চটপটি ও ফুসকা বিক্রেতার দুই ছেলে-মেয়ে পড়ছে দেশের সেরা দুই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানে এবং মেয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) বিষয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যায়ন করছে। দু’সন্তানের অনাগত ভবিষ্যত গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে আত্মবিশ্বাসী এই চটপটি বিক্রেতা ও তার স্ত্রী দিন-রাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে চলেছেন। তারপরও চোখে-মূখে নেই ক্লান্তির ছাপ। রোজগারের একমাত্র অবলম্বন টচপটি বিক্রির উপর চলে তাদের জীবন-জীবিকা।বর্তমানে সংসারের খরচ এবং দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ জোগাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত খরচ জোগানো নিয়ে অজানা শংকা পেয়ে বসছে তাদের।যশোরের মণিরামপুরের পৌরসভার তাহেরপুর গ্রামের চটপটি বিক্রেতার দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে জয়ন্তী দাস বড় এবং ছেলে জয় দাস ছোট। প্রখর মেধাবী দুই ভাই-বোন ছোট থেকেই প্রতি শ্রেনিতে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। দু’সন্তানকে লেখা-পড়ার খরচ জোগাতে চটপটি বিক্রেতা দীপক দাস ও তার স্ত্রী শম্পা দাস হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে চলেছেন। যেখানেই কোন অনুষ্ঠান, মেলা কিংবা ওয়াজ মাহফিল হয় সেখানেই স্ত্রী শম্পা দাসকে সাথে নিয়ে চটপটি বিক্রি করতে চলে যান দীপক দাস। অনুষ্ঠানে না গেলে পৌরশহরের রাজগঞ্জ মোড়স্থ নতুন সেতুর পশ্চিম মাথায় দুপুরের পর থেকে নিয়মিত চটপটি বিক্রি করেন। ভাড়া বাড়িতে থেকে শুধু এই চটপটি বিক্রির উপর চলে সংসার এবং জোগাতে হয় দু’সন্তানের লেখাপড়ার খরচ। বেলা উঠার আগেই বাড়িতে চলে চটপটি রান্নার প্রস্তুতি। দুপুরের পর ভ্যান নিয়ে চলে যান বিক্রি করতে। রাত ৯ টা থেকে ১১টা অবধি চলে এই চটপটি বিক্রি। স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে এবং এনজিও, সমিতি থেকে ধার-দেনা করে দু’সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। এখন আরও খরচ টানতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।দীপক দাস জানান, তার মন-মনন জুড়ে রয়েছে শুধুই দু’সন্তানের অনাগত সুন্দর ভবিষ্যত নির্মান। তাদের ঘিরেই সব স্বপ্ন। তার ছেলে ও মেয়ে পিঠা-পিঠি (বছর খানেক বয়সের ব্যবধান) হওয়ায় একই শ্রেনিতে ভর্তি করান। মেয়ে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ- ৫ পেয়ে ২০২১ সালে এসএসসি ও ২০২৩ সালে এইচএসসি পাশ করে। ছেলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে একই শিক্ষাবর্ষে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ২০২৩-২৪ শিক্ষা বর্ষে ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মেয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।শম্পা দাস তার দুই সন্তানের জন্য আশির্বাদ প্রার্থনা করেন। তারা শুধু পড়ালেখায় নয়; যেন ভাল মানুষ হতে পারে।দূর্গা পুজার ছুটিতে বাড়ি এসেছেন দুই ভাই-বোন জয়ন্তী দাস ও জয় দাস। তারা জানান, বুঝতে শেখার পর থেকেই দেখছেন তাদের বাবা-মা হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে চলেছেন। বাবা-মায়ের আত্মত্যাগ কোনভাবেই শোধ হওয়ার নয়। তবে, ভবিষ্যতে তাদের মূখে হাসি ফোটাবার প্রাণপণ চেষ্টা থাকবে।
চটপটির আয়ে দুই সন্তান ঢাবি ও খুবিতে: দীপক-শম্পার হাড়ভাঙা পরিশ্রমে গড়ে উঠছে ভবিষ্যৎ
এ বিভাগের আরো খবর/p>