যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের হ্যামট্রামেক সিটিতে গত বছরের ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রশাসনিক সাতটি পদের সবগুলোতে জয়ী হন মুসলিমরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন দুই বাংলাদেশি আমেরিকানও।
কাউন্সিলর পদে জয়ী এ দুজন হলেন কামরুল হাসান ও নাইম লিয়ন চৌধুরী। গত ২ জানুয়ারি শপথ নেন লিয়ন ও কামরুল।
এ দুজনের মধ্যে কামরুল আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। গত ৪ জানুয়ারি সাধারণ সভায় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সিটির ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় হ্যামট্রামেক সিটি। সেখানে বিভিন্ন সময় পোল্যান্ডের বংশোদ্ভূতরা মেয়র নির্বাচিত হন, তবে ২ নভেম্বরের নির্বাচনে আগের সব চিত্র পাল্টে যায়।
ওই নির্বাচনে ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত আমেরিকান আমির গালিব মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। পাশাপাশি নির্বাচনে ৩ মুসলিম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাদের একজন কামরুল।
বেড়ে ওঠা, শিক্ষা
কামরুল হাসানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রমে। তিনি প্রয়াত আমিনুল হক মেম্বারের চতুর্থ ছেলে। তার ভাই-বোন ১০ জন। তিনি নিজেও ৫ সন্তানের জনক।
নিজ গ্রাম মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয় কামরুলের। তিনি জোয়ারা বিসি হাই স্কুল থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি পাস করে।
পরে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৫ সালে গণিত বিষয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৯২ সালে মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
কামরুল ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গণিত সমিতির ভিপির দায়িত্ব পালন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি
কামরুল জানান, পিএইচডি করতে ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে যান, কিন্তু সেখানে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি পিএইচডি করতে পারেননি। পরে ২০০২ সালে মিশিগানের ডেট্রয়েট মারসি ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। পাশাপাশি শুরু হয় জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই।
মিশিগানে কর্মজীবন
মিশিগান অঙ্গরাজ্যে মাস্টারক্রাফট, লেদারওয়ার্ক, ডিস্ট্রিয়া, ফারসিয়াসহ কয়েকটি কোম্পানির ম্যানেজারিয়াল পদসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন কামরুল হাসান। মেয়র হওয়ার আগে তিনি বিশ্বখ্যাত ফোর্ড মোটর কোম্পানির প্রসেস কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতিতে যাত্রা
রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইতে কামরুল বলেন, ‘শুরুতেই আমাদের কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ বাংলাদেশ-আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাসের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। তারপর থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। ২০০৯ সালে প্রথম হ্যামট্রামেক সিটির কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করি এবং প্রথম নির্বাচনেই জয়লাভ করি এবং আজ অব্দি আছি।
‘মাঝে কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় হ্যামট্রামেক সিটি মেয়র, ওয়েইন কাউন্টি কমিশনার ও স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন, কিন্তু প্রতিবারই সামান্য ভোটের জন্য কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি।’
কমিউনিটির জন্য ভাবনা
ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় কমিউনিটির মানুষের জন্য কী করার আছে এবং নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে কামরুল বলেন, ‘আমি হয়তো আগামীতে এই সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। কারণ আমাদের কমিউনিটির অনেকেই আছেন আমাদেরকে বা শহরের মানুষদের নিয়ে কাজ করার। আমি চেষ্টা করছি এবং করব তাদেরকে মূলধারার রাজনীতি বা স্থানীয় প্রশাসনিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর।
‘তবে একটা বিষয় ধ্রব সত্য যে, আমাদের এই স্থানীয় নির্বাচনে দেশীয় আঞ্চলিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যার কারণে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে অনেক বেগ পেতে হয়। আমাদের নিজেদের স্বার্থে এগুলো পরিহার করতে হবে।’
কমিউনিটিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে ঐক্য বৃদ্ধির জন্য একটি সংগঠন তৈরি করেছি। আশা করি সামনের নির্বাচনগুলোতে আমরা যে নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করি না কেন, কাঙ্ক্ষিত ফল পাব।’