একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক, বিজ্ঞানী ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবীর লেখা বই The Role of NIXON-KISSINGER in the 1971 Pakistan War Crimes Againist BANGLADESH-এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে।
প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। কবি ইউসুফ রেজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই প্রকাশনা উৎসবে সভাপতি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তধারা ইউএসের স্বত্বাধিকারী বিশ্বজিৎ সাহা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, একাত্তরে নিক্সন ও কিসিঞ্জার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করেছিল, ৫০ বছরের বাংলাদেশে তা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশকে তারা তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল, বাংলাদেশে এখন প্রয়োজনের চেয়ে উদ্বৃত্ত সম্পদ আছে এবং উৎপাদন হচ্ছে। তিনি বলেন, একাত্তরে লেখক নিজের চোখে যা দেখেছেন, তা প্রকাশ করেছেন বইয়ে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, বইটিতে লেখক চারটি বিষয় তুলে ধরেছেন। ১. একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার অনুভূতি কেমন ছিল? ২. একাত্তরে তার ফ্যামিলি মেম্বারদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন, যার মধ্য দিয়ে সাধারণ বাঙালিদের জীবন-দুর্ভোগের চিত্র প্রকাশ পেয়েছে ৩. সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় অথচ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে তারা কীভাবে কাজ করেছে? ৪. রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন, তারা যে ভুল করেন, এই ভুলের খেসারত যে সাধারণ জনগণকে দিতে হয় এবং একাত্তরে এই খেসারত বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে দিয়েছে? তা তুলে ধরেছেন।
আমেরিকা থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উৎসবে অংশ নেন লেখক ড. নূরুন নবী।
তিনি উৎসবের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিদ্বয়, সভাপতি এবং উপস্থিত অতিথিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার এ বিষয়ে নীরব ছিলেন।
পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের নিন্দা করেনি, তাদের থামানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি, যা তাদের ক্ষমতার মধ্যে ছিল। যদি নিক্সন-কিসিঞ্জার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ইয়াহিয়া খানকে অন্ধভাবে সমর্থন না করত, তাহলে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের যুদ্ধাপরাধ কম হতো অথবা হতো না। তাই বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের দায় নিক্সন-কিসিঞ্জার এড়াতে পারে না।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিষয়ে ড. নূরুন নবীর লেখা আরও ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি তার লেখা দুটি বই ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষণার জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে। ড. নূরুন নবীর লেখা উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে- অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধ, জন্ম ঝরের বাংলাদেশ, বাংলাদেশে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধ ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন- ড. কিসিঞ্জারের দায়, জাপানিদের চোখে বাঙালি বীর, স্মৃতিময় নিপ্পন, আমার একাত্তর, জন্মেছি এই বাংলায় ইত্যাদি।