বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২৩ বছর কারাভোগের পর নতুন জীবনে নওগাঁর ইসমাইল

  • সবুজ হোসেন, নওগাঁ   
  • ১১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৮:৪৮

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার কলমুডাঙ্গা গ্রামের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন। ইসমাইলের বাবা ছিলেন একজন গ্রাম পুলিশ। গরিব পরিবারের সন্তান ইসমাইল হোসেন কলমুডাঙ্গা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একজন নৈশ্যপ্রহরী ছিলেন। নিজের শরিকানদের সঙ্গে সামান্য জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল ইসমাইলের পরিবারের। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে শরিকানরা ইসমাইলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে মিথ্যে একটি মামলা দায়ের করে। সেই মামলার আসামি হিসেবে ইসমাইলকে আটক করে ২০০০ সালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

ইসমাইলের গরিব পরিবার অর্থের অভাবে তার জন্য একজন উকিল নিযুক্ত করতে পারেনি। ফলে ২০০৩ সালে আদালত ইসমাইলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। এরপর থেকে জেলখানার চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি থাকার ২৩ বছর ৩ মাস ৭ দিন পর গত বছরের ডিসেম্বরের ১৫ মুক্ত হয় ইসমাইল। এই দীর্ঘ সময়ে ইসমাইল তার বাবাসহ পরিবারের অনেককেই হারিয়ে ফেললেও নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের জেলখানা পরিদর্শনে পাল্টে যায় জীবনের সবকিছু। জেলখানার মাঝে ইসমাইলকে দেওয়া জেলা প্রশাসকের প্রতিশ্রুতি একজন সব হারানো কয়েদী ইসমাইলকে নতুন করে বেঁচে থাকার রঙিন স্বপ্ন দেখার সাহস জোগায়। মুক্তির দিনে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পুর্নবাসনের উপহার হিসেবে পাওয়া একটি ভ্যানগাড়িও জীবন সংসারের চালিকা শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন ইসমাইল নতুন জীবন সঙ্গিকে সাথে নিয়ে সংসার সাজানো আর গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সম্প্রতি সেই ইসমাইলকে নিয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের আবেগঘন অনুভূতির কথা লেখেন। সেই লেখাটি হচ্ছে- জীবন বড় বিচিত্র। ছবিতে যাদের সঙ্গে কথা বলছি, ছবি তুলছি তারা ইসমাইল দম্পতি। এই সেই ইসমাইল যার ২৬ বছর জেল হয়েছিল। নওগাঁতে দায়িত্ব গ্রহণের পর জেলখানা পরিদর্শনের প্রথম দিন সাহস করে সে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তার পুনর্বাসনের আবদার করে। সেদিন কথা দিয়েছিলাম তার মুক্ত হওয়ার দিন পর্যন্ত আমি যদি নওগাঁতে অবস্থান করি তবে অবশ্যই তার আবদার বিবেচনা করব। কাঙ্ক্ষিত মুক্তির দিনে ইসমাইল আর কোথাও যায়নি, যাবেই বা কোথায়? সেদিন সে সোজা চলে এসেছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। তার আবদার বৃথা যায়নি। তার সকল কিছু পর্যালোচনা করে নতুন জীবনে ফিরে আনার চেষ্টা করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সফল হয়েছে কি না, বলা মুশকিল। তবে ইসমাইল নতুন জীবনে ফিরেছে। বিয়ে করেছে ইসমাইল। দাপ্তরিক চাপে, তার বিয়েতে যেতে পারিনি। তাই সে সস্ত্রীক জেলা প্রশাসনকে তার নববধূকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আজ এসেছিল। তাকে এবং নববধূকে যখন মিষ্টিমুখ করাচ্ছিলাম, যখন তাকে ফুল দিয়ে বরণ করছিলাম তখন দেখলাম তার চোখে মুখে কৃতজ্ঞতার এমন ভাষা যা সে প্রকাশ করতে পারল না। হয়তো আরও কিছু দাবি ছিল আমার কাছে কিন্তু কৃতজ্ঞতার ভাষায় তার মনের কথা অব্যক্তই থেকে গেল। কিন্তু আমি বুঝে নিয়েছি তার মনের কথা, সে আমার আজন্ম সাথী হয়ে থাকতে চায়। তার স্ত্রীকে শুধু বললাম আশীর্বাদ, দোয়া, ভালোবাসা এগুলো দেখানোর জিনিস না। যে ইসমাইল তার যৌবনের পুরোটা সময় চার দেওয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্দি রেখেছিল সেই ইসমাইল তার বাকি জীবন তার প্রিয় সঙ্গিণীর সঙ্গে হেসে খেলে আনন্দে কাটাক এ প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। ইসমাইলকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছি যাতে ভবিষ্যতে বিপদের সময় আর কারও কাছে তার মুখাপেক্ষী হতে না হয়। আমাদের ইসমাইলের জন্য সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী। ইসমাইলের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় আমাদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা দারুণ ভূমিকা রেখেছে। ইসমাইল আমার প্রতি যে কৃতজ্ঞতা পোষণ করেছে, তার চোখে-মুখে যে অস্ফুট উচ্চারণ তার ভাগীদার আমার প্রিয় সহকর্মীরা। ভালো থাকুক ইসমাইল, ভালো থাকুক আমাদের প্রিয় মানুষগুলো। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সম্পর্কে ইসমাইল হোসেন তার অনুভতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্না জড়ানো কণ্ঠে জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল স্যার ভালো মনের একজন মানুষ। স্যার তাকে সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর মোড়ে ছয়শতক জমি দিয়েছেন বলেও জানান। তবে, সামর্থ না থাকার কারণে সেখানে এখনো ঘর নির্মাণ করতে পারেননি বললেন ইসমাইল। বর্তমানে ইসমাইল সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর ভেলাকুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি বাড়িতে নতুন বউকে নিয়ে বসবাস করছেন।

এ বিভাগের আরো খবর