কোভিড ১৯ মহামারি গত বছরের শুরুতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এই রোগের জন্য দায়ী করোনাভাইরাসটি ক্রমাগত রূপ বদলাচ্ছে। ফলে একে মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে গোটা বিশ্ব। এবার করোনাভাইরাসটির ৩৪ বার জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) ঘটানো একটি ধরন আতঙ্কিত করছে বিশেষজ্ঞদের।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় শনাক্ত হয়েছে সার্স কোভ ২ এর এই নতুন ধরন। এটি করোনা মহামারিকে আরও দীর্ঘ করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক অনলাইন প্রি-প্রিন্ট জার্নাল মেডআর্কাইভে এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসটির তুলনায় তানজানিয়ায় শনাক্ত সার্স কোভ ২ এর এই ধরনটির জিনগত বৈশিষ্ট্য অনেকটাই আলাদা। উহানের ভাইরাসটির ৩৪ বার জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভব হয়েছে এ.ভিওআই.ভিটু নামের এই নতুন ধরনটির।
গবেষণায় দেখা গেছে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ধরনের চেয়েও জিনগতভাবে আলাদা তানজানিয়ান ভাইরাসটি।
গত ফেব্রুয়ারিতে তানজানিয়া থেকে বিমানে চড়ে অ্যাঙ্গোলায় যাওয়ার পর তিন পর্যটকের দেহে প্রথম শনাক্ত হয় এই ভাইরাস।এরপর গবেষণাগারে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, ৩৪ বার জিনগত পরিবর্তন ঘটেছে ভাইরাসটির। এর মধ্যে ১৪টি পরিবর্তনই ঘটেছে ভাইরাসের বহিঃআবরণের প্রোটিন স্পাইকে।
এই স্পাইকের সাহায্যেই করোনাভাইরাস মানুষের শ্বাসতন্ত্রের কোষে প্রবেশ করে অসুস্থতা তৈরি করে।
এর আগে ব্রাজিলে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনে সর্বোচ্চ ১৮ বার জিনগত পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার ১০টি পরিবর্তন ঘটেছে স্পাইক প্রোটিনে। আর যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনায় সর্বোচ্চ ১৭ বার ও স্পাইক প্রোটিনে আটটি পরিবর্তন পাওয়া গেছে।
করোনাভাইরাসের তানজানিয়ান ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলা-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টুলিও ডে অলিভিয়েরা।
তিনি বলছেন, এখন পর্যন্ত সার্স কোভ টু-এর যতো নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এই তানজানিয়ান ভ্যারিয়েন্টটি সবচেয়ে বেশি আলাদা বৈশিষ্টের। অর্থাৎ আদি সার্স কোভ টু-এর সঙ্গে এর মিল সবচেয়ে কম।
তানজানিয়ান ভ্যারিয়েন্ট কতটা বিপজ্জনক, সে বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার বলে মনে করছেন গবেষকরা। তবে তারা বলছেন, এই নতুন ধরনটিতে ইফোরএইটফোর নামে একটি মিউটেশন হয়েছে, যেই মিউটেশন ব্রাজিলের পিওয়ান ভ্যারিয়েন্টেও দেখা গেছে। এ ধরনের মিউটেশনের ফলে করোনাভাইরাসের মধ্যে মানবদেহে টিকা ও অ্যান্টিবডির মাধ্যমে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়।
আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা অপর্যাপ্ত। পর্যাপ্ত নয় জেনেটিক স্যাম্পলিংও। বিশেষ করে তানজানিয়ায় করোনাভাইরাসবিষয়ক তথ্য ভীষণ অপ্রতুল।