‘বৈষ্যমের শুরুটা হয় একেবারে পরিবার থেকে, পরিবারের সদস্যদের দিয়ে। তারপর সেটা যায় সমাজে, বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।’
মঙ্গলবার শূন্য বৈষম্য দিবসে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর বিশেষ আয়োজন ‘বৈষম্য কতদূর?’ শীর্ষক আলোচনায় এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট হো চি মিন ইসলাম।
রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও বড় ধরনের বৈষম্য দেখা যায় উল্লেখ করে সমাজের প্রচলিত বৈষম্য ভেঙে এগিয়ে যেতে চান তিনি।
হো চি মিন ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেও নিজেকে প্রশ্ন করি। আমার ভেতরে হয়তো লুকানো একটা শক্তি ছিল। যখনই বৈষ্যমের শিকার হয়েছি, আমার মন বলেছে- এটার শেষটা দেখতে চাই। শেষটা দেখার এই ইচ্ছাশক্তির বলেই হয়তো এই বৈষম্য কাটিয়ে এতোদূর আসতে পেরেছি।’
নিজে ‘একেবারে বৈষম্যমুক্ত’ হয়েছেন সেটা বলার এখনো সময় আসেনি বলে মনে করেন এই ট্রান্সজেন্ডার। তিনি বলেন, ‘এখনও কিন্তু আমাকে ট্রিট করা হয় বেইজড অন মাই আইডেনটিটি।’
‘কালো মেয়ে কালো বইলা কইর না গো হেলা’- এমন প্রচলিত লোকগান থাকলেও বর্ণবৈষম্যর অভিঘাত থেকে রক্ষা মেলে না। সমাজে বর্ণবৈষম্য এখনও তীব্রভাবে আছে বলে মনে করেন সংবাদকর্মী খাদিজাতুল কোবরা ইভা।
ইভা বলেন, ‘প্রথমে আমি বর্ণবৈষম্যের বিষয়টি বুঝতাম না। বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছি- এটা হয়তো বুঝতাম। তবে কীভাবে হচ্ছি তা বুঝতাম না। সেটা অনেক পরে বুঝেছি। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এখনও বৈষম্যের শিকার হতে হয়।‘
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দু-তিন বছর আগে নিউজরুমে একজন এসে অন্য একটা টেলিভিশনের স্ক্রিনে ‘মোটা মেয়ে উপস্থাপনা করছে’ মন্তব্য করে সেই অনুষ্ঠানের প্রযোজককে ফোন দেন। বলেন, আপনারা কি আর কাউকে পাননি? আমি ওই সময় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। কারণ আমি জানি ওই লোকটিও একই ধরনের বৈষ্যমের শিকার হন।’
সমাজের এসব প্রচলিত সমস্যার জন্য শিক্ষার অভাবকে দায়ী করেন ইভা। বলেন, ‘কোথাও না কোথাও শিক্ষার একটা গ্যাপ আছে। এই শিক্ষাটা আসলে কে দেবে? সেক্ষেত্রে অনেক জায়গায় কাজ করতে হবে।’
খাদিজাতুল কোবরা ইভা আরও বলেন, ‘ছোট বেলায় দেখেছি আমার হিন্দু বান্ধবী বৈষ্যমের শিকার হয়েছে। হয়তো বা আমি নিজেও করেছি। কিন্তু বিষয়টি তখন জানতামই না। এর কারণ হলো শিক্ষা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এটা নেই। আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে যেন এই বৈষম্য দূর করা যায়।’