প্লাজমা ডোনেশন ও রেমডিসিভির ওষুধের অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু পোস্ট দিয়েছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। তবে করোনা চিকিৎসায় এসবের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, করোনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসায় রেমডিসিভির উপকারী, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ডব্লিউএইচওর নির্দেশনা কমিটির সুপারিশ, যতই অসুস্থ হোক না কেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের রেমডিসিভিরের দরকার নেই। এটি ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনীয়তা কমায় না।
প্লাজমা থেরাপির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। জীবন বাঁচাতে এটিও তেমন উপকারী নয়। গত বছর করোনা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাই দেখা গেছে।
তাহলে কোভিড রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো প্লাজমা থেরাপি বা রেমডিসিভির সুপারিশ করে কেন?
এ বিষয়ে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক ড. নীরাজ নিশ্চল দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি বা রেমডিসিভির কোনো ম্যাজিক বুলেট নয়।
‘রেমডিসিভিরকে ঘিরে এক ধরনের হুজুগ তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েকটি ট্রায়ালে দেখা গেছে, করোনায় মৃত্যু ঠেকাতে এটির তেমন কোনো ভূমিকা নেই। সবার জন্য ওষুধটি দরকারিও না। চিকিৎসার শুরুতেই অক্সিজেনের প্রয়োজন, এমন বিশেষ রোগীদের ক্ষেত্রেই কেবল রেমডিসিভির ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
‘রেমডিসিভিরের জন্য তাই তাড়াহুড়োর কিছু নেই। প্লাজমা থেরাপির বিষয়েও একই কথাই বলব। এটিও সবার জন্য নয়। এই বার্তা জোরে ও সুস্পষ্টভাবে সবার কাছে যাওয়া উচিত।’
দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এসপি ব্রত বলেন, করোনায় গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের কদাচিৎ রেমডিসিভির দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রেমডিসিভিরের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে। দেশে এই ওষুধের মজুত খুব বেশি নেই। অল্প সময়ের ভেতরে কীভাবে আক্রান্তের স্বজনেরা এটি জোগাড় করবে? জরুরি কিছু প্রয়োজনে রেমডিসিভির ব্যবহারে সুপারিশ করা হয়। একই কথা প্লাজমা থেরাপির বিষয়েও। কারণ করোনা চিকিৎসায় কোনো ওষুধ নেই। এটি সারাতে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। এ অবস্থায় প্লাজমা ব্যবহার করা হয়।’
দিল্লির আরেকটি হাসপাতালও একই বক্তব্য দেয়। তাদের স্টকে রেমডিসিভির নেই। আক্রান্তের স্বজনদেরও এটি বন্দেবস্ত করতে বলা হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে করোনার চিকিৎসা সেকেলে। কার্যকর নয় বলেও প্রমাণিত। প্লাজমা থেরাপি বা রেমডিসিভির কোনোটিই আমরা এখন পর্যন্ত ব্যবহার করিনি।’
দিল্লির বিএলকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বুক ও শ্বাসযন্ত্রের রোগবিষয়ক চিকিৎসক ডা. সন্দীপ নায়ার বলেন, মাঝারি ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসায় রেমডিসিভির দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের নীতি অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের যাদের অসুস্থতা ততটা তীব্র নয়, তাদের ভর্তি করা হয় না। তাই বেশির ভাগ রোগীই রেমডিসিভির নিতে পারেন। নির্বাচিত রোগীদের সতর্কতার সঙ্গে প্লাজমা চিকিৎসা দেয়া হয়। সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে উপসর্গ ধরা পড়া করোনায় মাঝারি আক্রান্ত রোগীরা এই চিকিৎসায় উপকার পান।’