বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার পর ‘সুপারবাগ’ মহামারি?

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২১ ১৪:২৭

জ্বর ও ঠাণ্ডাবোধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সুপারবাগ থেকে সৃষ্ট সংক্রমণের কোনো উপসর্গ নেই। জ্বর বা ঠাণ্ডা লাগলে ওষুধ খেয়েও প্রতিকার পাওয়া যায় না বরং এটি মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

ভারতে একটি ‘সুপারবাগ’ ছত্রাকের সন্ধান পাওয়া গেছে। গবেষকেরা বলছেন, এ সুপারবাগ বিশ্বজুড়ে পরবর্তী ভয়াবহ মহামারির কারণ হতে পারে। ভারতের দূরবর্তী সমুদ্র সৈকতে প্রথমবারের মতো সুপারবাগটির (একাধিক ওষুধ প্রতিরোধী অর্গানিজম) হদিস পেয়েছেন গবেষকেরা।

‘সুপারবাগ’ হিসেবে পরিচিত ক্যানডিডা অরিস বা সংক্ষেপে সি. অরিস জীবাণু ছত্রাকবিরোধী চিকিৎসা প্রতিরোধে সক্ষম। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এমবায়োতে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

দ্য সানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি সি. অরিস জীবাণুর ব্যাপক সংক্রমণে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

কোথায় কীভাবে পাওয়া গেল ‘সুপারবাগ’

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, পাথুরে তীর, জোয়ারের পানি আসা জলাভূমি, ম্যানগ্রোভ জলাভূমিসহ আটটি জায়গা থেকে মাটি ও পানির ৪৮টি নমুনা সংগ্রহ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অনুরাধা চেীধুরীর নেতৃত্বের এক দল। শুরু হয় ওইসব নমুনাকে ঘিরে গবেষণা।

গবেষকেরা দুটি জায়গার সি. অরিস জীবাণু পৃথক করেন। একটি লবণাক্ত জলাভূমি যেখানে মানুষের যাতায়াত নেই, অন্যটি সৈকত যেখানে জনসমাগম রয়েছে।

অনুরাধার বরাত দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্স জানায়, নমুনাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, সৈকত থেকে সংগ্রহ করা সি. অরিসের সবই একাধিক ওষুধ প্রতিরোধী। হাসপাতালে পাওয়া ধরনের সঙ্গে এদের মিল রয়েছে।

লবণাক্ত জলাভূমির সি. অরিসের একটি নমুনা ড্রাগ প্রতিরোধী ছিল না। এ ছাড়া উচ্চ তাপমাত্রায় অন্য সি. অরিস জীবাণুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকলেও ওই নমুনার বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে ধীর ছিল। এতে প্রতীয়মান হয়, লবণাক্ত জলাভূমির ওই নমুনা সি. অরিসের আরও ভয়ঙ্কর ধরন হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের মলিকুলার মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আর্তুরো ক্যাসাডেভাল বলেন, অন্যান্য নমুনা মানুষসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদেহের উচ্চ তাপমাত্রায় অভিযোজিত হতে সক্ষম হলেও লবণাক্ত জলাভূমির ওই নমুনা হয়তো এখনও দেহের উচ্চ তাপমাত্রায় অভিযোজিত হতে পারেনি।

লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সি. অরিস প্রাকৃতিকভাবে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জেই বাস করে বা ওখান থেকেই এর উৎপত্তি, তা গবেষণায় এখনও প্রমাণিত হয়নি। হতে পারে মানুষের মাধ্যমে ওই জায়গায় জীবাণুটি পৌঁছেছে।

উপসর্গ কী

দ্য সানের প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বর ও ঠাণ্ডাবোধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সুপারবাগ থেকে সৃষ্ট সংক্রমণের কোনো উপসর্গ নেই। জ্বর বা ঠাণ্ডা লাগলে ওষুধ খেয়েও প্রতিকার পাওয়া যায় না বরং এটি মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

ক্ষতের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশের আগে সি. অরিস জীবাণু চামড়ায় অবস্থান করে। একবার এটি রক্ত প্রবাহে ঢুকতে পারলে ভয়ানক অসুস্থতা দেখা দেয়, যা পরে সেপসিসে রূপ নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বছরে ১ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষ সেপসিসে মারা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সুপারবাগটি রক্ত প্রবাহজনিত গুরুতর সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যেসব রোগীর ক্যাথেটার, ফিডিং টিউব বা ব্রিদিং টিউবের দরকার পড়ে, তাদের ক্ষেত্রে এ জীবাণু বেশ সক্রিয়।

লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসা কঠিন হতে পারে। কারণ জীবাণুটি সবসময়ই একাধিক ছত্রাকবিরোধী ওষুধ প্রতিরোধী হয়। এ ছাড়া এটি পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর উপরিতলে দীর্ঘদিন অবস্থান করতে পারে।

সংক্রমণের কারণ

সি. অরিস জীবাণু সংক্রমণের কারণ এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য।

তাদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা সি. অরিস জীবাণু বন্য জায়গায় উচ্চ তাপমাত্রায় অভিযোজন হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে সি. অরিস ছত্রাক সহজে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। সাধারণত মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ছত্রাক এতে বেঁচে থাকতে পারে না।

ভবিষ্যৎ মহামারি কী দোরগোড়ায়

গত বছর কানাডার ম্যাকগিল ইউনির্ভাসিটির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ডনাল্ড শেপার্ড এক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যে সি. অরিস জীবাণু রয়েছে তা প্রমাণিত। কারণ লন্ডনে ডায়াবেটিকে ভোগা রোগীদের ফুট আলসারে ছত্রাকটি পাওয়া গেছে। ভারতেও এর উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে।

এক দশক আগে হাসপাতালে সি. অরিস জীবাণু প্রথম পাওয়া যায়। ২০০৯ সালে জাপানের এক রোগীর দেহে প্রথম এ রহস্যময় সুপারবাগ ছত্রাক আবিষ্কৃত হয়।

২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে প্রায় ২৭০ জন ব্যক্তির দেহে সি. অরিস জীবাণুর সংক্রমণ পাওয়া যায়।

করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী মহামারি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। জনস হপকিন্স স্কুলের অধ্যাপক আর্তুরো ক্যাসাডেভাল বলেন, করোনার ভয়াবহতা দেখে মানুষ হতবাক হয়েছিল। সি. অরিস জীবাণু নিয়ে শঙ্কা সত্য হলে তা নিয়ে কাজ করা জরুরি, যাতে সম্ভাব্য আসন্ন মহামারি নিয়ে বিশ্ববাসী অবাক না হয়।

এ বিভাগের আরো খবর