‘মানুষ মানুষের জন্য’- এই কথার এক জীবন্ত উদাহরণ দেখা গেল কুমিল্লার মুরাদনগরে। সন্তানদের অবহেলায় পরিত্যক্ত এক অসহায় বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন ও এক মানবিক উদ্যোক্তা। গত শনিবার রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ বাজারে তখন দোকানপাট বন্ধের প্রস্তুতি চলছে। ঠিক সে সময়ই চোখে পড়ে এক উদভ্রান্ত বৃদ্ধা নারী- চোখে হতভম্বতা, কথায় জড়তা। কেউ জানে না তিনি কে, কোথা থেকে এসেছেন।
পরে জানা যায়, ওই নারীর নাম মমতাজ বেগম (৬০)। এলোমেলোভাবে কথা বলছিলেন, নিজের ঠিকানা ঠিকভাবে জানাতে পারছিলেন না।
এ সময় এগিয়ে আসেন কোম্পানীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মানবিক ব্যক্তি ফেরদৌস রহমান। রাত প্রায় ১০টার দিকে তিনি বৃদ্ধাটিকে নিয়ে যান মুরাদনগর থানায়।
থানার কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে যোগাযোগ করেন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সঙ্গে। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় ফেরদৌস রহমান নিজেই ফোন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান-এর কাছে।
ইউএনও তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের তত্ত্বাবধানে মমতাজ বেগমকে ভর্তি করানো হয়।
একই সঙ্গে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসপাতালে একটি টিম পাঠান তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য। কিছুটা বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের পর চিকিৎসকের সহায়তায় জানা যায়, তিনি মমতাজ বেগম, স্বামী মৃত আয়াত আলী, বাড়ি বীরতলা গ্রাম, ইলিয়টগঞ্জ, দাউদকান্দি, কুমিল্লা।
পরবর্তীতে ইউএনও আবদুর রহমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খানকে হাসপাতালে পাঠান সার্বিক তদারকির জন্য। পাশাপাশি যোগাযোগ করা হয় দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তারের সঙ্গে। তার সহযোগিতায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে মমতাজ বেগমের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।
তবে সন্তানদের খবর দেওয়া হলেও তারা সেদিন রাতে হাসপাতালে আসেননি। শুধু জানিয়েছিলেন, সকালে আসব। রাত গভীর হয়, হাসপাতালের বিছানায় একা পড়ে থাকেন মমতাজ বেগম। পাশে ছিলেন এক নারী চৌকিদার।
যে মায়ের স্নেহে সন্তানরা মানুষ হয়েছে, আজ সেই মায়েরই পাশে কেউ নেই। তবু একা নন তিনি- কারণ পাশে আছে মানবিক মুরাদনগর প্রশাসন এবং কয়েকজন দয়ালু মানুষ, যারা প্রমাণ করেছেন, মানবতার চেয়ে বড় কিছু নেই।