ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদের’ প্রভাবে টানা পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টির কারণে বরগুনার তালতলীর আশারচর শুঁটকিপল্লিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানি বেড়ে শুঁটকি শুকানোর মাচা তলিয়ে গেছে। ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে সংরক্ষিত আরও অনেক শুঁটকি মাছ।
এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় পাঁচ দিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না।
আশারচর শুঁটকিপল্লির ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক জেলে বরগুনার তালতলী উপজেলার আশারচর এলাকায় শুঁটকি আহরণ করেন। এ জন্য সেখানে পাঁচ মাসের জন্য অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলা হয়। সাগর থেকে ধরা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা হয় সেখানে।
তাদের দাবি, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টিতে কয়েক শ মাচার প্রায় চার হাজার টন শুঁটকি সাগরে ভেসে গেছে। ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে সংরক্ষিত আরও অনেক শুঁটকি মাছ। এতে তাদের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিটি জেলে পরিবার ও ব্যবসায়ীদের ২ থেকে ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এমন অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এখানকার জেলেরা।
নিউজবাংলাকে আশারচর শুঁটকিপল্লির ব্যবসায়ী সেকান্দার আলী বলেন, ‘টানা পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে শুঁটকির মাচা তলিয়ে গেছে। আমার নিজেরই প্রায় ৩ লাখ টাকার শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে। আমার জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে যেতে পারছেন না। এ জন্য আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে।’
‘এই শুঁটকি ব্যবসায় প্রতিবছর লাভ হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু এই বৃষ্টিতে তার চেয়ে দ্বিগুণ লোকসান হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না।’
আরেক ব্যবসায়ী জামাল আকন বলেন, ‘আমার এখানে ৩০ জন জেলে শুঁটকি শুকানোর কাছে নিয়োজিত। বৃষ্টির এই পাঁচ দিন ধরে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি। সাগরেও নামতে পারছি না। যে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি, তা শোধ করতে পারব না। এ বছর লাভের মুখ দেখা যাবে বলে মনে হয় না।’
বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আরও অনেকে।
ব্যবসায়ী জাফর আকন বলেন, ‘প্রতিবছর এই মৌসুমে শুঁটকিপল্লি থেকে ২ লাখ টাকার মতো লাভ হয়। কিন্তু এ বছর ক্ষতিই হয়েছে প্রায় ৩ লাখের ওপর। আমার বাসার সামনের মাচায় থাকা লইট্টা ও ছুরি মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে।’
শামসুল হক নামে এক জেলে বলেন, ‘আশারচরে এই মৌসুমে পাঁচ মাস শুঁটকি আহরণ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারিনি।’
এখন মৌসুমের বাকি সময় আবহাওয়ার দিকে চেয়ে আছেন তিনি। বলেন, ‘এখন যদি মৌসুমের বাকি সময় আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলেও এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে কিছুটা হলেও লাভ দেখা যেতে পারে।’
নিউজবাংলাকে এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, ‘জেলেদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী টানা বর্ষণে চরগুলোয় প্রায় অর্ধকোটি টাকার শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে। এতে রাজস্বও কমে আসবে শুঁটকিপল্লি থেকে।’