শেষ হতে যাচ্ছে অপেক্ষার পালা। অসীম পথ পাড়ি দিয়ে রক্তিম গ্রহ মঙ্গলের মাটি ছোঁয়ার অপেক্ষায় নাসার ‘পারসিভারেন্স’ তথা ‘অধ্যবসায়’ রোভার। সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করবে এই যান।
নাসার এই মিশনকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছরের জুলাইয়ে পৃথিবী থেকে উড়াল দেয়ার সাত মাস পর ৪৭ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রোভারটি এখন মঙ্গলের খুব কাছে।
বিবিসি লিখেছে, পারসিভারেন্স রোভারটি বৃহস্পতিবার জিএমটি সময় ২০টা ৪৮ মিনিটে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে। প্যারাশুট ছাড়বে ২০টা ৫২ মিনিটে। অবতরণ যন্ত্রটি চালু হবে ২০টা ৫৪ মিনিটে। এর তিন মিনিট পর মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করবে রোবটের চাকা, তখন বাংলাদেশ সময় থাকবে ১৯ ফেব্রুয়ারি, রাত ২টা ৫৫ মিনিট।
অবতরণের শেষ সাত মিনিটকে ‘সেভেন মিনিটস অব টেরর’ নাম দিয়েছে নাসা। এই সময়টা নাসার টিভি চ্যানেল ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
অবতরণ সফল হলে পারসিভারেন্স তথা অধ্যাবসায় হবে মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করা নাসার পাঠানো পঞ্চম রোভার। তবে এবারের রোভারটি অনেক দিক থেকেই প্রথম হওয়ার নজির গড়তে যাচ্ছে।
মঙ্গল থেকে মাইক্রোফোনিক সাউন্ড সরবরাহ করা প্রথম রোভার হবে পারসিভারেন্স। সেই সঙ্গে আগের যেকোনো রোভারের চেয়ে বেশি ক্যামেরা আছে এটিতে। থাকছে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানী ‘শার্লক’ ও ‘ওয়াটসন’ নামে দুটি যন্ত্র।
মঙ্গলের পাথুরে শিলার নমুনা হাতে পেতে বিজ্ঞানীদের ১০ বছরের যে চেষ্টা তার প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হবে পারসিভারেন্সের অবতরণের মাধ্যমে।
এই রোভারটিতে একটি ড্রিলিং মেশিন রয়েছে, যেটি প্রায় ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে। এর মধ্যে ৩০টির মতো নমুনা নিয়ে ২০৩১ নাল নাগাদ পৃথিবীতে ফেরার কথা রোভারটির।
অবশ্য, এই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাগ্য সহায় হলে, মঙ্গলে আগে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না তা জানতে এক দশক অপেক্ষা নাও করা লাগতে পারে বিজ্ঞানীদের।
পারসেভারেন্সের সম্ভাব্য অবরণ ধাপ। ছবি: নাসা
পারসিভারেন্স রোভারে সংযুক্ত আছে একটি লেজার স্পেকটোমিটার বোর্ড, যা দিয়ে বিভিন্ন শক্তির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে মঙ্গলের পাথুরে মাটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে সক্ষম।
পারসিভারেন্সের রোবটিক বাহুতে যুক্ত শার্লক যন্ত্রটি শক্তিশালী আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে মঙ্গলের পৃষ্ঠদেশের জৈব পদার্থ, খনিজ ও রাসায়নিক উপাদানগুলো বিভক্ত করতে পারবে। আর ওয়াটসন সক্ষম মঙ্গলের শিলার অণুবীক্ষণিক চিত্র ধারণে।
এসব থেকে ও অন্যান্য সেন্সর থেকে পাওয়া উপাত্ত মঙ্গলের মাটিতে আণুবিক কোনো প্রাণীর জীবাশ্ম আছে কি না তা জানতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে।
মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো করতে পারসিভারেন্সকে গ্রহটির জেজিরো ক্র্যাটার অববাহিকায় অবতরণের জন্য বেছে নিয়েছে নাসা। বিজ্ঞানিদের বিশ্বাস, এক সময় সেখানে একটি হ্রদ ছিল, পরে সেটি প্রাচীন এক নদী দ্বারা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
শুকিয়ে যাওয়া বদ্বীপ আকৃতির সেই নদী ও লেকের তলানি মসৃণ নয়। এখানে পাথর ও বালির টিলা রয়েছে, আর ব দ্বীপটি দেখতে প্রায় ৭৬ মিটার উঁচু।