পাকিস্তানকে কাছে টানছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত কেবল তাকিয়েই দেখছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক দ্রুত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। আর তাতে ভারতের ওপর কূটনৈতিকভাবে চাপ বাড়ছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনির ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জ্বালানি, খনিজ ও কৃষি খাতে বিনিয়োগসহ কৌশলগত
হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, মুনির ট্রাম্পকে বিরল খনিজে ভরা একটি বাক্স উপহার দেন।
এর আগে জুলাইতে পাকিস্তানের জন্য শুল্ক কমানোর চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যার প্রশংসা করেন শাহবাজ। তিনি ট্রাম্পকে ‘শান্তির মানুষ’ আখ্যা দিয়ে গত মে মাসের ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামাতে ভূমিকা রাখার কৃতিত্বও দেন। মুনির তো ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন।
তবে ভারত এসব দাবি অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্প কোনো ভূমিকা রাখেননি। বরং ট্রাম্প ওই সময় ভারতের উদ্দেশে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘একদিন হয়তো ভারত পাকিস্তানের তেল কিনবে।’ এতে নয়াদিল্লি আরও অস্বস্তিতে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে ভাটা
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা গেলেও এবার সম্পর্ক তলানিতে। ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ওয়াশিংটনের প্রতি ভারতের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ভারতীয় বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত মনে করেন, মার্কিন কৌশল যদি পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে এগোয়, তবে ভারত তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে। এতে কোয়াডের মতো মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পাকিস্তানের নতুন সমীকরণ
সম্প্রতি পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যেকোনো এক দেশের ওপর আক্রমণ মানেই উভয়ের ওপর আক্রমণ।’
এটি ভারতের জন্য একটি বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান কেবল অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তাৎক্ষণিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে।
ট্রাম্পের লেনদেনভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকর বলেন, ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক লেনদেনের চোখে দেখেন, কৌশলগত মিত্র হিসেবে নয়। পাকিস্তান ছোটোখাটো ছাড় দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, তবে এ সম্পর্ক অস্থায়ী এবং অবিশ্বস্ত।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ মট্টুর মতে, ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে চক্রাকারে ঘটে। স্নায়ুযুদ্ধ, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পর এখন আবার পশ্চিম এশিয়া–মধ্য এশিয়ার অস্থিরতায় পাকিস্তানকে কাজে লাগাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবার তারা পাকিস্তানের দ্বিচারিতা সম্পর্কে বেশি সচেতন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারতের প্রতি বিনিয়োগ আগের চেয়ে গভীর।