বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষকের হাতে কাঁচি: সিসিটিভি ফুটেজে সময় কেন সন্ধ্যার?

  •    
  • ৪ অক্টোবর, ২০২১ ২১:৩১

আলোচিত পরীক্ষাটি ছিল ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষার হলে আসা শুরু করেন। তাদের দাবি, চুল কাটার ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। সে ক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজের তারিখ ও সময় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে ঘিরে চলছে বিতর্ক। এরই মধ্যে তাকে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষক ফারহানাকে চাকরিচ্যুত করার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

এরই মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যেখানে দেখা যায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের বারান্দায় কাঁচি হাতে পায়চারি করছেন এক নারী।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, কাঁচি হাতে পায়চারি করা ওই নারীই ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের বড় চুলের বিরুদ্ধে অভিযানে ছিলেন তিনি। তবে ফারহানা বলছেন, সিসিটিভি ফুটেজটি ওই দিনের পরীক্ষা হলের নয়। আরেক দিন পরীক্ষার সময়ে খাতার সুতা কাটতে কাঁচি হাতে ছিলেন তিনি।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের শুরুতে তারিখ ও সময়ের জায়গায় দেখা গেছে ০৯-২৫-২০২১ শনি ১৯:৪১:১৪। ফুটেজটি শেষ হওয়ার সময় ছিল ১৯:৪৫:২৮। অর্থাৎ এটি গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তোলা।

তবে আলোচিত পরীক্ষাটি ছিল পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষার হলে আসা শুরু করেন। তাদের দাবি, চুল কাটার ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে।

সেক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজের তারিখ ও সময় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা।

কী বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?

সিসিটিভি ক্যামেরা ও ফুটেজ সংরক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের।

রেজিস্ট্রার ছোহরাব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার পিসি ও মনিটর ভিসির রুমে থাকে। ২০১৮ সালে ভার্সিটি প্রতিষ্ঠার সময়েই এগুলো লাগানো হয়। এর আগে কখনও কোনো ঘটনায় ফুটেজের দরকার হয়নি। তাই সময়ের সমস্যা আগে থেকেই ছিল কি না তা বলতে পারছি না।’

চুল কাটার ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রধান রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর লায়লা ফেরদৌস হিমেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় এই ফুটেজ ঘটনার দিনের। সিসি ক্যামেরায় তারিখ-সময় ভুল হতেই পারে। তার পরেও বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে আমরা কোনো সন্দেহ রাখব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। সিসি ক্যামেরার বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।’

সিসিটিভি ফুটেজে অবশ্য পরিষ্কার ঘটনাটি দিনের বেলার। কারণ এতে বারান্দার বাইরে থেকে সূর্যের প্রখর আলো করিডোরে দেখা গেছে।

একই জায়গায় আরেকটি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এর মনিটরও রয়েছে উপাচার্যের কক্ষে। ঘটনাস্থলের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ভাইরাল হলেও অন্যটির ফুটেজ কোথায় বা ক্যামেরাটি সচল কি না সেই প্রশ্নের জবাব শিক্ষার্থী বা কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটির প্রধান লায়লা বলেন, ‘আমরাও একটি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছি। ওখানে আরেকটি ক্যামেরা ছিল, সেই ক্যামেরার ফুটেজ পাইনি। কারণ ছাত্ররা ক্যাম্পাসের গেটে তালা দিয়ে আন্দোলন করছিল। আমরা কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারিনি। তাই আরেকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের হাতে আসেনি।’

শিক্ষার্থীরা কী বলছেন?

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র একেএম নাজমুল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের সিসি ক্যামেরা অনেক পুরোনো। এখানে তারিখ ও সময়ের মিল নেই। কারণ সিসি ক্যামেরা মেরামতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টেকনিশিয়ান নেই।

‘তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুরোটাই ঘটনার দিনের। তারিখ ও সময় একটু উল্টাপাল্টা থাকতে পারে। আর অধিকাংশ ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা সবাই সাক্ষ্য দিয়েছি, নির্যাতিত ছাত্ররাও সাক্ষ্য দিয়েছে। এখানে সিসি ক্যামেরার তারিখ, সময় উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয় নয়।’

আরেক শিক্ষার্থী শামীম হোসেন বলেন, ‘সিসি ক্যামেরায় তারিখ, সময় ভুল থাকতেই পারে। ইলেকট্রনিক জিনিস নষ্ট হতে কতক্ষণ? আর এগুলো কমদামি ক্যামেরা, পুরোনোও হয়ে গেছে।’

কী হয়েছিল সেদিন?

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন দরজায় কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোয় ধরা যায়, তাদের সামনের অংশের বেশ খানিকটা কেটে দেন তিনি। এভাবে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন ওই শিক্ষক।

ফারহানা শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদ করলে নাজমুল হাসান তুহিন নামের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।

ওই ঘটনার পর ‘অপমানে’ তুহিন রাতে দ্বারিয়াপুরের শাহমুখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা আটকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন তার সহপাঠীরা। তাকে অচেতন অবস্থায় এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের দাবি, যে সিসিটিভি ফুটেজের কথা বলা হচ্ছে তা ঘটনার দিনের নয়।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। ওই কাঁচি খাতা কাটার জন্য নেয়া হয়েছিল। এই ফুটেজ ঘটনার দিনের না। ছাত্রদের আন্দোলনে নামিয়ে কোনো এক মহল ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ফারহানা তার বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১৬তম বিশেষ সভায় ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। এই দাবিতে তাদের আন্দোলন পরে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে ২ অক্টোবর শিথিল করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর