হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ড্রপলেট এবং ভাইরাস সংক্রমিত হাত দিয়ে নাকমুখ স্পর্শ ছাড়াও বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম শ্বাসতন্ত্রীয় অণুকণার (ড্রপলেট) মাধ্যমেও করোনা ছড়াতে পারে স্বীকার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দেশটির আরেকটি সংবাদমাধ্যম ইনসাইডার এর প্রতিবেদনেও এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে সিডিসি প্রথমবারের মতো কোভিড ১৯ এর জন্য দায়ী সার্স কোভ ২ ভাইরাসের বায়ুবাহিত বৈশিষ্ট্য স্বীকার করে নিলো।
এর আগে গত মাসে চিকিৎসাবিষয়ক প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ছয় বিশেষজ্ঞের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। ওই নিবন্ধে দাবি করা হয়, করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত হওয়ার কারণেই প্রচলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না।
ওই নিবন্ধ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে প্রায় দেড় বছরের অবস্থানে পরিবর্তন আনল সিডিসি। করোনাভাইরাস কেবল স্বল্প দূরত্বের মাঝে সংক্রমিত করতে সক্ষম, এমন দাবি থেকে সরে এসে প্রতিষ্ঠানটি এখন বলছে, ছয় ফুটের বেশি দূরত্বেও সংক্রমিত করতে পারে এই ভাইরাস।
করোনাভাইরাসের ‘বায়ুবাহিত’ বৈশিষ্ট্য মেনে নিয়ে সিডিসি তাদের নির্দেশিকাতেও পরিবর্তন এসেছে। শুক্রবার হালনাগাদ করা নতুন গাইডলাইনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস আক্রান্তের নিঃশ্বাসের সঙ্গে বের হওয়া এবং বাতাসে ভাসতে সক্ষম খুবই ছোট ড্রপলেট ও পার্টিকেলের মাধ্যমেও অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন।
সিডিসির হালনাগাদ গাইডলাইনের একটি লাইনে বলা হয়েছে, ভাইরাসটি বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ ড্রপলেট ও অ্যারোসল পার্টিকেলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে বলে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে ছয় ফুটের বেশি দূরত্বে থাকলেও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আরও পড়ুন: করোনা বায়ুবাহিত, আবদ্ধ জায়গায় সংক্রমণ বেশি: গবেষণাসিডিসির নতুন গাইডলাইন প্রকাশের পর বাতাসে ভাসমান কণা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ লিনসে মার বলেন, ‘অবশেষে সিডিসি সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ স্বীকার করে নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা করোনা ছড়ানো নিয়ে সমস্যাজনক ধারণা ত্যাগ করল।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই বলছে, করোনাভাইরাস মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে নিকটজনের কাছে ছড়ায়। এজন্য, হাঁচি-কাশি আক্রান্তদের কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, আক্রান্তদের চিহ্নিত করে আইসোলেশনসহ বেশকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। এছাড়া, কোভিড ১৯ সংক্রমণের মাত্রা কমাতে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কৌশলও নেয়া হচ্ছে।
গত এপ্রিলে ল্যানসেটে প্রকাশিত নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ছয় বিশেষজ্ঞ অবিলম্বে করোনাভাইরাস মোকাবিলার প্রচলিত পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।
গবেষক দলের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের ডিপার্টমেন্ট অফ কেমেস্ট্রি অ্যান্ড বায়োকেমেস্ট্রির অধ্যাপক হোসে লুইস জিমেনেজ বলেন, ‘বাতাসের মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ আমাদের চমকে দিয়েছে। আমরা আরও প্রমাণ পেয়েছি, বড় ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ বলতে গেলে একদম নেই। ’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্য জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উচিত নতুন বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে গ্রহণ করা, আর সেটা ঘটলে বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনার উপায়ের দিকে সবাই মনোযোগ দিতে পারবে।’
গবেষক দলটি তাদের দাবির সপক্ষে ১০টি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে গত বছরের মার্চে ওয়াশিংটনের একটি চার্চে ভয়ঙ্কর সংক্রমণের ঘটনা, যেখানে একজনের থেকেই ৫৩ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় দীর্ঘ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংক্রমিত মূল ব্যক্তির কাছাকাছি না থেকেও বাকিরা কোভিড ১৯ সংক্রমিত হয়েছিলেন। সেখানে বদ্ধ পরিবেশে বাতাসের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়েছিল বলে ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।