কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী সার্স-কোভ-২ -এর উৎস নিয়ে আরও অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন ১৮ জন বিশিষ্ট গবেষক। এ সংক্রান্ত এক চিঠি তারা বিজ্ঞানবিষয়ক শীর্ষস্থানীয় সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশ করেন।
লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩ মে প্রকাশিত ওই চিঠিতে গবেষকরা বলেন, করোনার উৎস নিয়ে দুটি তত্ত্ব এখন পর্যন্ত প্রচলিত। একটি হচ্ছে ল্যাব থেকে ভাইরাসটি দুর্ঘটনাবশত ছড়িয়ে পড়ে। আর অন্যটি হলো প্রাণী থেকে প্রাকৃতিকভাবে এটি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। দুটো তত্ত্বেরই বাস্তব ভিত্তি রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তা জানা জরুরি। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের মহামারির ঝুঁকি নিরসনে বৈশ্বিক কৌশল গ্রহণ সুবিধাজনক হবে।
সায়েন্সে প্রকাশিত চিঠি সম্পর্কে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার উৎস নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলের প্রতি অনুসন্ধানের আহ্বান এ প্রথম নয়। এর আগেও এ নিয়ে কথা হয়েছে।
তবে সেসব ক্ষেত্রে একদল প্রচলিত দুই তত্ত্বের একটিতে সমর্থন জানিয়েছে আর অন্যদল অন্য তত্ত্বে। করোনার উৎস নিয়ে আরও অনুসন্ধানের ডাক দেয়া এবারের গবেষকেরা কোনো তত্ত্বের দিকে না ঝুঁকে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছেন।
তাদের ভাষ্য, যেসব প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তার কোনোটিই কোনো একটি তত্ত্ব সমর্থনে যথেষ্ট নয়।
চিঠির সামনের সারির লেখক ও যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ফ্রেড হাচিংসন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক জেসি ব্লুম বলেন, ‘আমি মনে করি, সার্স-কোভ-২-এর উৎস সম্পর্কে যেসব আলোচনা হয়েছে তার বেশির ভাগই নিজস্ব মতামত নিয়ে খুবই নিশ্চিত অল্প কয়েকজন মানুষের কাছ থেকে এসেছে।’
চিঠির অন্য লেখকরা হলেন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ডেভিড রেলম্যান, নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির এপিডেমিওলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক র্যালফ ব্যারিক।
এর আগে লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, করোনা মহামারি রূপ ধারণ করার পরপরই সার্স-কোভ-২-এর উৎস নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ভাইরাসটি ঠিক কীভাবে এসেছে, তা হয়তো কখনো নির্ভুলভাবে জানা যাবে না।
চলতি বছরের শুরুর দিকে চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিলে সার্স-কোভ-২ এর উৎস অনুসন্ধানে প্রায় মাসব্যাপী কাজ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞ দল। মার্চের দিকে দলটি তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, বন্য প্রাণী থেকে মধ্যবর্তী বাহকের মাধ্যমে মানবদেহে করোনার সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ল্যাবের দুর্ঘটনার কারণে ভাইরাসটির সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েকটি দেশ ডব্লিএইচওর প্রতিবেদনের সমালোচনা করে। তাদের ভাষ্য, প্রতিবেদনটিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি এটি অসম্পূর্ণ তথ্য সংবলিত।
সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত চিঠিতে গবেষকেরা বলেন, ‘করোনার উৎস নিয়ে যথাযথ অনুসন্ধান স্বচ্ছ, বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যবহুল ও স্বার্থের বাইরে হতে হবে।’