বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষতি হয় এমন পরিবর্তন মানা হবে না’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৩৯

ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিয়ে এবার নিজেদের উদ্বেগের কথা জানাল ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্ররা। কলেজের ১৮৪ বছরের ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ার করেছে—বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন বা সংকোচন যা উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা তারা মেনে নেবে না। এসব বিষয় ভেবে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে কলেজটির উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলে। শিক্ষার্থীরা বলেছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ভবিষ্যৎ কী হবে—এই বিষয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

এর আগে গত বুধবার ঢাকার এ সাতটি কলেজের কয়েকশ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে মানববন্ধন করেন এবং ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। শিক্ষকেরা কলেজগুলোর জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চান না। তাদের আশঙ্কা, এই কাঠামো বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে। শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ কমে যাবে, শিক্ষকদের পদ-পদবি নিয়েও জটিলতা দেখা দেবে। ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারীশিক্ষার সুযোগও হুমকির মুখে পড়বে। এ জন্য শিক্ষকেরা বলছেন, সাতটি কলেজ ক্যাম্পাসকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়ার পরিবর্তে পৃথক ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো) স্থাপন করে কলেজগুলোকে এর অধিভুক্ত করা উচিত। যাতে বর্তমান ব্যবস্থা বহাল থাকে। নাম ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থাকলেও আপত্তি নেই।

অন্যদিকে, প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে দ্রুত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলন করে আসা ওই সব কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীর দাবি—আজ সোমবারের মধ্যে অধ্যাদেশ জারির বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে, না হলে বড় কর্মসূচিতে যাবে তারা। এ অবস্থায় এখন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে এই ছাত্ররা বলেছে তারা সাত কলেজের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে না।

ঢাকার এই সাত কলেজ একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। ২০১৭ সালে এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। সরকারি সাত কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো প্রতিটি কলেজে সব বিষয় পড়ানো হবে না। সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে (অনুষদের মতো) বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস; স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিসের জন্য সরকারি বাঙলা কলেজ এবং স্কুল অব বিজনেসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ; স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের জন্য কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর। তবে সব ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সশরীর।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের একজন ছাত্র। এ সময় বেশকিছুসংখ্যক ছাত্র উপস্থিত ছিল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে, সেই বিবেচনায় এই কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরাও অংশীজন। কিন্তু দুঃখর বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রক্রিয়ার কোথাও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম মতামত নেওয়া হয়নি। তারা রাষ্ট্রের এই অযৌক্তিক আচরণের নিন্দা জানায়। ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’–এর স্কুল অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এটি হলে স্নাতকের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ নামের প্রতিষ্ঠানের কোনো সংযোগ থাকছে না। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের নামফলকে ঢাকা কলেজ সরিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখার দাবি করা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা বলে ধরা যায়, যা হবে ঢাকা কলেজের অস্তিত্বের পরিপন্থী। আবার ‘টাইম শেয়ারিং’ মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস এবং এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়া কতটা বাস্তবসম্মত হবে সেটি নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। তাদের আশঙ্কা— ভবিষ্যতে যখন উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, তখন এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক বিলুপ্তির দাবি জানাতে পারে। এছাড়া একই ক্যাম্পাসে দুটি কাঠামো সমস্যাজনক একটি বিষয়। আবার কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর কোন কর্তৃপক্ষের অধীন হবে, তা–ও স্পষ্ট নয়। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন স্থানে কার্যক্রম পরিচালনায় রাজি নয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল রোববার ইউজিসিতে গিয়ে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ইউজিসি এ বিষয়ে আইনি সীমাবদ্ধতার কথা বলেছে এবং জানিয়েছে এটি তাদের এখতিয়ার–বহির্ভূত। ইউজিসি বিভিন্নভাবে তাদের আশ্বস্ত করেছে। কিন্তু তাতে তারা আশ্বস্ত হতে পারছে না। কারণ, তাদের কথায় কোনো আইনি ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে তারা অভিভাবক হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এসব বিষয় দেখার অনুরোধ জানিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর