বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সিডনিতে সমাবেশ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৫ অক্টোবর, ২০২১ ১৯:০৬

সিডনির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরতলী প্যারামাটার লেবার দলীয় প্রতিনিধি দুর্গা ওয়েন বলেন, ‌‘বাংলাদেশি হিন্দুদের জন্য চরম দুঃখের ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন, কিন্তু পিছিয়ে যাওয়া চলবে না। আপনাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে লিখিতভাবে জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করুন। আমরা সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশে ও অন্যান্য সমাজে বিদ্যমান এই বৈষম্য ও অত্যাচার বন্ধ করব।’

শারদীয় দুর্গোৎসবে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে।

স্থানীয় সময় রোববারের এ কর্মসূচিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিক্ষুব্ধ সদস্য, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ২৬টি সংগঠনের প্রতিনিধি, অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

সিডনির কেন্দ্রস্থলে হাইড পার্কে সমাবেশটি আয়োজন হয় ‘স্ট্যান্ড ফর রিলিজিয়াস মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ’ ব্যানারে।

দুপুর ১২টায় প্রতিবাদকারীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, লিফলেট নিয়ে হাইড পার্কে সমবেত হন। সমাবেশ সমন্বয়কারী অমিত সাহা, অমল দত্ত, অপু সাহা, সুরজিত রায়, ড. স্বপন পালসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে তারা সমাবেশস্থলে অবস্থান নেন।

সভার শুরুতে হামলায় হতাহত এবং মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত গেয়ে উভয় দেশের প্রতি সম্মান জানান জ্যোতি বিশ্বাস ও বর্ণালী রায়।

কী বলেন বক্তারা

স্বপন পাল ও অনন্যা ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সভার শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান বেঙ্গলি হিন্দু অ্যাসোসিয়েশনের (আভা) প্রতিনিধি ড. সমীর সরকার এ হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান।

সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রতিটি সরকারের বিদ্বেষ ও বৈষম্যের পরিসংখ্যান টেনে তিনি বলেন, দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুদের জমিকে ‌‌‘শত্রু সম্পত্তি’ আইন করে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এ কারণে হিন্দুরা প্রায় ২.৬ মিলিয়ন জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি হারিয়েছে, যার আর্থিক মূল্য আনুমানিক ১৪০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৪০ ভাগ।

তিনি বলেন, আইনটি নতুন করে ‌‘অর্পিত সম্পত্তি’ শিরোনাম দিলেও এর আসলেই কোনো পরিবর্তন হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বৈরী আচরণ ও অত্যাচারের কারণে বাংলাদেশ প্রায় আড়াই কোটি হিন্দু জনগোষ্ঠীও হারিয়েছে।

সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে বাংলাদেশকে ধর্মীয়ভাবে সহিষ্ণু একটি দেশে পরিণত করার আহ্বান জানান তিনি।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘একাত্তরে আমরা সম্মিলিতভাবে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশটা কোনো একক গোষ্ঠীর নয়। গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ এই জঙ্গি তৈরি করেছে। ভোটের দরকার নেই। তাই সংখ্যালঘুও নিগৃহীত।’

তিনি আরও বলেন, “অনেকে প্রশ্ন করেন, আমরা আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে বিচার চাই কেন? এর কারণ, নাৎসিদের বিচার হয়েছিল আন্তর্জাতিক আদালতেই। আর বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই অপরাধ নাৎসিদের কৃতকর্মের সঙ্গে তুলনীয়। আমরা বাংলাদেশেকে ভালোবেসে এতদিন বলেছি, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ কিন্তু এখন থেকে ‘আমি নয়নজলে ভাসি’ বলতে হবে।”

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফেডারেল ইমিগ্রেশন মন্ত্রী লরি ফার্গুসন এ সমাবেশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‌‌‌বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতি এ সহিংসতা ও বৈষম্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এর অবসানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিক ও সরকারকে এই প্রতিবাদ ও সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন।

সিডনির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরতলী প্যারামাটার লেবার দলীয় প্রতিনিধি দুর্গা ওয়েন বলেন, ‌‘বাংলাদেশি হিন্দুদের জন্য চরম দুঃখের ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়া চলবে না।

‘আপনাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে লিখিতভাবে জানান;সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করুন। আমরা সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশে ও অন্যান্য সমাজে বিদ্যমান এই বৈষম্য ও অত্যাচার বন্ধ করব।’

৯ দফা

সভার শেষে অন্যতম সমন্বয়কারী অমল দত্ত ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

১. হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সহায়তা এবং এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।

২. হামলার ঘটনার পূর্ণ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং তদন্তের ফল জনসমক্ষে উন্মোচন।

৩. হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা।

৪. হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার বাড়িঘর, উপাসনালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণ করতে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া।

৫. বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য একটি ভিন্ন মন্ত্রণালয় গঠন করা। সে মন্ত্রণালয় হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ আইন প্রণয়ন করবে।

৬. এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে একটি বিশেষ আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে, যেখানে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ সদস্য হিন্দু সম্প্রদায় থেকে নিতে হবে। বাকি সদস্যদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি উদার হতে হবে।

৭. পূজায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ, গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মধ্যে দায়িত্বে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. পাঠ্যক্রম সংস্কার করে মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে এমন বিষয়বস্তু বাদ দেয়া এবং এর বদলে সেসব বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা, যা সমাজের সত্যিকার মূল্যবোধ তৈরিতে সাহায্য করে এবং প্রকৃত সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস তুলে ধরে।

৯. ধর্মীয় সমাবেশে সব ধরনের হিংসাত্মক বক্তব্য দেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া এবং এর পরিবর্তে সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতিবোধ জাগিয়ে তুলতে উৎসাহ দেয়া।

এ বিভাগের আরো খবর