কাশ্মীর ভারতের একটি শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দর পর্যটন গন্তব্য। প্লেন থেকে শ্রীনগর নামতেই চোখে পড়ল তুষার-ঢাকা পাহাড় এবং নির্মল হ্রদ অপরুপ নীল ও সবুজের সংমিশ্রন এক অপরুপ প্রকৃতি। নির্মল ঠাণ্ডা বাতাস শিহরণ জাগাচ্ছে শরীরে। চারপাশে শুধুই অপরুপ সৌন্দর্যে্যর বিস্ময়। পর্বত-নদী-বরফে বেষ্টিত এই উপত্যকাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ভারতীয়, পারস্য এবং মধ্য এশিয়ার প্রভাবের অনন্য মিশ্রণের জন্য বিখ্যাত।
আসলেই কাশ্মীর কোনো সাধারণ ছুটি কাটানোর জায়গা নয়। এটি পৃথিবীর স্বর্গ। এর আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দৃশ্য, হ্রদ, সংস্কৃতি, রন্ধনপ্রণালী, মানুষ এবং সাংস্কৃতি সবদিক দিয়েই অনন্য যা এটিকে দিয়েছে ভূস্বর্গের খ্যাতি। গত কয়েক বছর ধরে সেখানে দেশ-বিদেশি পর্যটকদের ঢল নেমেছে। শ্রীনগর থেকে পহেলগাঁও, সোনমার্গ থেকে গুলমার্গ- একের পর এক প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যের ডালি নিয়ে পর্যটকদের জন্য বসে থাকে কাশ্মীর। তুষারাবৃত হিমালয় পর্বতশৃঙ্গ, ডাল লেকের শীতল অনুভূতি, মুঘল আমলের সাজানো বাগান, সবুজ-হলুদ আলপাইন তৃণভূমি, স্বচ্ছ ডাল লেকে হাউসবোটের রোমাঞ্চের হাতছানি- প্রকৃতির এমন সব অপরুপ সজ্জা নিয়ে কাশ্মীর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বিশ্বের ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকদের।
২০১৯ সালে রাজ্যের বিশেষ অধিকার ৩৭০ ধারা বিলোপের পরই কাশ্মীরে পর্যটকের এমন ঢল নেমেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। একসময় সেনার বুটের আওয়াজে ঘুম ভাঙত কাশ্মীরের মানুষের। লেগে থাকত সেনা-জঙ্গির গুলির লড়াই। বর্তমানে উপত্যকায় পরিস্থিতির ব্যাপক পরির্তন হয়েছে। আর তার রেশ পড়েছে পর্যটনেও। আতঙ্ক দূরে ঠেলে ফের পর্যটকদের গন্তব্য এখন কাশ্মীর। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে অন্তত ৭৫টি অফবিট জায়গাকেও পর্যটকদের জন্য আরও সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ২০.৫ লাখ পর্যটক কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছেন। তার মধ্যে ৩.৬৫ লাখ অমরনাথ তীর্থযাত্রী রয়েছেন।
কাশ্মীরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। কাশ্মীরের পর্যটন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো থেকে চলতি ২০২৩ সালে কাশ্মীর ভ্যালিতে পর্যটক এসেছেন হাজার সাতেক। আর শুধু বাংলাদেশ থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় প্রায় সাতগুণ বেশি পর্যটক এ বছরে কাশ্মীরে বেড়াতে গেছেন। সে হিসেবে কাশ্মীরে এখন বিদেশি পর্যটকদের সবচেয় বড় অংশ যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসেই ৪৮ হাজারেরও বেশি পর্যটক শ্রীনগরে গেছেন বলে জানিয়েছে রাজ্যটির পর্যটন বিভাগ।
শ্রীনগরে পর্যটন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে তাদের রাজ্যে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা হয়তো একদিন দেশি (ভারতীয়) পর্যটকদেরও ছাপিয়ে যাবে।
বাংলাদেশিদের মধ্যে কাশ্মীরের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও দারুণ খুশি। এতদিন ভারতে হিমালয়ের দার্জিলিং বা সিকিম অঞ্চলেই বাংলাদেশি পর্যটকদের বেশি আনাগোনা ছিল। কিন্তু কাশ্মীরের পরিস্থিতি পাল্টে যাবার পর সেখানে বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বাংলাদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে।
দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানালেন, ‘বাংলাদেশে আমরা পর্যটন ভিসার জন্য যেসব আবেদন পাচ্ছি তার প্রায় ২৫ শতাংশের মতো কাশ্মীরে যেতে চাইছেন। গত বছর থেকেই বাংলাদেশে ভারতের ভিসা দেয়ার হারও অনেক বেড়ে গেছে।’
কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসিত সরকার গত বছর যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ১.৬২ কোটি পর্যটক কাশ্মীর বেড়াতে গেছেন।
কাশ্মীর সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, স্বাধীনতার পর এই প্রথম এত পর্যটক কাশ্মীরে এলেন। আসলে দীর্ঘ তিন দশক পর ফের কাশ্মীরের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে। পর্যটন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, আবার সেই সোনার দিনে ফিরে যাচ্ছে কাশ্মীর। মূলত কাশ্মীরের সার্বিক উন্নতির ফল দেখতে পাচ্ছেন বাসিন্দারা।
পর্যটনের সাফল্যের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানও বাড়ছে। পুঞ্চ, রাজৌরিসহ কাশ্মীর উপত্যকার বহু জায়গায় যাচ্ছেন পর্যটকরা। এদিকে কাশ্মীর পর্যন্ত সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চাইছিলেন অনেকেই। সেটাও পূরণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কাশ্মীর থেকে শারজা পর্যন্ত ফ্লাইট চালু হয়েছে। রাতের ফ্লাইটও রয়েছে শ্রীনগর ও জম্মু থেকে। ঢাকা থেকে ভিসতারা, বিমান, ইন্ডিগো এবং ইন্ডিয়ান এয়ার প্রতিদিন সরসরি বিমান পরিচালনা করছে।