বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়িবাঁধে মৎস্য উৎসবে হতাশ শিকারিরা!

  • ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি   
  • ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:০৬

ঠাকুরগাঁওয়ে বুড়িববাঁধে মৎস্য উৎসবে এসে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মাছ শিকারিরা। জেলা ও জেলার বাহির থেকে মৎস্য উৎসবের দিন মাছ ধরতে আসেন মাছ শিকারিরা। অর্ধবেলা জাল ফেলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় হতাশা বাড়ছে তারা। তার উপরে অসাধুদের পাতানো নিষিদ্ধ রিং জালের খুঁটিতে নিজেদের জাল ছিড়ে যাওয়াতে কষ্টেরও কোনো শেষ নেই মাছ শিকারিদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের শুক নদীত তীর বুড়ির বাঁধে শুরু হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন আশে পাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

গত শুক্রবার বিকেলে ছেড়ে দেয়া হয় বাধের পানি। সেদিন থেকেই শুরু হয়ে জেলেদের আগমন। উৎসবটি চলবে শনিবার দিনব্যাপী। এই উৎসবে যোগ দিয়ে অসংখ্য মানুষ মাছ ধরতে ব্যস্ত। এদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট (স্লুইস গেট) নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতি বছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।

৫০ একর এলাকাজুড়ে সুক নদীর উপর নির্মিত বুড়ির বাঁধ মৎস্য অভয়াশ্রম। সারা বছর কাউকে এখানে মাছ ধরতে দেওয়া হয় না। শুধু জমানো পানি ছেড়ে দেওয়ার পর এ সময়ই মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়।

সদর উপজেলার নারগুন থেকে মাছ ধরতে এসেছেন রমজান আলী। বলেন বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। আমিও এসেছি। কিন্তু অর্ধবেলা জাল ফেলেও এক কেজি মাছ ধরতে পারিনি। ভেতরে রিং জাল পাতানো আছে। ওই খুঁটিতে জাল ছিড়েছে। এখন দেখছি উৎসবে এসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।

পঞ্চগড় থেকে মাছে শিকারে এসেছেন দুই বন্ধু আতিক ও ফয়সাল। তারা জানান, মাছে নেই। দেশি প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। রিং জাল আর কারেন্ট জালের ব্যবহারের কারনে আমরা প্রাকৃতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সেই সাথে দেশী মাছ হারাচ্ছি। আমরা তবুও সময়টাকে উপভোগ করছি।

এই উৎসবে মাছে কিনতে এসেছেন অনেক ক্রেতা। বিক্রেতাও আছে উৎসব জুড়ে।

এ সময় ক্রেতা রহিমুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এখানে তো তেমন মাছ নেই। অনেক বিক্রেতা বাহিরের মাছ এনে এখানে বিক্রি করছে। এখানে যারা মাছ বিক্রি করছে অধিকাংশ জনই বাহির থেকে মাছ আনছে। দামও অনেক বেশি। টাটকা মাছ ভরসা করে কিনতে এসেছি। দেখি পাই কি না?

অপরদিকে শহর থেকে দেশীয় মাছ কিনতে যাওয়া ক্রেতারা অভিযোগ করেন মাছের দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তেমন পাওয়া যায় না এখানে। যা পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম অনেক। পুঁটি মাছ ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতাই মাছ কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

মৎস্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, আমরা আমাদের জায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি রিংজাল ও কারেন্টজাল রোধে। অনেক অভিযানও করা হয়েছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, কারেন্ট জাল ও রিংজালের ব্যবহার নিষিদ্ধ। আমরা ইতিমধ্যে অনেক জাল জব্দ করেছি। জালগুলো ধ্বংস করেছি। আইনের প্রয়োগ হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি মানুষ সচেতন হবে এবং এসব নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার থেকে দূরে থাকবে। আগামীতে মৎস্য উৎসব আরও ভিন্নরকম ভাবে উপভোগ করবে মানুষ এমনটি প্রত্যাশা এই কর্মকর্তার।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া জানান, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতি বছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পরে মাছ ধরার জন্য এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। আমরা মনে করছি এটার মাধ্যমে আমিষের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে।

এ বিভাগের আরো খবর