বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জমি না থাকায় চাকরি হলো না আছপিয়ার?

  •    
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ২০:০৯

আছপিয়া বলেন, ‘জমি নেই এ জন্য চাকরি হবে না, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না।’ তবে পুলিশ জানিয়েছে আছপিয়ার অভিযোগ সত্য নয়। বিধি মোতাবেক আছপিয়ার দেয়া তথ্যে গরমিল থাকায় চাকরি হয়নি।

বরিশাল থেকে পুলিশের কনস্টেবল পদের জন্য অনলাইনে আবেদন করেন হিজলার তরুণী আছপিয়া ইসলাম। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব ধাপ পেরোলেও সবশেষ ধাপ পুলিশ ভেরিফিকেশনে গিয়ে হাত থেকে ছুটে যায় পদ।

আছপিয়া অভিযোগ করেন, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে বরিশালে তার একখণ্ড জমি নেই বলে চাকরি হচ্ছে না।

পু‌লিশ লাইনসের ফটকের সামনে বুধবার সকালে বিষণ্ন মুখে অপেক্ষায় বসে থাকা আছপিয়ার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাম্পাস টাইমস নামে একটি পেজ। ওই পোস্টে বলা হয়, সব ধাপে পাস করার পরও কেন চাকরি হবে না সে প্রশ্ন করলে ডিআইজি এস এম আকতারুজ্জামান আছপিয়াকে জানান, নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেয়ার আইন নেই।

ওই ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয় ফেসবুকে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ওই পোস্টের সূত্র ধরে সংবাদও প্রকাশ করে। সেসব সংবাদের শিরোনামে বলা হয় যে জমি না থাকায় পুলিশের চাকরি পাননি আছপিয়া।

আছপিয়ার অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করে নিউজবাংলা।

আছপিয়া জানান, তিনি সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেছেন। বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে সবশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি অনলাইনে আবেদন করেন।

গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনসে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আছপিয়া। ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা দেন। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত ফলে দেখেন, লিখিততেও তিনি পাস করেছেন। পরদিন ভাইভা দেন, তাতেও উত্তীর্ণ হন। এরপর প্রাথমিক ও চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষায়ও তিনি পাস করেন।

আছপিয়া জানান, চাকরি তার প্রায় নিশ্চিতই ছিল। তবে বুধবার জানতে পারেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে গরমিল থাকায় চাকরি তার হাতছাড়া হয়েছে।

আছপিয়া বলেন, ‘সাতটি স্তর উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এমন সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে, কিন্তু আমাদের তো কোনো জমি নেই। একজনের জমিতে বছরের পর বছর ধরে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করছি। ভোটার আইডি কার্ড আর জন্মনিবন্ধন হিজলার বড়জালিয়া ইউপিতেই।

‘জমি নেই এ জন্য চাকরি হবে না, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না। যে কারণে রেঞ্জ ডিআইজির সঙ্গে বরিশাল পুলিশ লাইনসে দেখা করে মৌখিকভাবে আবেদন জানিয়েছি। তবে ডিআই‌জি আশ্বস্ত করতে পারেননি।’

পুলিশ ভেরিফেকেশনের দায়িত্বে থাকা হিজলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্বাস উদ্দিন জানান, আছপিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা হিজলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাদের দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়, সেখানে তাদের জমি আছে। তিনি যে তথ্য পেয়েছেন, সেগুলোই জমা দেয়া হয়েছে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইকবাল হোছাইন বলেন, ‘চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী যে জেলা থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দেবেন, সে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আছপিয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।’

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও নির্বাচন পদ্ধতির ৪.৬ নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ আছে, ভেরিফিকেশনের ফরমে তথ্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য দিলে পরের ধাপে আবেদনকারীকে নেয়া হবে না।

হিজলায় আছপিয়ার আত্মীয় আব্দুল হামিদ জানান, আছপিয়ার দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশ্যনে, বাবা শফিকুল ইসলাম প্রায় তিন দশক আগে কাজের সন্ধানে হিজলায় যান। হিজলা উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাড়িতে সংসার গড়েন। সেখানেই জন্ম আছপিয়ার। ২০১৯ সালে শফিকুলের মৃত্যু হয়। এরপর আছপিয়া ও তার পরিবার এখন হিজলার খুন্না-গোবিন্দপুর ইউনিয়নে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

ভোলার বাড়ির বিষয়টি ভেরিফিকেশন ফরমে কেন উল্লেখ করেননি জানতে চাইলে আছপিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকে হিজলায়। ভোলায় কিছু আছে কি না আমি জানি না।’

তিনি জানান, ভেরিফিকেশন ফরমে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে খুন্না-গোবিন্দপুরের ভাড়া বাড়ির ঠিকানা দিয়েছেন।

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, জমি না থাকায় চাকরি হয়নি এই অভিযোগ সত্য নয়। স্থায়ী ঠিকানার তথ্য ভেরিফিকেশনে যাচাই হয়নি বলে বিধি অনুযায়ীই তার চাকরি হয়নি।

ডিআইজি বলেন, ‘আছপিয়া বরিশালে তার স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে পারছেন না। বিধি মোতাবেকই পুলিশ কাজ করবে। মেয়েটির প্রতি কষ্টবোধ থেকেই যায়। তিনি হয়তো না বুঝেই ভেরিফিকেশন ফরমে ভুল করেছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর