মহাকাশে দীর্ঘদিন অবস্থান ও দীর্ঘ সময় ধরে সাঁতার কাটলে হৃদপিণ্ড সংকুচিত হতে পারে।
মহাকাশচারী স্কট কেলি ও অ্যাথলেট বেনোয়া লুকোন্টকে নিয়ে করা গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণার বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুইটি কাজের মাধ্যমেই হৃদপিণ্ডের ওপর লোড কমে, যার ফলে অঙ্গটির সংকোচন ঘটে। উভয় ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডে পরিবর্তন ঠেকাতে শারীরিক ব্যায়াম খুব একটা সহায়ক ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস শহরের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস সাউথওয়েস্টার্ন মেডিক্যাল সেন্টার এ সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন ইন্টারনাল মেডিসিনের অধ্যাপক ড. বেঞ্জামিন লেভাইন। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সার্কুলেশনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়।
মহাকাশে দীর্ঘ সময়ের যাত্রাগুলোর ওপর এ গবেষণার প্রভাব থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামী দশকগুলোতে মঙ্গল গ্রহে অভিযান আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে নাসার।
অধ্যাপক লেভাইন বলেন, ‘অনেক বছরের গবেষণা শেষে আমরা যে বিষয়টি জানতে পেরেছি, সেটি হলো আমাদের হৃদপিণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে প্লাস্টিক ধাঁচের। এ কারণে যেকোনো ধরনের ভারের সঙ্গে এটি খাপ খাইয়ে নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাধ্যাকর্ষণের উল্টো দিকে গিয়ে মহাকাশ ফ্লাইটগুলোতে রক্ত উপরের দিকে পাম্প করা লাগে না।’
মহাকাশে দীর্ঘসময় অবস্থানের প্রভাব শরীরে কেমন পড়ে, তা গবেষণা করতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ৩৪০ দিন কাটান স্কট কেলি।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৫ জুন প্রশান্ত মহাসাগরে সাঁতার কাটা শুরু করেন বেনোয়া লুকোন্ট। ১৫৯ দিনে ২ হাজার ৮২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন তিনি।
দীর্ঘ সময় ধরে সাঁতার হৃদপিণ্ডের ভারে পরিবর্তন ঘটায়। মাধ্যাকর্ষণের কারণে এটি ঘটে। কারণ সাঁতারু উল্লম্ব অবস্থানের চেয়ে আনুভূমিক অবস্থানেই থাকেন বেশি।
দৈনিক গড়ে ৫.৮ ঘণ্টা সাঁতার কাটেন লুকোন্ট। প্রতি রাতে ঘুমাতেন প্রায় আট ঘণ্টা। এর অর্থ দৈনিক ৯ থেকে ১৭ ঘণ্টা চিৎ হয়ে থাকতেন তিনি।
মহাকাশ ফ্লাইট নকল করতে বিজ্ঞানীরা কখনো কখনো বিছানায় বিশ্রাম নিয়ে গবেষণা করেন। কারণ বিছানায় শুয়ে থাকলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত গ্রেডিয়েন্ট পুরোপুরি লোপ পায়, যা হৃদপিণ্ডে ভার রাখে। তবে লেভাইনের ভাষ্য, উপুড় হয়ে পানিতে ডুব দেয়া কক্ষপথে থাকার চেয়ে ভালো উদাহরণ।
তিনি বলেন, ‘এখন পা থেকে মাথা পর্যন্ত গ্রেডিয়েন্ট থেকে সরিয়ে এনে ওই ব্যক্তিকে পানিতে ছেড়ে দেন। এর মাধ্যমে আপনি ওই গ্রেডিয়েন্টও সমন্বয় করতে পারবেন। এটা অনেকটা মহাকাশে থাকার মতোই।
‘মহাকাশ ও পানি—দুই ক্ষেত্রেই ব্যক্তি রক্ত উপরের দিকে পাম্প করছেন না। এতে উভয় ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডে ভর কমতে শুরু করে।’
গবেষণা সহযোগী জেমস ম্যাকনামারা বলেন, ‘সাঁতারের পর চার বা পাঁচ মাসের মধ্যে লুকোন্টের হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ ভর কমে যায়। গত এক বছরে ক্যাপ্টেন কেলির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ১৯ ও ২৭ শতাংশ ভর কমতে দেখা যায়।’
গবেষণায় এও বলা হয়েছে, শারীরিক ব্যায়াম হৃদপিণ্ডের ভর কমানো ঠেকাতে পারে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন নভোচারীদের পেশি ও হাড় ক্ষয় রোধে ব্যায়াম করার কথা বলে। তবে ব্যায়ামের পরও ক্যাপ্টেন কেলির হৃদপিণ্ডে সংকোচন ঠেকানো যায়নি।