বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সোনালীর প্রত্যাবাসন নিয়ে জটিলতা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১২ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:৩৫

অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়েছে।

দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।

বাংলাদেশে পুশব্যাক হওয়া বীরভূমের নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবিসহ আরও ৬ জনকে কেন্দ্র সরকারের ‘বাংলাদেশি’ তকমার দাবিকে খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের দেশে ফেরানর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে বাংলাদেশের আদালত সোনালী খাতুনসহ সবাইকে নিরাপদে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতীয় হাইকমিশনকে কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে।

সোনালীদের সাহায্যের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ। সামিরুল বৃহস্পতিবার এক্স পোস্টে জানান, বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছে।

এই ঘটনা শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ২৬ জুন। সোনালী খাতুন, তার স্বামী দানিশ শেখ, আট বছরের ছেলে সাবির, সুইটি বিবি এবং তার দুই ছেলে—সবাই রাজধানী দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কোনোমতে জীবন যাপন করতেন। দিল্লি পুলিশের যে দল ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিল, তারাই এ দলটিকে আটক করে।

সোনালীর বাবা ভাদু শেখ গত জুলাই মাসে কলকাতা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস (আদালতে উপস্থাপনের আবেদন) মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের নথি, যেমন আধার কার্ড দেখানোর পরও আটক করেছে। এরপর চরম অমানবিকতার মধ্য দিয়ে তাদের আসাম সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বলপূর্বক আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গত ২২ আগস্ট থেকে তারা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে বন্দি।

ভারতে ‘ভুলবশত নির্বাসনের’ এই ঘটনায় দ্রুতই দুই দেশের বিচার বিভাগ হস্তক্ষেপ করে এবং নাটকীয় মোড় আসে। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট দিল্লি পুলিশের কাজের তীব্র সমালোচনা করে। আদালত পুলিশকে এ দলটিকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তড়িঘড়ি নির্বাসিত করার জন্য ভর্ৎসনা করেন। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে এই দলটিকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের মাত্র চার দিনের মধ্যেই গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি নির্দেশ জারি করেন। আদালত ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে নির্দেশ দেন যেন সোনালী এবং জেলে বন্দি বাকি পাঁচজনকে ‘নিরাপদে প্রত্যাবাসন’ করা হয়। বিচারকের নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আটককৃত ছয়জনই ‘ভারতীয় নাগরিক’ এবং তাদের নামে আধার কার্ড রয়েছে। নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ডের নম্বর এবং তাদের ভারতের আবাসিক ঠিকানাও আদেশে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

এই পুরো ঘটনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দিক হলো, সোনালী খাতুন যেকোনো দিন সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। বন্দিদশার এই কঠিন সময়ে এক সপ্তাহ আগে জেলে পড়ে গিয়ে তিনি আহত হন। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তার গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তার জন্য প্রয়োজনীয় আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষাটি এখনো করানো হয়নি।

বীরভূমের সমাজকর্মী মফিজুল শেখ চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবির বসিয়ে আটক ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা সমন্বয় করছেন। তিনি শুক্রবার ফোনে সোনালীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মফিজুল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘সোনালী কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন এবং দ্রুত ঘরে ফেরার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন। তিনি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘আমাদের আর কত দিন এখানে থাকতে হবে? আমাদের অপরাধ কী? দয়া করে বলুন, বাড়িতে আমার জন্য একটা মেয়ে অপেক্ষা করছে।’ তার এই কথাগুলো শুনে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি!’

তবে দুই দেশের আদালতের ইতিবাচক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এখনো দ্রুত এগোচ্ছে না। একজন ভারতীয় কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আধার কার্ড ভারতীয় নাগরিকত্বের একমাত্র প্রমাণ নয়। প্রথমে ছয়জনের পরিচয় যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, এর ফলে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া অপ্রত্যাশিতভাবে দীর্ঘ হতে পারে।

এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ এবং বিজিবি) মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকেই বাংলাদেশিরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করবেন।

সোনালীর পরিবারের পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা লড়া আইনজীবী সৈকত ঠাকুরতা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘এখানে কূটনৈতিক জটিলতা জড়িত। আমি নিশ্চিত নই, তিনি ঠিক কবে নাগাদ বাড়ি ফিরতে পারবেন।’

এদিকে সোনালী বিবিসহ বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক করা’ ছয়জনের জামিন এখনও মঞ্জুর হয়নি। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৩ অক্টোবর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আটক সোনালী ও সুইটি বিবি-সহ ছয়জনের জামিনের শেষ শুনানি হয়েছে ওই জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) আদালতে। এরপরই পূজার ছুটি পড়ে যায়।

এই ঘটনাকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং রাজ্যসভার সাংসদ সমীরুল ইসলামের (তৃণমূল কংগ্রেস) মন্তব্য তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করেছে। তিনি এক্স পোস্টে সরাসরি বিজেপিকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি আদালত তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করার পাশাপাশি আধার কার্ডের মতো প্রমাণও দাখিল করেছে। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে বিজেপি কীভাবে দরিদ্র বাংলাভাষী মানুষকে ভাষা ছাড়া অন্য কোনো কারণে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে নির্বাসিত করে।’ তিনি অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করার অনুরোধ করেছেন।

সব মিলিয়ে দুই দেশের আদালতের মানবিক ও বিচারিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন এবং তার পরিবারের সদস্যদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের তারিখ এখনো অনিশ্চিত।

এ বিভাগের আরো খবর