সাড়ে ছয় কোটির বেশি বছর আগে বিশাল আকৃতির একটি গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীর বুক থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বলা হচ্ছে, সেই গ্রহাণুর আঘাতই সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল অ্যামাজনের জন্মের কারণ।
পানামার স্মিথসনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা করেছেন এমন দাবি।
নিউ সায়েন্টিস্ট ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপে কোটি কোটি বছর আগে আঘাত হেনেছিল গ্রহাণুটি। মেক্সিকো উপসাগর ও ক্যারিবীয় সাগরের মধ্যবর্তী দ্বীপাঞ্চলটি দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম রেইনফরেস্ট।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রহাণুর আঘাতের আগে যে রকম গাছপালা ছিল অঞ্চলটিতে, এখনকার প্রাকৃতিক পরিবেশ তার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সাড়ে ছয় কোটি বছর আগের আর পরের পরিবেশে ভিন্নতা স্বাভাবিক হলেও মনে করা হচ্ছে যে এখনকার পরিবেশের সূচনা হয়েছিল গ্রহাণুর আঘাত থেকেই।
গবেষক কার্লোস জারামিলো বলেন, ‘গ্রহাণুটি ভূপাতিত হওয়ার আগের দিনগুলোতে ফিরে গেলে দেখা যাবে এখনকার বনাঞ্চলটি সে সময় এক ধরনের উন্মুক্ত চারণক্ষেত্র ছিল। পুরো অঞ্চলটি প্রচুর ফার্ন, কাঁটাজাতীয় ঝোপঝাড় আর ডাইনোসরে ভর্তি ছিল। আর এখন যে সমৃদ্ধ বনাঞ্চলটি আমরা দেখি, সেটি ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগের একটি ঘটনার ফসল।’
জারামিলো ও তার সহকর্মীরা ফসিলে পরিণত হওয়া হাজার হাজার প্রাগৈতিহাসিক পরাগ ও পাতার নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। দক্ষিণ আমেরিকায় সেগুলোর অস্তিত্ব ছিল গ্রহাণুটির আঘাতের ঠিক আগেই।
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রহাণুর আঘাতের প্রভাবে অঞ্চলটিতে গাছপালার বৈচিত্র্য কমে গিয়েছিল ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত, যা পুনরুদ্ধার হতে লেগেছে কোটি বছর।
ফসিলে পরিণত পাতায় পোকামাকড়ের কামড় থেকে প্রমাণ মিলেছে যে বৈচিত্র্য এসেছে অ্যামাজনের কীটপতঙ্গেও।
গ্রহাণুর আঘাতের আগে যেসব ত্রিকোণাকার ছোট গাছপালা আর ফার্ন ছিল, গ্রহাণুর আঘাতে সেগুলো প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর অঞ্চলটিতে আধিপত্য ছিল এক ধরনের ফুল গাছের।
গবেষকদের মতে, প্রকৃতিতে বড় ধরনের কোনো আকস্মিক পরিবর্তন এলে তা গোটা বাস্তুতন্ত্রকেই পাল্টে দেয়।