মানুষের দেহের কোষ বানরের ভ্রূণে যুক্ত করে গবেষণাগারে প্রথমবারের মতো তৈরি হলো সংকর প্রাণীর প্রাথমিক ভ্রূণ।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার অংশ হিসেবে ভেড়া, শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণীর ভ্রূণে মানবকোষ প্রবেশ করানোর ইতিহাস থাকলেও বানরের ক্ষেত্রে এটি প্রথম সফল পরীক্ষা।
এ ধরনের গবেষণা প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ঘাটতি মেটানোর সূচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই বানরের ভ্রূণে মানবকোষের সফল স্থাপনকে মাইলফলক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
চলতি সপ্তাহে জীববিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘সেল’-এ প্রকাশ হয় এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ছোট লেজের ম্যাকাক বানরের ভ্রূণে ইনজেকশনের মাধ্যমে মানুষের কোষ ঢুকিয়ে দেন গবেষকরা। এরপর ভ্রূণটির বেড়ে ওঠা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন তারা। মানুষ ও বানরের কোষ বিভক্ত হয়ে একসঙ্গে বিকশিত হতে দেখেন তারা।
নিষিক্ত হওয়ার পর ১৯ দিন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল পরীক্ষামূলক তিনটি ভ্রূণ।
এ পরীক্ষায় বানরের ভ্রূণে প্রবেশ করানো হয়েছিল মানুষের ‘স্টেম সেল’। এ কোষ দেহের পেশি থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোষে রূপ নিতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একদল গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার সালক ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল স্টাডিজে এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক হুয়ান কার্লোস ইজপিসুয়া বেলমন্ট।
তিনি জানান, গবেষণায় প্রাপ্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হলো মানবকোষযুক্ত প্রতিটি ভ্রূণের বিকাশ হয় বিভিন্ন মাত্রায়। কোষগুলো উৎস অনুযায়ী আলাদা হয়ে যায়।
মানুষ ও অন্য প্রাণীর সংকর করাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় কাইমেরাস। বিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের গবেষণার সাহায্যে মানবদেহের প্রাথমিক বিকাশ, রোগের বিস্তার, বার্ধক্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের গভীরে যাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এবং মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরিতে সহায়ক এ গবেষণা।
২০১৭ সালে বিজ্ঞানীদের এই দলটিই ভেড়া, শূকর ও গরুর ভ্রূণে মানবকোষ এবং ধেড়ে ইঁদুরের ভ্রূণে নেংটি ইঁদুরের কোষ প্রবেশ করানোর খবর দিয়েছিলেন।
এ গবেষণা উসকে দিয়েছে বিতর্ক। বৈজ্ঞানিক গবেষণার অংশ হিসেবে এ ধরনের পরীক্ষার নৈতিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত খোদ বিজ্ঞানীরাই।
বিরোধীরা বলছেন, এ গবেষণায় ভ্রূণটিকে ২০ দিন বাঁচিয়ে রাখা হলেও পরবর্তী সময়ে অন্য বিজ্ঞানীরা হয়তো আরও দীর্ঘ সময় এ ধরনের ভ্রূণ তৈরি করে গবেষণা করবেন।
তারা মনে করছেন, মানবদেহ কিংবা আংশিক অমানব সংকরের ওপর কাটাছেঁড়া মানবিকতার নীতিবহির্ভূত।