বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গরুটির আছে দুটি বিশ্ব রেকর্ড

  •    
  • ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ১০:০৩

বিগ বার্থা ছিল আয়ারল্যান্ডের স্থানীয় ব্রিড ড্রোইমিন জাতের গরু। জেরোমি ওলেরে একটা ক্যাটেল শো থেকে তাকে কিনে আনেন। আর তার সাউথ ওয়েস্ট আয়ারল্যান্ডের ফার্ম কেনমেয়ারে পালন করতে থাকেন।

যে কিংবদন্তি গরুটির কথা বলতে যাচ্ছি তার নাম বার্থা, অনেকে বিগ বার্থা বলেও ডাকে। বিশালাকার গরুটি ছিল অত্যাশ্চর্য সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

গরুর গড় আয়ু ২৫ বছর হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জন্ম নেয়া বার্থা বেঁচেছিল প্রায় ৪৯ বছর। এই ৪৯ বছরের জীবনে সে দুই, চার অথবা পাঁচটি নয়; একেবারে ৩৯টি সন্তানের মা হয়। আর এই দীর্ঘ জীবন এবং বহু সন্তানের জননী হওয়ার কারণে দুবার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তার নাম উঠে যায়।

বিগ বার্থার জীবন ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। কথায় আছে ‘মানুষ মানুষের জন্য’। কিন্তু বিগ বার্থার কাছে এসে এ কথাটিও অনেকাংশেই মিথ্যা হয়ে যায়। দেখা যায় গরুরাও মানুষের জন্য। খুলে বলা যাক-

তত দিনে বিগ বার্থা বিশ্বের বিভিন্ন পশুমেলাগুলোর অন্যতম আকর্ষণ এবং পুরোদস্তুর সেলিব্রিটি। বিভিন্ন ক্যাটেল শোতে তার যাতায়াত। আর এসব শোতে অংশগ্রহণ করে সারা জীবনে সে প্রায় ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার আয় করে। যার পুরোটাই ব্যয় করা হয় ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের সেবায়।

আইরিশ ক্যাটেল ওয়ার্ল্ডেরও একজন সত্যিকারের উদ্যোক্তা ছিল বিগ বার্থা। ফলে আয়ারল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব ‘সেইন্ট প্যাট্রিক ডে’র প্রায় প্রতিটি প্যারেডে সে অংশ নিত। মজার ব্যাপার হলো তার জন্মও হয়, ‘সেইন্ট প্যাট্রিক ডে’এর দিন।

এসব উৎসব-অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত যাওয়ার ফলে একপর্যায়ে দেখা যায়- এত এত মানুষ আর প্রচণ্ড আওয়াজের কারণে তার স্নায়ুচাপ বেড়ে যাচ্ছে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে বার্থা। তবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য তার মালিক জেরোমে ওলেরি এক অভিনব উপায় বের করেন। যা শুনলে চোখ কপালে উঠে যাওয়াই স্বাভাবিক।

জেরোমে এক দিন এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে বার্থাকে বিয়ার খাইয়ে দিলেন। তাও অন্যকোনো বিয়ার নয়, মানুষ যা খায়, তাই। বিয়ার খেলে অতিরিক্ত আওয়াজ আর জনসমাগমে গেলে বার্থার যে স্নায়ুচাপ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা এর সমাধান হবে ভেবে তিনি এই কাজ করেন। অবাক করা বিষয়, হলোও তাই।

সত্যি সত্যিই দেখা গেল বার্থা প্যারেডসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে আর আগের মতো অসুস্থ হচ্ছে না। এর পর থেকে বার্থার মালিক জেরোমে তাকে নিয়মিত বিয়ার খাওয়াতে শুরু করলেন। একসময় এটা বার্থার অভ্যাস হয়ে দাঁড়াল। বার্থার ৪৯ বছরের দীর্ঘ জীবনের রহস্য হিসেবে অনেকে এই বিয়ার খাওয়াকেই দাবি করে থাকে।

জনশ্রুতি আছে, আয়ারল্যান্ডের স্থানীয় লোকজন তাকে এতটাই ভালোবাসত যে, তার মৃত্যুর পর ওই এলাকার মদের দোকানটি জনারণ্যে পরিণত হয়। এত মানুষের একসঙ্গে জমায়েত হওয়ার কারণ একটিই, তা হলো- বিয়ার খেতে খেতে বার্থাকে স্মরণ করা। ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ বহু বছর ধরে বিগ বার্থার সঙ্গে বিয়ার খেয়েছে, এ থেকেও তার জনপ্রিয়তা আন্দাজ করা যায়।

গরু হলেও সে যেন মানুষেরই একজন হয়ে গিয়েছিল। অসাধারণ এই গরুটি সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছে। বিশেষ করে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার জন্য যা করেছে তা অবিস্মরণীয়।

মৃত্যুর পরও তার জনপ্রিয়তার কমতি ছিল না। বার্থার দেহটি মমি করে আয়ারল্যান্ডের একটি ফার্মে রাখা হয়। আর এর মধ্য দিয়ে পশুপ্রেমী মানুষ এবং ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জায়গাটি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। প্রতিবছর বহু মানুষ তাকে দেখতে সেখানে ছুটে যায়।

বিগ বার্থা ছিল আয়ারল্যান্ডের স্থানীয় ব্রিড ড্রোইমিন জাতের গরু। জেরোমি ওলেরে একটা ক্যাটেল শো থেকে তাকে কিনে আনেন। আর তার সাউথ ওয়েস্ট আয়ারল্যান্ডের ফার্ম কেনমেয়ারে প্রতিপালন করতে থাকেন।

জানা যায়, বার্থার অনেক বংশধরও তার মতোই দীর্ঘজীবন পেয়েছিল। তাদের অনেকেই প্রায় ৩৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এর কারণ অবশ্যই জিনগত।

পৃথিবীর ইতিহাসে বিগ বার্থা এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ সালে অনন্যসাধারণ এই প্রাণীটির মৃত্যু হয়।

এ বিভাগের আরো খবর