বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পিরের ‘আদেশ’, তাই কখনও ভোট দেননি নারীরা

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৭:২৮

যুগের পর যুগ এমন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে। সেখানকার বেশির ভাগ নারী দেশ স্বাধীনের পর কোনো নির্বাচনেই ভোট দেননি। তাদের ধারণা, পিরের আদেশ অমান্য করলে এলাকায় ভয়ঙ্কর বিপদ নেমে আসবে।

প্রায় পাঁচ দশক আগের কথা। কলেরা মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ইউনিয়নে। গ্রামবাসীর আয়োজন করা দোয়া মাহফিলে পির মওদুদ হাসান জৈনপুরী আদেশ দেন, ইউনিয়নের সব নারীকে কঠোর পর্দা করতে হবে। আর তাহলেই দূর হবে কলেরা।

এরপর কেটে গেছে প্রায় ৫০ বছর। পর্দার কঠোর নিয়ম ধীরে ধীরে শিথিল হয়েছে, তবে সেই থেকে আর ভোটকেন্দ্রমুখী হননি ইউনিয়নের নারীরা।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের বেশির ভাগ নারী দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় থেকে জাতীয় কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই ভোট দেননি।

স্থানীয়রা বলছেন, তাদের ধারণা, পিরের আদেশ অমান্য করে নারীরা ভোট দিতে গেলে এলাকায় আবার কোনো বিপদ নেমে আসবে। তাই ভোটের দিন বেশির ভাগ নারী বাড়িতেই থাকেন, ইদানীং হাতে গোনা কয়েকজন যান ভোটকেন্দ্রে।

রাহেলা খাতুন নামে এক নারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিরের নির্দেশমতো আমরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাই না। ভোটের দিন ঘরেই থাকি। বাড়ির পুরুষরা ভোট দিতে যান।’

তবে ভোট না দিলেও বাড়ির বাইরের বাকি সব কাজই করছেন নারীরা। এমনকি নির্বাচনেও প্রার্থী হচ্ছেন।

নিয়মিত বাজারে যান এই ইউনিয়নের নারীরা

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৭৪১ এবং নারী ভোটার ৯ হাজার ৪৫ জন। আগামী ৫ জানুয়ারি এখানে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট হবে।

রৌজ আক্তার নামে তরুণী বলেন, ‘এবার আমি ভোটার হয়েছি। সামনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা আছে। সব ঠিক থাকলে কেন্দ্রে যাব। তবে পির সাহেব পর্দার মধ্যে চলাফেরা করতে বলায় এখানকার নারীরা ভোট দিতে যেতে চান না।

‘এখন তো সব নারী কাজের প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন। সব ধরনের কাজ করছেন। তাহলে ভোট দিতে যাওয়ায় সমস্যা কোথায়! কিন্তু এ বিষয়ে নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রশাসন বা প্রার্থীদের তেমন কাজ করতে দেখিনি।’

স্থানীয় মালেক হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে একবার নারীদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে একটা সভা ডাকা হয়েছিল। তবে সভার মাইকগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মানুষ আবার ভয় পেয়ে যায়।’

তিনি জানান, ভোট না দেয়ায় প্রার্থীদের কাছে এলাকার নারীরা গুরুত্ব পান না। এলাকার উন্নয়নে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করায় নারীদের কোনো ভূমিকা থাকছে না।

বিভিন্ন প্রয়োজনে সরকারি অফিসে যেতেও সমস্যা মনে করেন না নারীরা

সবুজ হোসেন নামে একজন বলেন, ‘এখানকার নারীরা সিনেমা হলেও যেতে পারেন, কিন্তু ভোট এলেই পিরের দোহাই দিয়ে কেন্দ্রে যান না। আমরা চাই নারী-পুরুষ সবাই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করুক।’

পিরের কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শরীফ হোসেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুনেছি হুজুর বলেছিলেন নারীদের পর্দা করতে। ভোট না দেয়ার কথা তিনি বলেননি। আমরা তাদের ভোট দিতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, তারা এবার নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।’

এই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান এবং ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি একজন নারী, কিন্তু নির্বাচিত হয়েছি পুরুষদের ভোটে। আমাদের ইউনিয়ন বাদে এই উপজেলার বাকি ১৩টি ইউনিয়নেই নারীরা ভোট দেন। আমার ইউনিয়নের নারীদের আমি হাতে-পায়ে ধরে বোঝাই। কেন্দ্রে নারী এজেন্টও থাকেন, কিন্তু কোনো কিছুতেই লাভ হয় না। তারা ভোট দিতে আসেন না।’

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিউলি হরি বলেন, ‘আমি এই উপজেলার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিষয়টি শুনছি। একটা মিথের কারণে নারীরা ভোট দিতে যান না।

‘আমরা চাই সবাই ভোট দিক। নারী ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে আলাদাভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার থাকলে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব। তার নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর