বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সহজাত ভীতি নেই তাদের

  •    
  • ১৬ মার্চ, ২০২১ ১৬:১১

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের (ইউএনএসডব্লিউ) গবেষণাটিতে দেখা যায়, আফ্যান্টেসিয়া নামের এই মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যারা যান তারা ভীতিকর মানসিক চিত্র কল্পনা করতে পারেন না। এ কারণে চট করে তাদের ভয়ের গল্প বা ভয়ংকর কিছু বলে ভয় পাওয়ানো যায় না।

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোর একটি ভয়। জন্মের পর থেকেই যে কয়েকটি সংবেদনশীলতার সঙ্গে পরিচিত হয় মানুষ, ভয় তার অন্যতম। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ এক মানসিক অবস্থার কারণে ভয় পান না কিছু মানুষ।অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের (ইউএনএসডব্লিউ) গবেষণাটিতে দেখা যায়, আফ্যান্টেসিয়া নামের এই মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যারা যান তারা ভীতিকর মানসিক চিত্র কল্পনা করতে পারেন না। এ কারণে চট করে তাদের ভয়ের গল্প বা ভয়ংকর কিছু বলে ভয় পাওয়ানো যায় না।গত সপ্তাহে প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বিতে প্রকাশ হয় ওই গবেষণাপত্র। সেখানে আফ্যান্টেসিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঙ্গরের তাড়া খাওয়া, চূড়া থেকে পড়ে যাওয়া ও বিধ্বস্ত হতে যাওয়া বিমানের যাত্রী হওয়ার মতো বিভিন্ন রকম আতঙ্কময় পরিস্থিতির বর্ণনা পড়তে দিয়ে পরীক্ষা করা হয়।গবেষকেরা বর্ণনা পড়ার পর ত্বকের পরিবাহিতার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর ভয়ের প্রতিক্রিয়া শারীরিকভাবে পরিমাপে সক্ষম হন। এককথায় ওই বর্ণনা একজন ব্যক্তিকে কতটা ঘামিয়েছে, সেটা তারা মেপেছেন। এই ধরনের পরীক্ষা সাধারণত মনোবৈজ্ঞনিক গবেষণায় আবেগের দৈহিক অভিব্যক্তি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।গবেষণায় দেখা যায়, পাঠক যখন ভয়ের দৃশ্যটি কল্পনা করতে পারছেন না, তখন ভয়াবহ গল্পগুলো তাদের ভয়ের কারণটি হারিয়ে ফেলে। এ থেকে গবেষকদের ধারণা, ভয়ের সঙ্গে কল্পনার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আগের ধারণার চেয়েও বেশি থাকতে পারে।ইউএনএসডব্লিউ সায়েন্সেস ফিউচার মাইন্ডস ল্যাবের অধ্যাপক ও গবেষণাপত্রের জ্যেষ্ঠ গবেষক জোল পিয়ারসন বলেন, ‘চিন্তা-ভাবনা ও আবেগের সংযোগ স্থাপনে কল্পনা যে মূল ভূমিকা পালন করে, সে সংক্রান্ত সবচেয়ে শক্ত প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’‘আফ্যান্টেসিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এটাই এখন পর্যন্ত আমাদের গবেষণায় পাওয়া সবচেয়ে বড় পার্থক্য’, যোগ করেন তিনি।গবেষণার জন্য ৪৬ জন ব্যক্তির ওপর পরীক্ষাটি করা হয়। তাদের মধ্যে ২২ জনের আফ্যান্টেসিয়া ছিল। বাকি ২৪ জন কল্পনা করতে সক্ষম।

আলো কমানো একটি ঘরে তাদের বসিয়ে ত্বকে ইলেকট্রোড লাগানো হয়। যখন কোনো ব্যক্তি ভয়ের মতো শক্তিশালী আবেগ অনুভব করেন তার ত্বক বিদ্যুতের ভালো পরিবাহক হয়ে ওঠে।তারপর বিজ্ঞানীরা ঘরটি ছেড়ে বের হয়ে যান ও আলো বন্ধ করে ঘরটিকে পুরোপুরি অন্ধকার করে দেন। তারা অংশগ্রহণকারীদের একা রাখেন ও গল্পগুলো তাদের সামনের পর্দায় প্রদর্শন হয়।‘আপনি সৈকতে আছেন, পানিতে নেমেছেন’ কিংবা ‘আপনি বিমানে জানালার ধারে বসেছেন’ এমন সাদামটাভাবেই শুরু হয় গল্পগুলো। গল্প এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সাসপেন্স। সৈকতের দূরে পানিতে কালো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে কিংবা বিমানের কেবিনের লাইট নিভুনিভু ও বিমানটি কাঁপছে এমন বর্ণনা আসতে থাকে।অধ্যাপক পিয়ারসন বলেন, ‘গল্পগুলোর কল্পনা করতে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য ত্বকের পরিবাহিতার মাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। গল্প এগোনোর সঙ্গে তাদের প্রতিক্রিয়া বাড়তে থাকে। তবে অ্যাফান্টেসি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ত্বকের পরিবাহিতা মাত্রা ছিল একই।’ভয়ের সীমার পার্থক্যের কারণে যে প্রতিক্রিয়াগুলো আসেনি সেটি পরীক্ষা করতে লেখার বদলে মৃতদেহ ও সাপের বিষদাঁতের মতো ভয়ংকর কিছু ছবিও দেখানো হয়।

‘দুই ধরনের ফলের ভিত্তিতে বোঝা যায় যে সাধারণভাবে কম আবেগের সঙ্গে আফ্যান্টেসিয়ার যোগ নেই। যারা ভয়ের গল্প পড়ছিলেন তাদের মধ্যে নির্দিষ্টভাবে এটি দেখা গেছে। ভয়ের আবেগ তখনই দেখা গেছে যখন ভয়ংকর ছবি ও জিনিসগুলো তাদের দেখানো হচ্ছিল’, বলেন অধ্যাপক পিয়ারসন।‘এ থেকে বোঝা যায়, কল্পনা আবেগের পরিবর্ধক। আমরা অনেক কিছুই ভাবতে পারি। কিন্তু কল্পনার দৃশ্য ছাড়া আমাদের চিন্তায় আবেগের আতিশয্য আসবে না,’ যোগ করেন তিনি।আফ্যান্টেসিয়া কী?গবেষকদের ধারণা, বিশ্বের ২-৩ শতাংশ মানুষ আফ্যান্টেসিয়ায় ভোগে। এই মানসিক অবস্থা সম্পর্কে খুব বেশি জানতে পারেননি বৈজ্ঞানিকেরা।গত বছর প্রকাশিত ইউএনএসডব্লিউর এক গবেষণায় দেখা যায়, আফ্যান্টেসিয়া স্মৃতি, স্বপ্ন দেখা ও কল্পনা করার মতো জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলোর নানা পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।আগের আফ্যান্টেসিয়া গবেষণাগুলোতে আচরণগত পরিবর্তনকে মুখ্য ধরা হয়। আর সবশেষ গবেষণায় ত্বকের আচরণের পরিমাপ ব্যবহার করা হয়।ইউএনএসডব্লিউর সাবেক পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো রেবেকা কিও বলেন, ‘এটি আফ্যান্টেসিয়াকে একটি অনন্য ও ভিন্ন ধরনের ঘটনা হিসেবে প্রমাণ করে। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফল ভবিষ্যতে আফ্যান্টেসিয়াকে নির্ণয় ও নিশ্চিত করার উপায় বের করতে সাহায্য করবে।’আফ্যান্টেসিয়ার ওপর অনলাইন ডিসকাশন বোর্ড থেকে এই গবেষণার আইডিয়া পায় অস্ট্রেলিয়ান গবেষক দলটি। ডিসকাশন বোর্ডের আলোচনাকারীরা প্রায়ই অভিযোগ করতেন তারা ফিকশন পড়ে মজা পাচ্ছেন না।গবেষণালব্ধ ফলে যদিও দেখা যায় আফ্যান্টেসিয়াতে ভোগা ব্যক্তিরা বই পড়ে আবেগ অনুভব না-ও করতে পারেন, অধ্যাপক পিয়ারসনের মতে সবার ক্ষেত্রে এমনটা নাও হতে পারে। গবেষণার ফলটি গড়পরতা মান হিসেবে ধরা যাবে, অ্যাফান্টেসিয়া আক্রান্ত সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।ফিকশনের প্রতি ভয় ছাড়াও অন্যান্য আবেগের প্রতিক্রিয়া আলাদা হবে, সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়।পিয়ারসন বলেন, ‘আফ্যান্টেসিয়ার নানা ধরন ও প্রকার আছে। কিছু লোকের একেবারেই চিত্রিত কল্পনা নেই। আবার কারও ক্ষেত্রে সমস্ত ইন্দ্রিয়তেও কোনো কল্পনা নেই। কিছু লোক স্বপ্ন দেখে অন্যেরা দেখে না।

‘সুতরাং আপনার যদি আফ্যান্টেসিয়া থাকে ও এর ধরন বুঝতে না পারেন, তাহলে উদ্বেগের কিছু নেই। এটিতে নানা ধরনের বৈচিত্র্য রয়েছে, যা আমরা খুঁজে পেতে শুরু করেছি।’সবশেষে তিনি বলেন, ‘আফ্যান্টেসিয়া স্নায়বিক বৈচিত্র্যের উদাহরণ। আমাদের মস্তিষ্ক ও মন যে কতটা আলাদা হতে পারে, তার একটি আশ্চর্য নমুনা এটি।’

এ বিভাগের আরো খবর