ্ঠপোষকতা পেতে সক্ষম হয়েছে অ্যাপটি।
এ পর্যন্ত ৯০ লাখ ডলারের তহবিল পেয়েছে ওয়াইসা। অ্যাপটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। অ্যাপটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ৬০ জন কর্মী। ওয়াইসার সঙ্গে যুক্ত আছেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও।
আগারওয়াল বলেন, ওয়াইসার কাজ মানসিক রোগ শনাক্ত করা নয়। বরং মানুষের মনের কথা জেনে মন ভালো করতে সহযোগিতা করবে অ্যাপটি। মূলত ঘুম ঠিক করতে, বিষন্নতা কমাতে, বা সম্পর্কবিষয়ক পরামর্শ পেতে এর দ্বারস্থ হন ব্যবহারকারীরা।
ওয়াইসার ৩০ লাখ ব্যবহারকারীর মধ্য থেকে মাত্র ১০ শতাংশকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অ্যাপটি। বিষন্নতা ও উদ্বেগবিষয়ক প্রশ্নের উত্তরের ওপর ভিত্তি করে এ পরামর্শ দেয়া হয়।
ওয়াইসার ব্যবহারকারীদের ৬০ শতাংশই চেয়েছেন কেউ তাদের কথা শুনুক এবং সমর্থন করুক।