বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যানজট নিরসনে নীলফামারীর বাইপাস সড়ক এখন মরণফাঁদ

  • নাসির উদ্দিন শাহ মিলন, নীলফামারী   
  • ৭ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:২২

নীলফামারী জেলা শহরে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে তিন বছর আগে ২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রশস্ত করা হয় ৭ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে এ সড়কটি প্রশস্ত করা হয়েছিলো, তা অপূর্ণই রয়ে গেছে। সড়কটিতে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁকের কারণে এ পথ ধরতে অনীহা প্রকাশ করেন ভারী যানবাহনের চালকরা। এমনকি হালকা গাড়ির চালকরাও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন এই পথ। ৭ কিলোমিটারের এই বাইপাস সড়কে ছোট বড় ৪২টি বাঁক রয়েছে। যা বলা চলে রীতিমত একধরনের মরণফাদ। একটু হেরফের হলে দুর্ঘটনা অনিবার্য। যেহেতু বাইপাস তেমন কাজে আসছে না, তাই শহরের মূল সড়ক ধরেই অধিকাংশ যানবাহন চলাচল করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘সৈয়দপুর হয়ে আঞ্চলিক সড়ক ধরে নীলফামারীর দিকে আসার পথে শহরের প্রবেশদ্বার মশিউর রহমান কলেজের সামনে থেকে শুরু হয় বাইপাস সড়কটি। এরপর জেলখানা, পাঁচমাথা, ইটাখোলা ইউনিয়নের বাদিয়ার মোড়, মায়ার মোড়, বড় দিঘির পাড়, শাহপাড়া, শিমুলতলী মোড়, পোড়পোড়ার মোড় হয়ে নটখানায় মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সড়কটি। সড়কের ৪২টি বাকের মধ্যে মধ্যে বাদিয়ার মোড় এলাকা থেকে পোড়পোড়ার মোড় পর্যন্ত ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক রয়েছে বারোটি। মায়ার মোড়, বড় দিঘির পাড়, শাহ পাড়া, পোড়মোড়ার মোড় ও নটখানায় এলাকায় রায় প্রায় ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলের ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক। এই বাকগুলোতে বিপরীত দিক থেকে কোনো যানবাহনা কিংবা মানুষ যাতায়াত করছে কি না তা বুঝার কোনো উপায় নেই। এসব বাঁকে ঝুঁকি নিয়ে জেলার ডোমার, ডিমলা এবং পঞ্চগড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।’

কুষ্টিয়া থেকে ইটবোঝাই ট্রাক নিয়ে নীলফামারীর বাইপাস সড়ক দিয়ে ডোমারে যাচ্ছিলেন মকবুল হোসেন। বাইপাস সড়কের শিমুলতলী মোড়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সামান্য এ সড়কে চলতে গিয়ে ২৪টি বাঁক অতিক্রম করতে হয়। এর মধ্যে আবার কিছু বাঁক মরণ ফাঁদ। এই বাঁকগুলো অতিক্রম করার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার মুখোমুখি পড়তে হয়েছে।’

জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার ট্রাকচালক মো. খতিবর রহমান খোকন জানান, ‘কালিতলা থেকে পুলিশ লাইন পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪২টি বাগ বা মোড় অতিক্রম (পাড়) করতে হয়। বিশেষ করে বড় ট্রাক (১০ চাকা) ও কোচ (বাস) বাইপাশ সড়কের বাগগুলোতে ঘুরানো যায় না। মানুষের দোকানে ও বাসাবাড়ীতে ঢুকে যায়। তাই সড়কটি সোজা করলে যানবাহন চলাচল সহজ হবে ও শহরের লোক চলাচলের ঝুঁকি কমে আসবে।’

ইটাখোলা ইউনিয়নের শাহ্ পাড়ার বাসিন্দা মাহাবুল হোসেন বলেন, ‘বাদিয়ার মোড় থেকে পোড়পোড়ার মোড় পর্যন্ত সড়কটি অতি ঝুকিপূর্ণ বাক রয়েছে। এসব বাঁকে চালকদের মোড় ঘুরতে সমস্যা হয়, তেমনি সড়কের পাশে বাড়ি হওয়ায় আমরাও সমস্যায় আছি। কিছুদিন আগে একটি পাথর বোঝাই ট্রাক ঠিকমত মোড় নিতে না পেরে আমার বাড়ীর মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।’

কান্দুরার মোড়ের মুদি দোকানদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই সড়কটিতে অসংখ্য বাঁক থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় যানবাহন যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তেমনি অনেকে আহত হন। পাঁচ বছরে ছোটখাটো অর্ধশতাধিক যানবাহনকে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছে।’

নীলফামারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে তথ্য মতে, ‘মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে নটখানা পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার। তিন দশমিক ৭০ মিটার প্রস্থের এটি ছিল একটি পুরাতন সড়ক। শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সেটিকে পাঁচ দশমিক পাঁচ মিটারে উন্নীত করে বাইপাস সড়কে রূপান্তর করে সওজ। ২০১৮ সালে ২৭ নভেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তিন দশমিক ৭০ মিটার থেকে ৫ দশমিক পাঁচ মিটার প্রস্থ বৃদ্ধিকরণে মোট ব্যয় হয় ২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।’

সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, ‘৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কে বাক বা মোড় (আঁকা বাঁকা) পড়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪২টি। এটি সোজা করার কাজ প্রক্রিয়াধীন। বাইপাস সড়কটি চালু বা সোজা করতে গেলে প্রায় ৮ দশমিক ৪ একর জমির প্রয়োজন। এসব বাঁক সোজা করার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি, সেটি হয়ে গেলে খুব সহজে বাইপাস দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।’

এ বিভাগের আরো খবর