নিয়ন্ত্রণ হারানো ২১ টন ওজনের চীনা রকেট লং মার্চ ফাইভবি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে পারে শনিবার। জনবসতিপূর্ণ কোনো এলাকায় সেটি বিধ্বস্ত হতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীতে রকেটটির প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ। কিন্তু ঠিক কোথায় এটি ভূপাতিত হবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
নিয়ন্ত্রণ হারানো রকেটটির প্রতিদিনের অবস্থান প্রকাশ করা হচ্ছে স্পেস ট্র্যাক অ্যাপে। নতুন তথ্য পেলেই তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাইক হাওয়ার্ড।
তিনি বলেন, ‘রকেটটির অবস্থান সম্পর্কে জানতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে ৮ মে’র কোনো এক সময়ে পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে রকেটটি। কিন্তু এখনও বোঝা যাচ্ছে না যে সেটি বায়ুমণ্ডলের ঠিক কোন অংশ থেকে পৃথিবীতে ঢুকবে।’
অন্যান্য স্যাটেলাইট ট্র্যাকারও ১০০ ফুট লম্বা ও ১৬ ফুট চওয়া রকেটটি শনাক্ত করেছে।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাইনান প্রদেশের ওয়েনশ্যাং স্পেস লঞ্চ সেন্টার থেকে বৃহস্পতিবার উৎক্ষেপণ করা হয় লং মার্চ-ফাইভবি রকেট। সেই রকেটটিরই একটি অংশ এটি।
বলা হচ্ছে, প্রতি সেকেন্ডে চার মাইলের বেশি গতিতে ছুটে আসছে রকেটটি। এ গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর দুই ঘণ্টারও কম সময়ে ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানতে সক্ষম সেটি।
হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টারের অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের গবেষক জোনাথন ম্যাকডোয়েল দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, রকেটটির গতিপথ সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। শেষবার চীন একই প্রযুক্তির একটি রকেট ছোঁড়ার পর অনেকগুলো বড়, লম্বা রড আকাশে ছড়িয়ে পড়েছিল। আইভরি কোস্টের বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলোর আঘাতে। বেশিরভাগই অবশ্য বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে পুড়ে গিয়েছিল। যে কয়েকটা ভূপৃষ্ঠে আঘাত হেনেছিল, তাতে যে কেউ আঘাত পাননি- এটাই অনেক।’
চলতি সপ্তাহেই ম্যাকডোয়েল জানান যে রকেটটির মূল কাঠামো অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ভূপৃষ্ঠে আঘাত করার আগে নিউইয়র্ক থেকে মাদ্রিদের সমান দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এটি। সুদূর চিলি বা নিউজিল্যান্ডে গিয়েও ভূপাতিত হতে পারে।
তবে পৃথিবীতে আঘাত করার আগেই বায়ুমণ্ডলে এর অনেকটা অংশ পুড়ে যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। যে অংশগুলো না পুড়ে আস্ত থেকে যাবে সেগুলো সাগর কিংবা মরু অঞ্চলে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কিন্তু জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অংশগুলোর আছড়ে পড়া এবং ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
২০২২ সালের মধ্যে মহাকাশে চীনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ স্টেশন চালুর লক্ষ্যে গত ২৯ এপ্রিল রকেটটির মাধ্যমে তিয়ানহে মডিউল পাঠায় বেইজিং, যাতে নভোচারীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচির সবশেষ অগ্রগতি এটি।
চলতি বছরের মধ্যেই আরও অনেক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এ ধরনের কমপক্ষে ১০টি মডিউল কক্ষপথে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে বেইজিংয়ের।
বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা একমাত্র মহাকাশ স্টেশন আইএসএসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এতে অংশ নিতে দেয়া হয়নি চীনকে।
২০২৪ সালেই মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আইএসএসের। ধারণা করা হচ্ছে, এরপর পৃথিবীর কক্ষপথে একমাত্র মহাকাশ স্টেশনটি হবে চীনের।
আকারে এটি আইএসএসের চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু এতে মহাকাশ গবেষণাগারের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে চীনের।