জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিভিন্ন স্থানে অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে প্রাণহানি। এসব ক্রসিংগুলোতে নেই কোনো গেটম্যান। কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে কোনো কোনো ক্রসিংয়ে নামে মাত্র সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগালেও সেগুলোর লেখা এখন আর চোখে পড়ে না। রেলের লাগানো অধিকাংশ সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ও লেখা নষ্ট হয়ে গেছে। অতি দ্রুত এসব জনগুরুত্বপূর্ণ অরক্ষিত রেল ক্রসিংগুলোতে গেট নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরিষাবাড়ী রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় যমুনা, অগ্নিবিণা ও জামালপুর এক্সপ্রেস নামে ৩টি আন্তনগর ট্রেন ও ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস (বর্তমানে সাময়িক বন্ধ), ৩৭ আপ ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ও চট্রগ্রাম মেইল ৩৮ ডাউন নামে ৩টি লোকাল ট্রেন চলাচল করে। এ উপজেলার রেলপথে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় প্রায় ৩৫টির মতো রেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে গেটম্যান রয়েছে মাত্র ৯টিতে। বাকি ছোট-বড় প্রায় ২৬টি রেলক্রসিং অরক্ষিত। এছাড়া ছোট ছোট কতগুলো অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে তার কোনো হিসাব নেই রেল কর্তৃপক্ষের কাছে। এ সব ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। সরেজমিনে উপজেলার তারাকান্দি রেল স্টেশন সংলগ্ন সব চেয়ে বড় ৪টি ডাবল লাইনের রেল ক্রসিংসে দেখা যায়, অনেকে পায়ে হেঁটে ডান-বাম না তাকিয়েই পার হচ্ছে। অনায়াসে অটো-ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, প্রাইভেটকারসহ নানা যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। উপজেলার সব চেয়ে বড় এই রেলক্রসিং থাকলেও কেন এখানে গেটম্যান নেই সেই প্রশ্ন এলাকাবাসীর। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন স্থানীয়রা। এসব যেন দেখার কেউ নেই। এসব দেখেও না দেখার অজুহাতে প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ।
তারাকান্দি রেলস্টেশন এলাকার মনোহারী দোকান ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, ‘তারাকান্দি রেলস্টেশনের সাথেই একটি প্রাথমিক ও হাইস্কুল আছে। এই রেল লাইন ও স্টেশন দিয়ে দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। তারাকান্দি রেলস্টেশন সংলগ্ন এ লেভেল ক্রসিংটি এ উপজেলার সব থেকে বড় অরক্ষিত রেলক্রসিং। এখানে ৪টি ডাবল রেললাইন রয়েছে। এত বড় লেভেল ক্রসিং থাকার পরও এখানে রেলের কোনো গেটম্যান দেওয়া হয়নি। এটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় রেল লাইনের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন গাড়ি উল্টে যায়। অতি দ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ এই রেলক্রসিংটিতে গেটম্যানের দাবি জানাচ্ছি।’
কান্দারপাড়া বাসস্টেশন এলাকার রেলক্রসিংটির রয়েছে অরক্ষিত। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘এখানে কোনো গেটম্যান না থাকায় নানা দুর্ঘটনা হচ্ছে। এখানে একটি গেটম্যান প্রয়োজন।’
পৌর এলাকার সাতপোয়া জামতলা মোড়ে সম্প্রতি ট্রেনের ধাক্কায় নিজের ৪ বছরের মেয়ে হারানো বাবা ইউনূছ আলী মাস্টার বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে এই রেলক্রসিংটিতে আগেও একাধিকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। দুই পাশে বাড়ি ও গাছ থাকায় দূর থেকে দেখা সম্ভব হয় না। সম্প্রতি আমার ৪ বছরের ছোট মেয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়। যদি এখানে গেটম্যান থাকত তাহলে হয়তো আমার মেয়েটা মারা যেত না। আর যাতে কারও বুক খালী না হয় তাই এখানে গেটম্যান দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে তারাকান্দি রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘তারাকান্দি স্টেশন সংলগ্ন অরক্ষিত রেলক্রসিংটিতে গেট নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তা ছাড়া গেট নির্মাণের বিষয়ে আমাদের স্টেশন মাস্টারদের কোনো হাত নেই। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়টি দেখে থাকেন। এছাড়া রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অরক্ষিত প্রতিটি রেলক্রসিংএ সতর্কতামূলক নির্দেশনা সাইনবোর্ড দেওয়া আছে।